হাবলাউচ্চ মসজিদে অযুখানা নির্মাণ ও মাদকবিরোধী কমিটি গঠনে প্রবাসী ও স্থানীয়দের ঐক্যবদ্ধ প্রতিশ্রুতি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 17 October 2025, 125 বার পড়া হয়েছে,
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি : আজ শুক্রবার জুমআ নামাজের সময় হাবলাউচ্চ দিঘির পাড় বায়তুল নূর  মসজিদ প্রবাসী গ্রুপ কমিটির উদ্যোগে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় কমিটির সদস্যবৃন্দ, প্রবাসী গ্রুপের প্রতিনিধিরা এবং এলাকার সম্মানিত মুসল্লিগণ। আলোচনার মূল বিষয় ছিল—মসজিদের অযুখানা নির্মাণের অগ্রগতি ও সমাজে মাদক নিয়ন্ত্রণে একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ কমিটি গঠন।
বৈঠকে কথা বলেন মো.  মোতাহার পাঠান। উপস্থিত ছিলেন কমিটির সক্রিয় সদস্য মো.  মোবারক হোসেন, নুরুল ইসলাম, এবং প্রবাসী গ্রুপের পক্ষ থেকে মো. রফিকুল ইসলাম, মো.  মোস্তফা কামাল নাজমুলসহ আরও অনেকে। অনলাইনে যুক্ত ছিলেন প্রবাসী সদস্য মো.  বাহার মিয়া, মো. সোহেল মিয়া, মো.  জাহিদ হাসান, মো.  শাহ আলম এবং আল মামুন। আতাউল্লা তানিম  বৈঠকের সমন্বয় করেন ও মসজিদ কমিটির সঙ্গে অনলাইন সংযোগ স্থাপন করেন মো. সগির হোসেন।
প্রথমে মসজিদের অযুখানা নির্মাণের বর্তমান অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। প্রবাসী গ্রুপের সদস্যরা জানান, ইতিমধ্যে স্থানীয় ও প্রবাসী মুসল্লিদের সহায়তায় প্রায় তিন লাখ পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়—আগামী মাসের দশ তারিখের মধ্যে বাকি প্রতিশ্রুত অর্থ জমা দেওয়ার আহ্বান জানানো হবে, যাতে দ্রুত অযুখানার কাজ সম্পন্ন করা যায়।  সবার অংশগ্রহণে মসজিদের এই জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ সফল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বক্তারা।
বৈঠকের দ্বিতীয় পর্বে “মাদক, তার ক্ষতি ও প্রতিরোধ” বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচক হিসেবে ইবনে মনির বলেন, “চলুন সবাই মিলে একসাথে গড়ে তুলি মাদকমুক্ত পাড়া-মহল্লা।  যারা মাদক ছেড়ে সুস্থ জীবনে ফিরবে, তাদের জন্য ঘোষণা করা হবে বিশেষ পুরস্কার। প্রয়োজনে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা হবে—পাড়ার সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের এই দৃঢ় প্রতিজ্ঞা—গড়ে তুলব শক্তিশালী প্রতিরোধ কমিটি, মাদকমুক্ত হবে আমাদের সমাজ।
 প্রবাসী গ্রুপের পক্ষ থেকে মো.  রফিকুল ইসলাম আহ্বান জানান, “মাদকবিরোধী প্রতিরোধ শুধু কথায় নয়, কাজে বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য পাড়া-মহল্লাভিত্তিক শক্তিশালী কমিটি গঠন করতে হবে।” একই বিষয়ে বিশেষভাবে মত দেন মো. মোস্তফা কামাল নাজমুল। তিনি বলেন, “মাদক একটি সামাজিক ব্যাধি। এটি শুধু একজন নয়, পুরো পরিবার ও সমাজকে ধ্বংস করে দেয়। তাই প্রতিটি মানুষকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব নিতে হবে।
