সাংবাদিক দেখেই ক্ষেপলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া আ‌‌‍’লীগ সেক্রেটারি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 30 November 2021, 382 বার পড়া হয়েছে,

রোববার অনুষ্ঠিত হয়ে গেল তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। সেই ধাপে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিনটি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। এ পর্যন্ত নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ১৫ জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ২১ জন জয়লাভ করেছেন। নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে পারেনি বলে নৌকার এমন ভরাডুবি বলে মন্তব্য করেছেন তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

যদিও বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে একজন স্বতন্ত্র ও ৭ জন আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেন।

সর্বশেষ সোমবার জেলা শহরের পৌর কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজন করা হয় সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া। এতে তৃণমূলের ভোটগ্রহণে প্রার্থী বাছাইয়ের আয়োজন করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় অনিয়মের বিষয়ে খবর পেয়ে সত্যতা যাচাইয়ে দুপুরে কমিউনিটি সেন্টারে যান আরটিভির জেলা প্রতিনিধি আজিজুল রহমান পায়েল, জাগো নিউজের জেলা প্রতিনিধি আবুল হাসনাত মো. রাফি ও দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের জেলা প্রতিনিধি আজিজুল আলম সঞ্চয়।

তারা ভোটগ্রহণের বিষয়ে প্রার্থীদের মতামত জানতে চান। এসময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার সাংবাদিকদের দেখে ক্ষিপ্ত হন। তিনি সাংবাদিকদের জিজ্ঞাস করেন কেন হলের ভেতর আসা হয়েছে?

ওই সময় তিন সাংবাদিক তৃণমূলের ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়ার বিষয়ে তথ্য জানতে এসেছেন জানালে আল মামুন সরকার ক্ষেপে উচ্চস্বরে বলেন ওঠেন, ‘এখানে সাংবাদিকদের কাজ নেই, বের হয়ে যান।

এই বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হলো অঞ্চলভিত্তিক নির্বাচন। এই নির্বাচন গোষ্ঠীগত একটা প্রভাব বিস্তার করে।

তিনি বিদ্রোহীদের দায়ী করে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে ভোটে প্রভাব পড়েছে। বিদ্রোহীদের ব্যাপারে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের সামনে এসে বলতে বলেন এই কথা। তারা (সাংবাদিক) আসার পর আমাকে জানানো হয় সাংবাদিক এসেছে। এই কথা জেনে আমি তাদের এসে বলেছি সকালে আমাদের উদ্বোধনী অধিবেশন সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিল। এখন যা হচ্ছে তা আমাদের তৃণমূলের আভ্যন্তরীণ বিষয়। এখন সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার মতো, সংবাদ প্রকাশ করার মতো কোনো তথ্য নেই। তাই এখানে তোমাদের কোনো প্রয়োজন নেই, তোমরা দয়া করে চলে যাও। আমি তাদের পিট মালিশ করে বের করে দিয়েছি।

এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক ও নবীনগর পৌরসভার মেয়র শিব সংকর দাস বলেন, দুই কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পরাজয় হয়েছে। প্রার্থী বাছাইয়ে ত্রুটি, স্থানীয় নেতা-কর্মীদের দ্বন্দ্ব, ঐক্য না থাকা ও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করা এর অন্যতম কারণ।

সরাইল উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফ উদ্দিন ফেসবুকে পোস্ট লিখেছেন, তৃণমূলের ভোটে বিজয়ীরা যদি নৌকা প্রতীক পেত, তাহলে অন্যরা বিদ্রোহী প্রার্থী হতো না। দলের ত্যাগী এবং যোগ্যরা হাইব্রিড ও নন আওয়ামী লীগের কাছে হেরে বাধ্য হয়েই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। যে দলের সদস্য না, তাকে কেন নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়েছে। নৌকার পরাজয়ের অন্যতম কারণ প্রার্থী বাছাইয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি।

মূলত আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাইয়ে অভিযোগের সূত্রপাত শুরু হয় জেলার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মনোনয়নের সুপারিশকে কেন্দ্র করে। উপজেলা যুবদলের সদস্য ও ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সভাপতি আজহারুল হক চৌধুরীকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দিতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার সাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়। এই বিষয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে গোয়ালনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কিরন মিয়া প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। শেষ পর্যন্ত কিরন মিয়াকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়।

নাসিরনগর উপজেলায় ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে স্বতন্ত্র ৭ জন ও আওয়ামী লীগের ৬ জন চেয়ারম্যান পদে জয়ী হন।

৩য় ধাপে সরাইল উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে মনোনয়ন প্রদানের লক্ষ্যে তৃণমূল প্রতিনিধি সভায় ভোটগ্রহণ করা হয়। কিন্তু অভিযোগ ওঠে ভোট গ্রহণে যারা এগিয়ে ছিলেন তাদের মনোনয়নের সুপারিশ করেননি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার। এনিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীরা। – সূত্র জাগো নিউজ