নিউজ ডেস্ক : করোনাভাইরাসের টিকাবিরোধী প্রচারণা চালানোয় শতাধিক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এ প্রচারণা রাশিয়া থেকে চালানো হচ্ছিল।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, টিকাবিরোধী এ প্রচারের লক্ষ্যবস্তু ছিল যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলো। গতকাল মঙ্গলবার ফেসবুকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনার টিকা নিয়ে মানুষের যে বিশ্বাস জন্মেছে, তা ভেঙে দিতে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। আর এ জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম—এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ফেসবুক জানিয়েছে, এ প্রচারণা যাঁরা চালাচ্ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে ফাজি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগের প্রমাণ পেয়েছে তারা। ফাজি রাশিয়াভিত্তিক কোম্পানি অ্যাডনাওয়ের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। করোনাভাইরাসের নির্দিষ্ট কিছু টিকার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে মানুষের আত্মবিশ্বাস কমাতে জনপ্রিয় ব্যক্তিদের ভাড়া করার চেষ্টা চালায় তারা।
গত মাসে বিবিসির প্রতিবেদনেও একই ধরনের তথ্য উঠে আসে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ফাইজারের টিকার নানা ঝুঁকি নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়াতে চলতি বছরের মে মাসে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল ফাজি। বিদেশি বিষয়ে হস্তক্ষেপসংক্রান্ত নীতিমালা ভঙ্গের কারণে ৬৫টি ফেসবুক এবং ২৪৩টি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ফেসবুক।
ফেসবুকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দ্বিতীয়বারের মতো পশ্চিমা দেশের টিকাগুলোর বিরুদ্ধে এমন প্রচারণা চালানো হলো। গত বছরের নভেম্বরেও একই নেটওয়ার্ক থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়। সেই সময় ওই নেটওয়ার্কের নানা অ্যাকাউন্ট থেকে হলিউডের চলচ্চিত্র ‘প্ল্যানেট অব দ্য এপস’–এর একটি ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেখানে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার কথা উল্লেখ করে হিন্দিতে কয়েক লাইন লেখা ছিল।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিলে মানুষ বানরে পরিণত হবে—এমন তথ্য প্রচারের উদ্দেশ্যে ছবিটি ছড়ানো হয়েছিল। সে সময় ভারত সরকার জরুরি ভিত্তিতে দেশটিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার অনুমোদনের বিষয়টি চিন্তা করছিল। কয়েকটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে প্রচারণাটি চালানো হয়। ফেসবুক বলেছে, অ্যাকাউন্টগুলো সম্ভবত বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে খোলা হয়েছিল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ে বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান ‘গ্রাফিকার’ ডাইরেক্টর অব ইনভেস্টিগেশন জ্যাক স্টাবস বলেন, পশ্চিমা টিকাগুলোর বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়াতে বিশাল আয়োজন করা হয়েছিল। গতবারের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিয়োগ ছাড়াও এবার নানা কৌশল ব্যবহার করা হয়। তবে দুই দফায় চালানো এ প্রচারণা সফল হয়নি।
ফাজিকে ফেসবুকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমটি। আর ফাজির এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলতে রাশিয়াভিত্তিক কোম্পানি অ্যাডনাওয়ের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের করে বিবিসি। তবে মস্কোয় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি প্রতিষ্ঠানটি। যদিও যুক্তরাজ্যে প্রতিষ্ঠানটির শাখার পরিচালক জানিয়েছেন, ফাজি বন্ধ করে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।