মসজিদ কমিটির সদস্য সর্দার মো. মোতাহার পাঠান বলেন, “আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, দিঘির পাড় মসজিদের তত্ত্বাবধানে একটি স্থায়ী মাদকবিরোধী কমিটি গঠন করা হবে, যা স্থানীয়ভাবে সচেতনতা, নজরদারি ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করবে।”  মো.  মোবারক হোসেন বলেন, “ধর্ম ও নৈতিকতা হচ্ছে মাদকবিরোধী সংগ্রামের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। আমাদের সন্তানদের নামাজ ও নৈতিক শিক্ষার দিকে আরও মনোযোগী করতে হবে। এই কমিটির মাধ্যমে শক্তিশালী প্রতিরোধ সচেতনতা জাগ্রত করব।
অনলাইনে উপস্থিত প্রবাসী সদস্য মো. বাহার মিয়া বলেন, “আমরা প্রবাসে থাকলেও গ্রামের উন্নয়ন ও সমাজের সুরক্ষায় সবসময় পাশে আছি। অযুখানা নির্মাণ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ—দুটি উদ্যোগই প্রশংসনীয়। মো.  সোহেল মিয়া যোগ করে বলেন, “যারা মাদক থেকে ফিরে আসবে, তাদেরকে সমাজে গ্রহণযোগ্যতা দিতে হবে—ঘৃণা নয়, সহানুভূতি দিতে হবে। জাহিদ হাসান বিশেষভাবে অযুখানার অর্থ সংগ্রহে শক্তিশালী ভুমিকা পালন করেন।
বক্তারা বলেন, মাদক সমাজের মূল শত্রু। এটি শরীর ও মন নষ্ট করে, পারিবারিক বন্ধন ধ্বংস করে দেয় এবং তরুণ প্রজন্মকে বিপথে নিয়ে যায়। আতাউল্লা তানিম বলেন  তারা কোরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে বলেন— “হে ঈমানদারগণ! মদ ও জুয়া শয়তানের অপবিত্র কাজ। তোমরা এসব থেকে বিরত থাকো, যাতে সফল হও।” (সূরা আল-মায়িদাহ, আয়াত ৯০)
আলোচনায় সবাই একমত হন যে, ইসলাম ধর্মে মাদক সম্পূর্ণ হারাম এবং এর বিরুদ্ধে সমাজের প্রত্যেকের দায়িত্ব রয়েছে।  তারা বলেন, “যদি আমরা আল্লাহর ভয়, ঈমানের শক্তি এবং পারস্পরিক ঐক্যের মাধ্যমে এগিয়ে আসি, তবে আমাদের সমাজ থেকে মাদক নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব।
 সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়—মসজিদে নিয়মিত মাদকবিরোধী আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।
তরুণদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে প্রবাসী ও স্থানীয়রা যৌথভাবে পদক্ষেপ নেবেন। স্কুল-মাদরাসা ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে সম্পৃক্ত করে সচেতনতা বাড়ানো হবে। মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনে সহযোগিতা করা হবে, যাতে তারা সমাজে ফিরতে পারে।
 বৈঠকের শেষে সম্মিলিত দোয়া পরিচালনা করা হয়।
বৈঠকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন দিঘির পাড় মসজিদ কমিটি। অনলাইন সমন্বয় করেন প্রবাসী গ্রুপের সদস্য মো. সগির হোসেন। উপস্থিত সবাই প্রতিজ্ঞা করেন—অযুখানার কাজ দ্রুত শেষ করা হবে এবং একযোগে মাদকবিরোধী কার্যক্রম শুরু হবে।
মোট তিন লাখ পঁয়ত্রিশ হাজার টাকার অর্থসংগ্রহের এই উদ্যোগে স্থানীয় মুসল্লিদের দোয়া সহযোগিতা চেয়ে প্রবাসী ভাইয়েরাও আন্তরিকভাবে সহায়তা করছেন। প্রবাসী সদস্যদের বক্তব্যে উঠে আসে, “আমরা দূরে থাকলেও গ্রামের কল্যাণে হৃদয়ের টান সবসময় থাকে। আমাদের প্রেরণা একটাই—পাড়া-মহল্লা হোক মাদকমুক্ত, ধর্মপ্রাণ ও ঐক্যবদ্ধ।
বৈঠক শেষে স্থানীয়রা বলেন, “দিঘির পাড় মসজিদ শুধু নামাজের জায়গা নয়, এটি এখন সমাজের উন্নয়ন ও নৈতিক জাগরণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।