মো. আজহার উদ্দিন,ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামে তানিম (২১) নামের এক যুবকের ছুরিকাঘাতে ফয়সাল আলম সেতু (১৭) নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থী গলায় ১৮৪টি সেলাই লেগেছে। হামলার শিকার ওই শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।
গত রোববার (১০ এপ্রিল) রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় সেতুর মা সীমা আক্তার বাদি হয়ে তানিমকে প্রধান আসামীসহ তিনজনের নাম উল্লেখ্য করে একটি হত্যা চেষ্টার মামলা করেন৷
গত বৃহস্পতিবার উপজেলার রামরাইল ইউনিয়নের শ্রীরামপুর জামে মসজিদের মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
আহত সেতু জেলা শহরের হালদার পাড়া এলাকার মো. জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে। সে গ্যাস ফিল্ড স্কুল এন্ড কলেজের ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ও আগামী জুন মাসে মানবিক শাখার এসএসসি পরীক্ষার্থী।
মামলার সূত্রে জানা যায়, সেতু বৃহস্পতিবার সকালে রামরাইল ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামে তার নানুর বাড়িতে বেড়াতে যায়। রাতে শ্রীরামপুর জামে মসজিদের তারাবি নামাজে যাওয়ার পথে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে শ্রীরামপুর গ্রামের মহব্বত আলীর ছেলে তানিমের সাথে বাকবিতন্ডা হয়। তারপর তানিম উত্তেজিত হয়ে তারাবি নামাজ শেষে সেতু মসজিদের মাঠ দিয়ে বাড়িতে যাওয়ার পথে ধারালো রাম-দা, লোহার রড, ছুরি ও চাপাতিসহ লাঠিসোঁটা সজ্জিত দলবল নিয়ে হামলা করে বসে। একপর্যায়ে তানিম সেতুর গলার ডান পাশে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে এএলাকাবাসীরা সেতুকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসলে তার অবস্থা আশংকাজনক দেখে ঢাকায় রেফার করেন হাসপাতালের চিকিৎসক। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে সেতুর গলার অস্ত্রোপচার হয় এবং তার গলায় ১৮৪টি সেলাই লাগে। বর্তমানে সে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
শ্রীরামপুর গ্রামের মলাই সরদার ও প্রতিবেশী ফরহাদ মিয়াসহ এলাকাবাসীরা বলেন, তানিম এর আগেও এলাকার অনেক কিশোরীকে একাধিকবার ছুরি ও কাটার ব্লেড দিয়ে আহত করেছে৷ সবাইকে বলে বেড়ায় তানিম প্রতিবন্ধী কিন্তু সে প্রতিবন্ধী নয়৷
আহত সেতুর নানু মানজু-আরা জানান, প্রতি বৃহস্পতিবার সেতু এখানে বেড়াতে আসে৷ রাত ১০টার দিকে পাশের বাড়ির ভাতিজার কাছ থেকে শুনি সেতুর গলা কেটে ফেলছে৷ তার নাতীকে প্রতিবেশী মহব্বত আলীর ছেলে তানিম মারছে। তারা বলে তানিম নাকি প্রতিবন্ধী কিন্তু আসলে সে প্রতিবন্ধী না৷ তানিম এলাকায় বিভিন্ন যায়গায় ইলেক্ট্রিকের কাজ করে। প্রতিবন্ধী হলে কাজ করে কিভাবে। এর আগেও এরকম করে পাঁচ ছয়টা ঘটনা ঘটিয়েছে৷ তার নাতীকে বিনা অপরাধে ছুরিকাঘাত করেছে৷ এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবি করেন।
রামরাইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মসিউর রহমান সেলিম বলেন, সেতুর ওপর বিনা অপরাধে ছুরিকাঘাত করেছে তানিম। তার সুষ্ঠ বিচার হউক। তানিম প্রতিবন্ধী না, তার প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড নেই। তানিম এরকম ঘটনা অনেক ঘটিয়েছে। এরকম ঘটনা যেন আর না ঘটে সেজন্য কঠোর পদক্ষেপ নিবে বিট পুলিশিং ও থানা পুলিশ।
মামলার ব্যাপারে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ এমরানুল ইসলাম জানান, এক স্কুল শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতের অভিযোগে থানায় একটি মামলা রুজু করেছি। আহত শিক্ষার্থীকে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত তানিম প্রতিবন্ধী না, তার বিরুদ্ধে কেউ ভাল বলেনি। অতি শীঘ্রই তানিমসহ মামলার বাকি আসামী গ্রেপ্তার করবো।