আশুগঞ্জে ইজারার পর মেঘনার ঘাট নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি করছে একটি কুচক্রী মহল

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 24 December 2024, 36 বার পড়া হয়েছে,
মোঃনিয়ামুল ইসলাম আকঞ্জি,ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে বিআইডব্লিউটি এর ঘাট ইজারাকে ঘিরে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। একটি পক্ষ এই ঘাটটি নির্মাণের ফলে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের ৪০০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট ও ২২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্টের কুলিং ওয়াটার পাইপের ওয়াটার পাইপ, ফায়ার সার্ভিস ওয়াটার পাইপ ঝুঁকিতে পড়বে বলে প্রচারণা চালাচ্ছে। অন্যদিকে ইজারাদার শাহজাহান এটিকে স্বার্থান্বেষী মহলের অপপ্রচার বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, দেশের মোট খাদ্য চাহিদার ২০ শতাংশ পূরণ হয় আশুগঞ্জ মোকামের মাধ্যমে। এ ঘাটের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নৌকা যোগে খাদ্যশস্য খালাস করা সহজতর হচ্ছে। এতে একদিকে নদীপথে সহজে মালামাল সরবরাহ করা যাচ্ছে অপরদিকে পরিবহন খরচও কমছে। ঘাটটি বন্ধ হয়ে গেলে একদিকে যেমন এলাকার ব্যবসা বাণিজ্যে ধ্বস নামবে, অন্যদিকে কয়েক হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়বে।
জানা গেছে ,গত ২৭ জুন সরকারি নিয়ম নীতি মেনেই বিআইডব্লিউটি খাদ্যশস্য খালাস করতে আশুগঞ্জ মেঘনা নদীবন্দরের ইজারা দেয়। ৬ মাস পর একটি মহলের যোগসাজশে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাইপলাইনের ক্ষতি সাধিত হবে এই মর্মে ঘাট বাতিল করতে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি চিঠি প্রদান করে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ইজারাদার শাহজাহান জানান, ইজারা নেওয়ার পরপরই পিডিবির সাথে আলোচনা করে খাদ্যশস্য সরবরাহের জন্য ঘাটটিকে কিছু সংস্কার কাজ করা হয়। নির্মাণের পর একটি মহল ঘাটটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন পাঁয়তারা করছে। অথচ এই আশুগঞ্জের খাদ্যশস্য দেশের মোট খাদ্য চাহিদার ২০ শতাংশ পূরণ করে। ঘাটটি বন্ধ হয়ে গেলে একদিকে যেমন এলাকার ব্যবসা বাণিজ্যে ধ্বস নামবে, অন্যদিকে কয়েক হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়বে। তিনি আরও জানান, ২০২১ সাল থেকে এই ঘাটটি ইজারা দেয়া হচ্ছে। সরকার না চাইলে ঘাটটি বন্ধ করে দিতে পারে।
ব্যবসায়ী রুবেল মিয়া জানান, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সময় আমাদের ধান সংগ্রহের সুবিধার্থে বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ স্বরুপ নদীর তীর থেকে ১ কিলোমিটার ভিতরে একটি গালা (ধান সংরক্ষণের জায়গা) স্থাপন করে দেয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পূর্বপাশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়া খাল দিয়ে জলযানে করে ধান সেখানে নেওয়া হত। কিন্তু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কম উচ্চতার ব্রিজ স্থাপন ও পলি পড়ে খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে সেখানে জলযান পৌছাতে পারে না। তাই স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে এই ঘাটটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধানচাল সহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী নদী পথে এই ঘাটে এনে নদীর তীরে পন্য রাখার জায়গা না থাকায় ঘাটটির সংস্কার করা হয়।
বিআইডব্লিউটিএ এর কর্মকর্তা মোঃ মহিউদ্দিন বলেন এই বিষয়টি জেলা প্রশাসন কর্তৃক তদন্তাধীন রয়েছে। তাই আমি এই বিষয়ে কোন প্রকার মন্তব্য করতে পারবো না।
বিদ্যুতকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানায়, ইজারার নাম করে আশুগঞ্জ উপজেলার সোনারামপুর প্রান্তে মেঘনার প্লাবনভূমি ও তীর দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে জেটি ঘাট। উপজেলা বয়লার মালিক সমিতির সভাপতি শাহজাহান সিরাজ ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্য মেঘনার তীর ইজারা নিয়ে ঘাটটি তৈরি করেছেন। এই ঘাটটি নির্মাণের ফলে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের ৪০০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট ও ২২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্টের কুলিং ওয়াটার পাইপ, ‘র’ ওয়াটার পাইপ, ফায়ার সার্ভিস ওয়াটার পাইপ ঝুঁকিতে পড়েছে।
এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন আমি অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রথমে বিআইডব্লিউটিএ লিজ দেওয়ার কথা অস্বীকার করলেও ঘাটের ইজারাদাররা কাগজপত্র নিয়ে আসলে বিআইডব্লিউটিএ লিজ দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে তারা ঘাটটি সংস্কারের অনুমতি দেননি। তখন জেলা প্রশাসক অনুমতি না দিলে লিজ কেন দেওয়া হয়েছে প্রশ্ন করেন। তিনি আরো বলেন এখানে চালের মজুদের বিষয় আছে, ব্যবসায়ীদের বড় একটি মোকাম রয়েছে। এখানে প্রবাহমান খালটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ব্লক করে রেখেছে। এতে মালামাল নিয়ে ব্যবসায়ীরা যথাযথ স্থানে যেতে পারছে না। এ কারণে ব্যবসায়ীরা এই ঘাটটি ব্যবহার করছে এবং ঘাটটি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংলগ্ন নয়, বরং বেশ দূরে। ঘাটটি সংস্কার কাজের সময়ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ বাধা দেয় নি। আমরা দেখছি বন্দর ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র কোনটাই যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, যেহেতু জ্বালানী ও খাদ্যনিরাপত্তার বিষয় এখানে জড়িত।