এর ফলশ্রুতিতে গত কিছু দিন আগে জনৈক একজন ব্যক্তি ট্যাংকের পাড়ে ছেয়ে যাওয়া ব্যানার পোস্টার নিয়ে ফেসবুক স্টাটাস দেন, সেই স্ট্যাটাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার নজরে আসলে সাথে সাথে ট্যাংকের পাড় থেকে পোস্টার, ব্যানার ফেস্টুন, বিলবোর্ড উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। বর্তমানে ট্যাংকের পার প্রবেশ করলেই চোখের স্বস্তি বোধ করবেন সবাই,দৃশ্য দূষন মুক্ত ট্যাংকের পাড় দেখতে পাবেন।
আমরা প্রতিনিয়ত দেখি শহরের প্রধান প্রধান ফটক ছাড়াও শহরের অলিগলিতে সৌন্দর্যহানি ও নোরাং হচ্ছে কেবল মাত্র দেয়াল লিখন, পোষ্টার ব্যানার, বিলবোর্ডে সাঁটানোর কারনে।
গাছপালা, স্কুল-কলেজ মাদ্রসার দেওয়াল থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি ভবন কোনটি বাদ যায় না দৃশ্য দূষন কারীদের হাত থেকে।এই দৃশ্যদূষনকারী কারা এই প্রশ্নের জবাবে মোটা দাগে বলা যায় রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিরা এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক, ব্যবসায়ীক, কোন বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠী। যে যেইভাবে পারছে সে সেইভাবে দৃশ্য দূষন করে প্রিয় ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে দিনের পর দিন অসুস্থ ও পরিবেশ নোরাং করছে। এই দায় শুধু আমাদের মত সাধারণ মানুষের বেদনার সৃষ্টি করে যারা একটি সুন্দর আগামীর সম্ভাবনাময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া দেখতে চান, যেখানে আগামীর প্রজম্ম বেড়ে উঠবে দৃশ্য দূষন মুক্ত পলিমাটি সমৃদ্ধ তিতাস জনপদে।
এছাড়াও জেলার বিভিন্ন হাট-ঘাটে বাজারের গাছ গুলো রক্ষা পায় না চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার প্রচারণার লোহা, পেরেক এর কাছ থেকে। গাছ পরিবেশের বন্ধু, সেই গাছ দৃশ্য দূষনকারীদের হাতে বিনষ্ট হচ্ছে।উপজেলা থানা পর্যায়ে গেলেই চোখে পড়বে বেসরকারি হাসপাতালের নগরী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সব হাসপাতাল গুলোর ব্যানার পোস্টার, ফেস্টুন এমন কি বেসরকারি স্কুল কলেজ, হারবার ঔষধ বিক্রি, বাসা/দোকান ভাড়া, কোচিং সেন্টার এর বিভিন্ন বিজ্ঞাপন এই গাছ গুলোতে সাঁটানো আছে। যা আমাদের মননশীল চিন্তা চেতনার বিকাশ যেমন বাঁধাগ্রস্ত করে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ গুলো বিনষ্ট হওয়াও কিন্তু আমাদের বেঁচে থাকার জন্য হুমকিস্বরূপ।দৃশ্য দূষনে যে পরিবেশ সমাজ রাষ্ট্রের ক্ষতি হচ্ছে কেবল মাত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের তা কিন্তু নয় পুরো বাংলাদেশের চিত্র এটি।
দৃশ্য দূষন আগে ততটা ছিল না এখন যতটা হচ্ছে তার মূল কারন রাজনৈতিক নেতা ও তাদের প্রতিনিধিরা। যদিও আগে নির্বাচন বা দলীয় সম্মেলন এগিয়ে আসলে ব্যানার পোস্টারের দেখা মিলতো কিন্তু এখন সারাবছর এমন কোন উৎসব পার্বন নেই যেখানে ব্যানার ফেস্টুন পোস্টার মাধ্যমে জনসাধারণকে শুভেচ্ছা জানান না, কারনে অকারণে যত্রতত্র আইন অমান্য করে এগুলো বিনা অনুমতিতে সাঁটানো হয়। রাজনীতিক বড় নেতা, মাঝারি নেতা এমন কি পাতিনেতাও বাদ জান না শুভেচ্ছা বিনিময়ে। যদি তারা যার যার জায়গায় অসহায় সুবিধা বঞ্চিত মানুষের কল্যাণে এই অর্থ ব্যয় করতেন তাহলে এই শীতে জুবুথুবু হয়ে গরীবদের শীত কাটাতে হতো না, একটা হলেও শীতবস্ত্র তুলে দিতে পারতেন তাদের হাতে, এতে করে সমাজের কিছুটা উপকারে আসতে পারতো।
এছাড়াও অনেক নামী বেনামী প্রতিষ্ঠানের অশ্লীল বিজ্ঞাপনের প্রভাব ও পড়ছে স্কুল কলেজ গামী শিক্ষার্থীদের মাঝে। দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রন) আইন ২০১২ গেজেট আকারে প্রকাশ পেলেও তার কোন প্রয়োগ নেই বললেই চলে। তাহলে জনমনে প্রশ্ন এই আইনের প্রয়োজন কি ছিল যেখানে প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে তারা প্রিয় শহরের সৌন্দর্যহানী ও পরিবেশ নষ্ট করছে।
প্রায়শয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা অভিযান পরিচালনা করে এই অভিযান অপ্রতুল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা অভিযান যতখানি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন পাশাপাশি আমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে জনসচেতনতা সৃষ্টি করাও জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে কারন দিনশেষে এই শহরের সৌন্দর্যহানি যারা করছে তারাও কিন্তু এই শহরের অংশ, সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত এই শহরের অলিগলিতে কাটে তাদের সময়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার একটু স্বদিচ্ছা বদলে দিতে পারে এই শহরের রোজকার চিত্র। শহরের সবুজায়ন, যত্রতত্র ময়লা না ফেলতে উৎসাহী করা,দৃশ্য দূষন ও শব্দ দূষন, হকার মুক্ত ফুটপাত গড়তে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে এতে করে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন গুলোর দিক নিদের্শনা এক্ষেত্রে কাজে লাগিয়ে গন সচেতনতা তৈরি করতে পারে।প্রশাসনেরও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার সুযোগ রয়েছে,একটা সুন্দর নগরী গড়তে হলে, আইনের প্রয়োগ বাড়াতে হবে। জনসচেতনতা তৈরী করতে হবে।সচেতন নাগরিক সমাজেরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে পৌরসভা ও প্রশাসনের সাথে মিলে সৌন্দর্য বর্ধনে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আন্দোলনকে তরান্বিত করতে হবে।তাহলেই দৃশ্য দূষন মুক্ত হবে আমাদের প্রিয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
লেখক- আব্দুল মতিন শিপন, উপস্থাপক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব