ঈলার গল্পকথা

সাহিত্য, 10 July 2021, 1013998 বার পড়া হয়েছে,

লবণ সমাচার

রোকসানা হক ঈলা

প্রথমে,
দুপুরে দুই ছেলেকে নিয়ে চাচার বাসায় খেতে যাচ্ছিলাম আফতাবনগরে। প্রধান উদ্দেশ্য মানিকগঞ্জ থেকে আসা ছোট ফুপির সাথে দেখা করা।
বাসার সামনের রাস্তায় কাটাকুটির কাজ চলছে।
তাই রিক্সার জন্য হেটে মেইন রোডের দিকে যাচ্ছি।

এমন সময়,
ছেলেদের বাবার ফোনে জানতে পারলাম লবণের দাম নাকি কেজি ১৫০।
সামনের দোকানের দিকে তাকিতে দেখি, লোকজন প্যাকেটের প্যাকেট লবণ হাতে বেরুচ্ছে।

মধ্যবিত্ত এই মনটাও কিছু পয়সা সেভ করতে চাইলো।
বামে স্বপ্ন আর ডানে স্টেশনারি সপ।

দুই ছেলেকে বললাম, দৌড়ে দুইজন দুই দিকে যাও।
দেখে আসো কোথায় দাম কত?
যেখানে দাম কম থাকবে সেখান থেকে লবণ কিনে আজ পিঁয়াজের উপর একটা প্রতিশোধ নিবো।
ভাবি,
আহা রাস্তা কাটাকুটি কত্ত মহৎ কাজ।

কিন্তু, ওদের নাকি না কিনে শুধু শুধু দাম জিজ্ঞেস করতে শরম লাগে।
তাই, বীরদর্পে নিজেই এগিয়ে গেলাম ডান দিকের(এটা কাছে) স্টেশনারি সপের দিকে।
গিয়ে,
দাম ৩৫ টাকা শুনে আনন্দে কোনমতে চোখের পানি আটকে রেখে, এক কেজি আমার ও পাছে কাকি চোখ লাগায় তাই আরেক কেজি কাকির জন্য মোট দুই কেজি লবণ কিনলাম অনেকটা যুদ্ধ করে।
উল্লেখ্য,
দোকানে একমাত্র আমাকেই পেলাম মাত্র দুই কেজি কিনেছি।
তাই একটু শরম শরম ও লাগছিলো।
বাকি সবাই, কেউ ৫, কেউ ৬,৭ কেজি, কেউ আবার ১০ কেজি ও কিনছে।
ভাগ্যিস,
কাকির জন্য ১ কেজি কিনেছি। মানইজ্জত কিছুটা হলেও রক্ষা।

এত লবণ কত দিনে খাবে সে হিসেব মিলাতে মিলাতে চাচার বাসায় হাজির হলাম।
কাকি আর ফুপি আমার হাতে লবণ দেখে অবাক।

সব শুনে, কাকি আমার নেয়া লবণ আর রাখলেন না। মনে হয় মাত্র এক কেজিতে…..
কিন্তু এই মূহুর্তে এক কেজি লবণের মূল্য কত তা বুঝে নি।

ড্রাইভারকে ফোন করে বললেন, এক্ষুনি সামনে যে দোকান পায় সেখান থেকেই দুই কেজি লবণ কিনে যেন গাড়িতে রেখে দেয়।
ফুপিও উনার বাসার ভাড়াটিয়াকে (মানিকগঞ্জ) ফোন করে বলেন, সে যেন কিছু লবণ নিজের জন্য কিনে আর ফুপির জন্যেও দুই কেজি কিনে রাখে।

কাহিনী এখানে শেষ হলে ভালই হতো।
কিন্তু, তা না হয়ে আমাদের পাখি (আমার দাদু যাকে কমলাপুর রেল স্টেশনে পেয়েছিলেন) কাকির কাছে বারবার ফোন চাচ্ছে ওর ছেলেকে বলবে লবণ কিনে রাখতে।
তারপর…
ওর ছেলে ২ কেজির বদলে ৫ কেজি, সাথে তার এক বন্ধু সেও ৫ কেজি মোট ১০ কেজি লবণ কিনে হেলেদুলে বাড়ি ফিরছে।
এবার রাস্তায় পুলিশের জিজ্ঞাসা, কিরে তোরা এত লবণ দিয়ে কি করবি? স্টক করে রাখবি?
তারপর…
দুইজন সোজা থানা হাজতে। আমার বারবার মনেমনে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিলো।
সব রাগ সেই ফোনওয়ালার উপর হচ্ছিলো।
যদিও,
মুখে কিছু বলছিলাম না।

খবর পেয়ে, পাখির অবিরাম কান্না….

আর, আমরা ভাবছি আহারে, না জানি কত্ত টাকা পয়সা লাগবে! গরিব মানুষ কয়টা টাকা বাচাতে গিয়া উল্টা শুধুশুধু কত্তগুলা টাকার ফেরে পরলো।

দুই ঘন্টা পর,
তার দুই মেয়েজামাই থানার ওসি সাহেব কে ১০ কেজি লবণ থেকে ৩ কেজি লবণের বিনিময়ে ম্যানেজ করে দুইজনকে মুক্ত করে বিজয় মালা পরিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে আনে।

আমরা পুরাই টাস্কিত…
শান্তনা,
পুলিশরা ও তো মানুষ। তাদের ও লবণ খেতে হয়।

যদি দাম বাড়তো…
তাহলে,
১৫০×৩= ৪৫০ টাকা লাভ হতো । কিন্তু, কপাল খারাপ তাই…..
মাত্র ৩৫×৩=১০৫টাকা।
আহারে পুলিশ বেচারা। কি লস টাই না করলো।