এই যে সাম্প্রতিক কুমিল্লায় দূর্গামন্দিরে একটা কুচক্রী মহল উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির জন্য পবিত্র গ্রন্থ আল-কুরআন পূজামণ্ডপে রেখেছে যা কেন্দ্র করে দেশের অন্যান্য স্হানে পূজার মন্ডপগুলো ধ্বংসস্তপে পরিনত হয়েছে, রক্তের হোলিখেলায় অনেক গুলো লাশ ক্ষতবিক্ষত হয়েছে,অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট সহ স্বজনহারিয়ে পরিবার গুলো দিশেহারা,উৎসব পরিনত হয়েছে উৎকন্ঠা আতংক ভয়ের কেন্দ্রস্থলে।
যার দরুন প্রতিমা বির্সজনও দুপুর গড়িয়ে বিকাল ও হতে পারেনি বাণের জলে ভাসিয়ে দিয়ে উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটাতে হলো কঠোর পুলিশি পাহারায়। এই বর্বরোচিত ঘটনা গুলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কি আঘাত হানেনি,নিশ্চয়ই চেতনায় ক্ষুনে ধরেছে। ক্ষুনে তো ধরবেই যারা ধর্মকে পুজিঁ করে ব্যবসা করতে চাই, অপরাজনীতি করতে চাই এই দেশটাকে একটা ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পায়তারা করে,সেই একাত্তরের প্রেতাত্মারা বার বার এই দেশ পরিচালনায় এসেছে।
এই ব্যর্থতা আমাদের সকলের। এই দায় জাতী হিসেবে আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না।মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই দেশটাকে সকলের সমঅধিকারের বাসযোগ্য করতে হবে এই অঙ্গিকার ব্যক্ত করে বসে থাকলেই চলবে না,আমাদের সজাগ থাকতে হবে বিশেষ করে তরুন সমাজকে।কারন আজকের তরুনরাই আগামীর সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মহানায়ক।
হিন্দু-মুসলমান দ্বন্দ্বে অনেকেই এই দেশে সুবিধা খুঁজে পাই,এই স্বার্থান্বেষী মহলের কালো হাত গুড়িয়ে দিতে হবে। ভারতের মুসলিম নির্যাতনের সাথে বাংলাদেশের হিন্দু নির্যতনের সম্পর্ক কোথায়।ভারতে মুসলিম পিঠালে বাংলাদেশে কেন হিন্দু পিঠাতে হবে। এই প্রতিযোগিতা আগে গোপনে হলেও এখন যেন তা স্বঘোষিত প্রকাশ্যে হয়ে গেছে।আমরা হিন্দু-মুসলিম নির্যাতনের একটা রাজনৈতিক চিত্রের সমীকরন থেকে মুক্তি পেতে চাই।
ধর্মীয় পরিচয়ের বাহিরেও আমরা সবাই মানুষ।আমাকে মারলে আমি ব্যাথা অনুভব করি,হাড্ডি মাংশ ফেটে রক্ত বের হয়।কোন ধর্মই রক্তের হোলিখেলায় বিশ্বাসী নয়, মানবতার বার্তায় উদ্ভাসিত।
বিবেকবান সচেতন নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে,অন্যায়ের বিপক্ষে আওয়াজ তুলতে হবে,ন্যায়ের পথে কথা বলতে হবে।
ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে আমরা আলাদা কিন্তু জাতি হিসেবে নিশ্চয়ই আমরা লাল সবুজের সমঅংশিদার এই বোধটুকু আমাদের মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারায় জায়গা করে নিতে হবে যদি আমরা নিরাপদ সুখী বাংলাদেশে আগামীর প্রজম্মের জন্য রেখে যেতে চাই।
আমাদের ধর্মীয় অনুশাসন রীতিনীতি সংস্কৃতিতে হিন্দু-মুসলমান দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে না। ধর্ম আমাদের মনুষ্যত্ব ও বিবেকবান মানুষ উদার হতে শিখায়।ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি বেমানান বরং একে উপরের পাশে দাঁড়িয়ে সহানুভূতি প্রদর্শনই ধর্মের মূলমন্ত্র। ধর্মের উপরে মানুষ, মানুষের উপরে মানবতা। ব্যক্তিজীবনে ধর্মীয় চর্চা,সাধনা ও পরিশুদ্ধি অর্জন মানুষকে উগ্রবাদী আচরণ থেকে বিরত রাখে, আমি বিশ্বাস করি স্রস্টাভীরু কোন মানুষের দ্বারা কোন নিকটবর্তী মানুষের ক্ষতিসাধন হতে পারে না। একজন মুসলিমকে যেমন স্রস্টাভীরু হওয়া উচিত ঠিক তেমনই হিন্দুকেও স্রস্টাভীরু হওয়া উচিত তাহলে উভয়পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কেউই হবে না।মঙ্গলময় পৃথিবী সকলে উপভোগ করতে পারবে।
অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ বির্নিমানের মাধ্যমে সম্প্রতির অটুটু বন্ধনে আবদ্ধ থাকুক প্রতিটি ধর্ম। যার যার ধর্ম যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করবে উৎসব আমেজে, যেখানে থাকবে না ভয় ভীতি, পুলিশি কঠোর পাহারা।
আবদুল মতিন শিপন : সংস্কৃতিকর্মী