বিশ্ব কবিতা দিবসে কবি ও কবিতা প্রসঙ্গ -এস এম শাহনূর 

সাহিত্য, 21 March 2022, 304 বার পড়া হয়েছে,
এক দিনে কবিতা লেখা যায়
এক দিনে কবি হওয়া দায়!
এক হাজার কবিতা মূল্যহীন
এক কবিতাও বাঁচে চিরদিন।
কবিতা হচ্ছে সাহিত্যের প্রাচীনতম একটি শাখা। জন্মায়! কবিতা জন্মায়! কীভাবে জন্মায় একটি কবিতা? কীভাবে বেড়ে ওঠে একটি কবিতা? নাকি ইচ্ছের লালন থেকে বেড়ে ওঠা সবই কবিতা, কবিতার কথা? কবিতা কি চোরা পথ ধরে বেড়ে ওঠা প্রেম ও প্রকৃতির খেলা? গোপন প্রিয়ার চকিত চাহনি? নারী শরীরের সৌন্দর্য বর্ণনা? এমন হাজারো প্রশ্ন আছে কবিতা নিয়ে। কবিতা মানব মনের অনবদ্য ধ্যান ও মননের বহিঃপ্রকাশ; ভাবনার অনুরণন থেকে বেড়ে ওঠা পঙক্তিমালাই কবিতা। কবিতা ভাবপ্রকাশের ভাষা, প্রগাঢ় বোধের নান্দনিক প্রতিচ্ছবি। কবিতা অধিকারের ভাষা, প্রতিবাদের ভাষা। কবিতা ভালোবাসার ভাষা।। কবিতা বলতে কি আবেগের বিজ্ঞানকে বুঝানো হয়ে থাকে? আবেগ ও বিজ্ঞান এ দুটির সমমিশ্রণ ঘটলেই পঙক্তিমালাগুলো কবিতা রূপ ধারণ করে। কবিতা শিল্পের একটি শাখা যেখানে ভাষার নান্দনিক গুণাবলীর ব্যবহারের পাশাপাশি ধারণাগত এবং শব্দার্থিক বিষয়বস্তু ব্যবহার করা হয়। কবিতা হচ্ছে শব্দমাল্যের সুগভীর গাঁথুনি, হৃদয়ের অনবদ্য সুখানুভূতি। কবিতা কখনো কালের সাক্ষী, সমকালের মুখপাত্র, কখনো দগ্ধ হৃদয়ের আর্তনাদ।
বিশ্লেষকদের মতে, কবিতা প্রতিমুহূর্তে আচরণে-আবরণে, আহ্বানে নিজের অস্তিত্ব তথা বোধজাত উপলব্ধি ঠিক রেখে নিজেকে ভাঙ্গে আবার গড়ে।
কোনটি কবিতা, কোনটি কবিতা নয়,কবিতা কেমন করে কবিতা হয়? কবির উপস্থাপনায় তা শৈল্পিক ভাবে বিধৃত হয়। কবিতা কিন্তু কোন সহজ পথে কোন সহজ কান্ডারী হয়ে তাকে অতিক্রম করবেন তা কিন্তু নয়। বহুদূর পথ পাড়ি দিতে হয়।
পৃথিবীর বিখ্যাত বিখ্যাত কবিরা কবিতাকে নানান ভাবে বিশ্লেষণ করেছেন।
সংস্কৃত আলোয় কবিরা বলেছেন, “এটি একটি অলংকার কাব্য।”
আবার কেউ বলেছেন, “শব্দের সাথে শব্দের প্রবাহমানই কবিতা।”
আবার বিখ্যাত দার্শনিক গোর্জে তিনি বলেছেন,”আবেগের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশই হচ্ছে কবিতা।”
আমার মনে হয়, কবিতা আসলে নীল সাগর বুকের ঢেউয়ের মতো। সুন্দর শব্দমালা আর উপমার ঢেউ। যেখানে থাকবে সুন্দর একটি গল্প। হাজার রাতের গল্পে যে গল্প শেষ হয় না, কবিতার একটি মাত্র শব্দ কিংবা দু’চারটি লাইনে তা প্রকাশ করা যায়।
লিখলেই বা দু’চারটি বই বের হলেই কবি হওয়া যায়না।
কবি হওয়ার জন্য আগে কবিস্বত্ত্বা চায়।  মেধা, চেষ্টা পড়াশোনার পাশাপাশি কবিতা একটি সাধনার বিষয়।
“কাব্যগ্রন্থে সব কবিতা থাকেনা
কিছু থাকে ভাব,কিছু আল্পনা।”
জীবনানন্দ দাশ বলেছেন; সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি।
আর নীরেন্দ্রনাথ বলেছেন; কেউ কেউ কবি নয়, সকলেই কবি।
