মোঃ রুহুল আমিন : বাংলাদেশে মোট ৬৪টি জেলা, তন্মধ্যে চাঁদপুর অন্যতম একটি জেলা। চাঁদপুর জেলা ইলিশের বাড়ি হিসাবে ইতিপূর্বে ব্র্যান্ডি হয়েছে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সময় এদেশে ১৯টি জেলা ছিলো। পরবর্তীকালে প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে প্রেসিডেন্ট হোসেন মুহাম্মদ এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৪ সালে দেশের পুরানো ১৯টি জেলায় থাকা সবগুলি মহাকুমাকে জেলায় উন্নীত করেন। আর ঐ বছর অর্থাৎ ১৯৮৪ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারী কুমিল্লা জেলার চাঁদপুর মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়। চাঁদপুর জেলার বর্তমান লোক সংখ্যা ২৬,০০,২৬৩ জন। তন্মধ্যে ১৩,৫৪,৭৩২ পুরুষ আর ১২,৪৫,৫৩১ মহিলা। মোট ভোটার সংখ্যা ১৪,১১,৬০৬জন, তন্মধ্যে পুরুষ ৭,৩৬,৯৩৭ ও মহিলা ৬,৭৪,৬৬৯ জন। এই জেলায় ৮টি উপজেলা রয়েছে। উপজেলাসমূহ হচ্ছে:- চাঁদপুর সদর, হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি, ফরিদগঞ্জ, কচুয়া, হাইমচর, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ। অপরদিকে চাঁদপুর, হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি, ফরিদগঞ্জ, কচুয়া, ছেঙ্গারচর ও মতলব সহ মোট ৭টি পৌরসভা রয়েছে। এই জেলার আয়তন ১,৭০৪.০৬ বর্গ কিলোমিটার। গ্রামের মোট সংখ্যা ১,৩৬৫টি আর ইউনিয়ন সংখ্যা ৮৯টি।
চাঁদপুর জেলায় সাংসদীয় মোট আসন সংখ্যা ৫টি। ২৬০, চাঁদপুর-১- কচুয়া উপজেলা ও মতলবব (দঃ) এর একাংশ, ২৬১, চাঁদপুর-২- মতলব উত্তর-মতলবব দক্ষিণ, ২৬২, চাঁদপুর-৩- চাঁদপুর সদর ও হাইমচর, ২৬৩, চাঁদপুর-৪- ফরিদগঞ্জ, ২৬৪, চাঁদপুর-৫ হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি।
বর্তমানে চাঁদপুর জেলা থেকে মোট ১৯টি পত্রিকা বের হয়।তন্মেধ্যে উল্লেখযোগ্য দৈনিক পত্রিকাসমূহ হচ্ছেঃ- চাঁদপুর কণ্ঠ, চাঁদপুর দর্পণ, চাঁদপুর প্রবাহ, আলোকিত চাঁদপুর, ইলশেপাড়; দৈনিক শপথ ইত্যাদি।
সীমানা: উত্তরে মুন্সিগঞ্জ ও কুমিল্লা জেলা, দক্ষিণে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও বরিশাল জেলা, পূর্বে কুমিল্লা জেলা, পশ্চিমে মেঘনা নদী, শরিয়তপুর ও মুন্সিগঞ্জ জেলা।
এই জেলার প্রধান নদী: মেঘনা, ডাকাতিয়া, গোমতী, ধনাগোদা। ঘোড়গাঁর জলা উল্লেখযোগ্য। ১৮৭৮ সালে ত্রিপুরা জেলার অধীনে চাঁদপুর মহকুমা গঠন করা হয়। ১৯৮৪ সালে চাঁদপুর জেলায় উন্নীত হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহ সহ মোট ৮টি বিভাগ ও ৬৪টি জেলা রয়েছে। এছাড়া আরো ২টি নতুন প্রস্তাবিত বিভাগ গঠনের অপেক্ষায় আছে। এগুলো হলো পদ্মা ও ময়নামতি বিভাগ।
দেশের প্রত্যেক জেলায় বহু সরকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত থাকেন। তবে জেলা প্রশাসক বা ডেপুটি কমিশনারকে জেলার প্রধান সরকারি প্রতিনিধি হিসাবে গণ্য করা হয়।জেলা প্রশাসক জেলার প্রধান রাষ্ট্রাচার কর্মকর্তা এবং মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের কাছে দায়বদ্ধ। প্রশাসনিকভাবে জেলা প্রশাসক বা ডেপুটি কমিশনার উপরস্থ বিভাগীয় কমিশশনারের নিকট দায়বদ্ধ।
দেশের যেকোন জেলার জেলা প্রশাসক চাইলে সরকারি নিয়ম মেনে ঐ জেলায় তিনি তার পছন্দ ও রুচি অনুযায়ী সকল সরকারি দপ্তর গুলোর কার্যাদী সম্পাদন করতে পারেন। আর এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলায় দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসকের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গীর উপর নির্ভর করে তিনি কিভাবে জেলাকে সাজাবেন। চাঁদপুরের বর্তমান জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জনা খান মজলিশ চাঁদপুর জেলাকে খুব কম সময়ের মধ্যে নতুন ও আধুনিক রুপে সাজাতে উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি বড় স্টেশনের পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনায় থাকা মোলহেডকে নতুন আঙ্গিকে সাজিয়ে বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলেছেন, ইলিশ চত্বরকে পূর্ণাঙ্গ রুপ দিয়েছে। নদী ভাঙ্গন প্রবন এলাকার এই জেলা শহরকে আধুনিক শহরে রুপ দিতে তিনি ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন করেছেন। নিকট ভবিষ্যতে জেলা প্রশাসক কর্তৃক গৃহিত কার্যক্রমসমূহ জেলাবাসির নজরে আসবে বলে আশা করা যায়।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জনা খান মজলিশ চাঁদপুর জেলায় এবছর ৩ মার্চ যোগদান করেন। তিনি জেলার ২১তম জেলা প্রশাসক এবং এই জেলার প্রথম নারি জেলা প্রশাসক।
উল্লেখ্য, অঞ্জনা খান মজলিশ ২২তম বিসিএস এর একজন কর্মকর্তা। সততা ও উদার মানবিকবোধ সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হিসাবে তিনি খুব স্বপ্ল সময়ের মধ্যে ইতিমধ্যে জেলাবাসির দৃষ্টি আকর্ষণ কাড়তে সমর্থ হয়েছেন। জেলার সাধারণ মানুষ সহ দলমত নির্বিশেষে সকল পেশার মানুষের জীবন-মান উন্নয়নে বিভিন্ন জনহিতকর কার্যক্রম গ্রহন করেছেন। জেলাবাসির প্রায় সকলের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন সব সময়। ইতিমধ্যে জেলাবাসির সমস্যা ও এর তাৎক্ষণিক সমাধানে তিনি তাদের সুখ-দুঃখ শুনার জন্য সরাসরি গণশুনানীর ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন। সপ্তাহের প্রতি বুধবার এই গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসকের নেয়া এই গণশুনানী ইতিমধ্যে সুধী মহল সহ সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই গণশুনানী চাঁদপুর জেলায় সম্পূর্ণ নতুন একটি মাত্রা যোগ করেছে। তাই খুব স্বল্প সময়ে তিনি জেলাবাসির অতি আপনের আপন হিসাবে ইতিমধ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।
জেলা প্রশাসক চাঁদপুর হিসাবে যোগদানের পর তিনি এক ভিডিও বার্তায় এই জেলাবাসির জন্য তাঁর করণীয় সম্পর্কে বলেছিলেন :-
‘আমি গর্ভামেন্ট সার্ভিস হোল্ডার হিসাবে চিন্তা করি যে, আমার দ্বারা যেন আমার সার্ভিসের মাধ্যমে ওই এলাকার লোকজন যেন উপকৃত হয়। তাদের কাজ ও কথা আমি রাখতে পারি এবং আমি চাই যে আমি যেন তাদের যে আশা-আকাঙ্খা একজন সরকারি কর্মকর্তার কাছে সেটা যেন পূরণ হয়। এবং আমি সবসময় এই চিন্তাধারা থেকেই কাজগুলি করে এসেছি। আমি যেখানে ইউএনও এবং এডিসি ছিলাম সেখানে একইভাবে সার্ভিস দিয়ে এসেছি। আর জেলা প্রশাসক হিসাবে কাজ করার যে ক্ষেত্র সেটার পরিধি অনেক বেশি এবং আমি বলবো যে, সেখানে জনগনের আশা-আকাঙ্খা মিটানোর যে একটা সুযোগও আছে এসুযোগটা আমি কাজে লাগাতে চাই। এবং আমি চাই আমার মাধ্যমে চাঁদপুরবাসি যেন উপকৃত হয়।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক হিসাবে যোগদানের পর অঞ্জনা খান মজলিশ জেলাবাসির উদ্দেশ্যে যে, ভিডিও বার্তা দিয়ে ছিলেন তার প্রতিটি উচ্চারণ অক্ষরে অক্ষরে তিনি পালন করে যাচ্ছেন। রাতদিন তিনি জেলাবাসির জীবন-মান উন্নয়নে কাজ করছেন। এজেলার সচেতন মানুষ তার দেয়া ভিডিও বার্তার সেই কথাগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। করোনাকালে জেলাবাসিকে সুস্থ্ রাখতে ও রোগাক্রান্তের হাত থেকে বাঁচাতে তিনি দিন-রাত যে পরিশ্রম করেছেন তার জন্য জেলাবাসি তথা সকল অংশীজন ইতিমধ্যে তাঁকে মানবিক জেলা প্রশাসক হিসাবে উপাধিতে ভূষিত করতে শুরু করেছেন। করোনাকালে জীবনের সর্বোচ্চ ঝূঁকি নিয়ে তিনি সরকারের দেয়া ও নির্দেশনা মোতাবেক ত্রাণ সহ সকল সহায়তা দিয়ে জেলাবাসির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছেন। তার নিজের চেষ্টায় ইতিমধ্যে কিডনি ডায়ালাইসিস হাসপাতাল স্থাপিত হবার প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন হবার পথে। আশা করা যায়, নিকট ভবিষ্যতে এই জেলা একটি আধুনিক জেলার সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি তার হাতধরে সম্পূর্ণ হবে।
উল্লেখ্য, অঞ্জনা খান মজলিশ ১৯৭৭ সালের ০৯ অক্টোবর ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার সম্ভ্রান্ত “খান মজলিশ” পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম রেজাউর রহমান খান মজলিশ (অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা) এবং মাতা শামীমা খান মজলিশ (গৃহিনী)। চাঁদপুর জেলায় যোগদানের পূর্বে তিনি উপ-সচিব হিসেবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে কর্মরত ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তিনি সাভার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১৯৯২ সালে স্টার মার্কসহ ১ম বিভাগে এস.এস.সি পাশ করেন । ১৯৯৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কলেজ হতে স্টার মার্কসহ ১ম বিভাগে এইচ.এস.সি পাস করেন একইসাথে উক্ত কলেজে মেধার স্বাক্ষর রাখার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যের নিকট হতে উপচার্য পুরস্কার লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৩ সালে বি.সি.এস (প্রশাসন) ক্যাডারে যোগদান করেন তিনি। প্রশাসন ক্যাডারে যোগদানের পর থেকে তিনি অত্যন্ত সততা, সুনাম ও দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। বগুড়া ও চট্টগ্রাম জেলায় ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে আমলী আদালত ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন তিনি। চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এ সময় জনপ্রতিনিধি, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন ও উন্নয়ন প্রশাসনে কাজ করার বাস্তব দক্ষতা অর্জন করেন তিনি। ফটিকছড়ি উপজেলায় কর্মকালীন সময়ে তিনি নব-গঠিত ফটিকছড়ি পৌরসভায় ১ম পৌর প্রশাসক ছিলেন। তার সময়ই ফটিকছড়ি পৌরসভার সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা চূড়ান্তকরণসহ সফল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বাংলাদেশ চা বোর্ডে উপ-সচিব হিসাবে প্রেষণে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে মানিকগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। অতঃপর উপ-সচিব হিসেবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে কাজ করেছেন। বাংলাদেশের যে এলাকায় তিনি কাজ করেছেন সেই এলাকার জন-মানুষের মনে তিনি সততা ও উদার মানবিকবোধ সম্পন্ন প্রশাসনিক ব্যক্তিত্ব হিসাবে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি দেশে ও দেশের বাইরে (জাপান, চীন ও ভারত) প্রশাসনিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত কাজে থাইল্যান্ড, চীন, জাপান, ভারত, তুরস্ক, ইন্দোনিশয়া ও সৌদি আরব ভ্রমন করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিতা। তাঁর স্বামী আবুল কাশেম মুহাম্মদ জহুরুল হক একজন সরকারি কর্মকর্তা এবং এক ছেলে ও এক মেয়ের জননী।