রমজানে ৪’শ প্রতিবন্ধী পরিবারের পাশে দাড়িয়েছেন মুন্না

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 29 March 2024, 23 বার পড়া হয়েছে,
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি : অন্যের সহায়তা নিয়েই চলতে হয় তাকে। তারপরও অদম্য হেদায়েতুল আজিজ মুন্না। রমজানের গত ১৮ দিনে প্রায় ৪’শ শারিরীক প্রতিবন্ধীর পাশে দাড়িয়েছেন। চাল,ডাল,তেলসহ নানা ইফতার সামগ্রী তুলে দিয়েছেন তাদের হাতে। দেবেন ঈদ উপহারও।
সরকার বা বিত্তশালীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত এই সহায়তা কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে,কখনো বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌছে দিয়েছেন। এছাড়াও প্রতিবন্ধীদের কল্যানে আরো নানা কর্মকান্ডে অনুকরনীয় হয়ে উঠছেন মুন্না। নিজে শারিরীক প্রতিবন্ধী। হুইল চেয়ারেই চলতে হয় তাকে। তারপরও প্রতিবন্ধীদের কল্যান-কাজে বিরামহীন ছুটে চলা তার।
এবার রমজানের শুরুতে একদিনে ৩’শ প্রতিবন্ধী পরিবারের পাশে দাড়িয়েছেন মুন্না। গত ১৭ই মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের  ১০৪ তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসে ২’শ প্রতিবন্ধী পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হয় জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ন ও গনপূর্ত মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। পীর মুফতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরীর দাওয়াতে ঈমানী বাংলাদেশ সংগঠন থেকে এদিনই ১০০ প্রতিবন্ধীর মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। পরবর্তী এই ক’দিনে আরো প্রায় ১’শ প্রতিবন্ধীর মধ্যে  বিত্তশালীদের কাছ থেকে পাওয়া ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেছেন। শুক্রবার বিকেলে শহরের পুনিয়াউট এলাকার ৩০ প্রতিবন্ধী পরিবারের মাঝে গনপূর্ত মন্ত্রী- র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ফাহিমা খাতুনের কাছ থেকে প্রাপ্ত ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হয় । এসময় মুন্না ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা মহিলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত,বিশিষ্ট চিকিৎসক সাইফুদ্দিন খান শুভ্র ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রহিম বিজন।
চিকিৎসক সাইফুদ্দিন খান শুভ্র বলেন,মুন্নার এই কাজ বিত্তশালীদের উদ্বুদ্ধ করবে। তারা এগিয়ে এলে এবং আমরা সবাই মিলে তাকে সাপোর্ট দিলে সমাজের এই শ্রেনীর মানুষদের জন্যে আরো বেশী কিছু করা সম্ভব হবে।
এডভোকেট তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত বলেন,মুন্না যে কাজটি করছে আমি শারিরীকভাবে একজন সক্ষম মানুষ হয়েও তা করতে পারিনা। হুইল চেয়ার,কখনো
অটোতে বা গাড়িতে করে সে যেভাবে দিনরাত প্রতিবন্ধীদের দ্বারে দ্বারে সাহায্য-সহযোগিতা পৌছে দিচ্ছে তা অনুকরনীয়। আমাদের সবার উচিত তার পাশে থেকে সহযোগিতা করা।
শুধু খাদ্য সহায়তা নয়, মুন্নার প্রতিষ্ঠিত ড্রিম ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ফাউন্ডেশন ২০১৩ সাল থেকে প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা,চাকুরীর ব্যবস্থা করাসহ নানা কল্যানকর কাজ করছে। ক্রীড়াতেও পারদর্শীতা দেখিয়েছে মুন্নার সংগঠন।
২০০৩ সালে চাকরিসূত্রে সৌদি আরবে যান মুন্না। পাশাপাশি নিজের ব্যবসাও ছিল সেখানে তার। ২০০৮ সালে সেখানে এক সড়ক দুর্ঘটনা এলোমেলো করে দেয় তার জীবন। দুর্ঘটনায় প্রাণে রক্ষা পেলেও মেরুদণ্ডে আঘাতের কারণে চিরতরে হারিয়ে ফেলেন হাঁটার ক্ষমতা। সে থেকে সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয় হুইলচেয়ার। তবে থেমে যাননি তিনি। ২০১৭ সালে হেদায়েতুলের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক হুইলচেয়ার ক্রিকেট সিরিজে ডিডিএফ হুইলচেয়ার ক্রিকেট দল ভারতের দিল্লিতে ভারত হুইলচেয়ার ক্রিকেট টিমকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি অর্জন করে। ২০১৮ সালে ঢাকায় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট সিরিজে রানার্সআপ এবং ২০১৯ সালে কলকাতায় ট্রাই নেশন হুইলচেয়ার ক্রিকেট সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হয়।