এক অর্থে সকলেই কবি। আবার কেউ কেউ কবি। সে যাই হোক, আমার কাছে কবি মানে কবি।
অতি শৈশব থেকে কবিতা আর আমি একই আলয়ে থাকি
কত চেনাজানা,
অথচ বিধাতার কাছ থেকে কিছু নৈসর্গিক শব্দ পেয়েও
জীবনের শ্রেষ্ঠ কবিতা খানি হলো না রচনা।
➤আমি এখনো কবি হতে পারিনি। কাব্যের অনুরাগী মাত্র।  লেখালেখি ও সংস্কৃতি চর্চা আমার নেশা।  জীবিকার জন্য প্রয়োজন পেশা। জীবিকার যাঁতাকলে নিষ্পেষিত  প্রতিশ্রুতিশীল এক অখ্যাত কবি। । সাহিত্যের একজন খাদেম। সুধী, জেনে খুশি হবেন জানি, একটি সম্মানজনক পেশার পাশাপাশি উপরোক্ত নেশা আমার আন্ধার ঘরে নিয়নের আলো।
প্রতিভাবান মানুষ মাত্রই সত্যের পূজারী। সমাজ ও রাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রতিভাবান মানুষটি কিন্তু একজন কবি,একজন লেখক, একজন শিল্পী। কবি লেখক ও শিল্পীগণ কোনো দল বা সংগঠনের হন না। বরং তাঁরা বিশেষ একদল ভক্ত ও শ্রোতা তৈরী করেন। তবেই তিনি কবি,তবেই তিনি লেখক ও শিল্পী। শব্দে,গন্ধে ও সৌন্দর্যে সাধারণ পাঠক যা শুনতে, বুঝতে ও দেখতে পান; কবি লেখকগণের অনুভূতি তার শতভাগ উর্ধ্বে। কবি লেখক ও শিল্পীরা মানুষকে স্বপ্ন দেখায়। স্বপ্ন দেখতে শেখায়। স্বপ্ন দেখতে দেখতে একজন শিশু, একজন নির্বোধ মানুষও একদিন সত্যের সন্ধান পেয়ে যায়। সত্য বলার স্বাধীনতা চায়। পৃথিবীতে সত্য যেমন সুন্দর,কবিতাচর্চাও সত্যের মতোই সুন্দর ও শোভন একটি বিষয়। এজন্যই কবি লেখক ও শিল্পীরা সমাজে শ্রদ্ধাভাজন হন। সভ্যতার অগ্রযাত্রার অগ্রপথিক বলে বিবেচিত হন। পক্ষীকুলের প্রথম কাজ, ফজর হলে ঘুমন্ত মানুষকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য কিচিরমিচির শব্দে জাগিয়ে দেওয়া। কবি লেখকগণও নদীর মতো,পাহাড়ের মতো,সবুজাভ মাঠের মতো, ঝর্ণা ধারার মতো,শব্দ বুননে,ছন্দের অনুরণনে হাজারো অবচেতন মনে চেতনার দোলা দিয়ে যায়।
বেঁচে থাকার অক্সিজেন, ভালোবাসার উঞ্চতা, রৌদ্রস্নাত দিন,শীতলতর রাত, চোঁখ ধাঁধানো অনাবিল দৃশ্যাবলী- প্রকৃতি ছাড়া কেউ দিতে পারেনা। শ্রেষ্ঠতম বন্ধু প্রকৃতির জন্য কালো ধোঁয়া ও বিকট শব্দ, উন্মুক্ত বর্জ্য ও বৃক্ষ নিধন কুঠারাঘাত সম। মানুষের অকৃত্রিম বন্ধুর নাম প্রকৃতি। কোনোকালেই মানুষ প্রকৃতির প্রকৃত বন্ধু হতে পারেনি। এ অসম বন্ধুত্বের ফলাফল ভাল হবার নয়।
তিনিই তো ধরাধামে সত্যিকার কবি
চোঁখে মুখে বুকে যার প্রকৃতির ছবি।
কবিসত্তার অধিকারী প্রত্যেক নবি
নবীসত্তার অধিকারী প্রভু
কবি-নবি আঁকে জাগরণের ছবি
দিবা নিশী ভুলেনা তাঁরে কভু।
কবিরা সমাজ সচেতন মানুষ। কবিসত্তার অধিকারী প্রত্যেক মানুষের ধর্ম আছে। রাষ্ট্র, ধর্ম নিরপেক্ষ হলেও মানুষ ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারেনা। কারণ,ধর্মের বর্মই মানুষকে আদিম,বর্বর অসভ্য থেকে সভ্য বানিয়েছে।
লেখক: এস এম শাহনূর 
কবি ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক।