পুরনো টেলিভিশন হয়ে যাচ্ছে নতুন

অপরাধ, 27 September 2021, 450 বার পড়া হয়েছে,

জনতার খবর ডেস্ক : ব্যবহৃত পুরনো টেলিভিশনের পিকচার টিউবকে নতুন কেসিং ও সার্কিট সংযোজন করে বানানো হচ্ছে নতুন টেলিভিশন। আবার ওইসব টেলিভিশনে বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের নকল স্টিকার লাগিয়ে বাজাটরজাত করা হচ্ছে। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন থেকে এমন ব্যবসা করে আসছে।

রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় কয়েকটি মার্কেটে প্রকাশ্যে এসব টিভি রি-সংযোজনের কাজ চলছে। সরেজমিনে ও অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র বলছে, পিকচার টিউব ব্যবহৃত হয় শুধুমাত্র সিআরটি (ক্যাথড রে টিউব) টেলিভিশন তৈরিতে। আগে দেশে এই সিআরটি টিভি বাজারজাত করা হলেও বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে। পুরনো ও ব্যবহৃত সিআরটি টিভির পিকচার টিউব বহু আগে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরও কতিপয় ব্যবসায়ী এসব পুরাতন পিকচার টিউব সংগ্রহ করে নতুনভাবে সংযোজন করে বিভিন্ন ব্র্যন্ডের নামে বাজারজাত করছে। এতে দেশীয় শিল্পউদ্যোক্তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং সাধারণ  ভোক্তারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের উদয়ন মার্কেটে চলছে এই পুরানো পিকচার টিউবে নতুন টিভি তৈরির কারখানা। দীর্ঘদিন থেকে ওই মার্কেটের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এসব টিভি উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে। এখানে নতুন বডিতে পুরানো পিকচার টিউব ও নিম্নমানের সার্কিট সংযোজন করা হচ্ছে। এছাড়া, পুরনো ও ব্যবহৃত পিকচার টিউব দিয়ে প্যানা, মমতা, সনি, স্যামসাং, এলজিসহ নামী-দামী ব্র্যান্ডের লোগো ব্যবহার করে নকল টেলিভিশন তৈরি করছে।

পণ্যমান যাচাই না করে বিদেশি ব্র্যান্ডের লোগো এবং স্বল্পমূল্য হওয়ায় এসব টিভি কিনে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন ক্রেতারা। প্রকৃতপক্ষে উল্লিখিত ব্র্যান্ড কয়েক বছর আগেই সিআরটি টিভি উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।

উদয়ন মার্কেটে ওইসব কারখানা পরিচালনা করছেন মমতা ইলেকট্রনিক্সের মাসুদ, আলী এন্টারপ্রাইজের হযরত আলী, মায়ের দোয়া ইলেক্ট্রনিক্সের খোকন ও শহীদ। জেএস ইলেকট্রিক্সের মালেক,প্যানা ইলেকট্রনিক্সের রাসেল ও এম আলী। এই মার্কেটে ১২ থেকে ১৪টি এমন কারখানা রয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জেএস ইলেকট্রনিক্সের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুল মালেক বলেন, আমরা সরকারের সকল ছাড়পত্র নিয়েই ব্যবসা করছি। রেজিস্টার্ড অব ট্রেডমার্কস দপ্তর থেকে ব্র্যান্ড অনুমোদন নিয়েছি। এছাড়া আমাদের পণ্যর বুয়েট থেকেও পরিক্ষিত।

উদয়ন মার্কেট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বলেন, আমাদের সাধারণ সদস্য্দের ওই দোকানগুলো বিভিন্ন  ইলেক্ট্রনিক্স কোম্পানির কাছে ভাড়া দেয়া হয়েছে। আমার নিজের এ ধরনের কোনো ব্যববসা নেই। তবে আমরা ওইসব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের কাছে একাধিকবার জানতে চাইলে তাদের পণ্যের সরকারি অনুমোদন রয়েছে বলে জানান। এরপর আমাদের আর কিছুই করার নেই।

রেজিস্টার্ড অব ট্রেড মার্কসের ডেপুটি রেজিস্টার কংকন চাকমা বলেন ‘পুরনো পিকচার টিউবে নতুন টিভি’ বানিয়ে বাজারজাত করবে এমন ধরনের কোন প্রতিষ্ঠানকে ব্র্যান্ডিংয়ে কোন অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

চিকিৎসাবিদদের মতে, পুরনো পিকচার টিউব হলো এক ধরণের বিষাক্ত পদার্থ। এসব দিয়ে তৈরি করা টেলিভিশন থেকে নির্গত গামা রশ্মি দেহ ও চোখের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অন্যদিকে পুরনো পিকচার টিউবের অতিবেগুনি রশ্মি ওজন স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে পরিবেশকে বিপর্যস্ত করে তুলছে।

বাংলাদেশ টেলিভিশন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) এর উপদেষ্টা মফিজুর রহমান বলেন, অসৎ ব্যবসায়ী পুরনো ও ব্যবহৃত পিকচার টিউব বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামে নকল টেলিভিশন প্রস্তুত করে বাজারে কম দামে বিক্রি করছে। ফলে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন। আবার যেসব উদ্যোক্তা টেলিভিশন কারখানা স্থাপন করেছেন তারাও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
তিনি বলেন, অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ  অধিদপ্তরের পরিচালক শামীম আল মামুন বলেন, পুরানো পিকচার টিউব দিয়ে নতুন টিভি তৈরি করে বাজারে নতুন ব্যা ন্ড দিয়ে বিক্রি করা প্রতরণা। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যিবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।