নিজস্ব প্রতিনিধি : ফেনীর সোনাগাজীতে মাঝরাতে প্রেমিকাকে জন্মদিনের উপহার দিতে প্রেমিকার বাড়িতে ঢুকে চুরির অভিযোগে ধরা পড়ে ধোলাই খেলেন এক প্রেমিক। প্রেমিকার পরিবার প্রেমিক হামিদুর রহমান আজাদকে রাতে আটক করে রশি দিয়ে বেঁধে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘চোর’ উল্লেখ করে ছড়িয়ে দেয়।
রোববার (২৯ আগস্ট) রাতে উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের তাকিয়া বাজার সংলগ্ন পাইকপাড়া গ্রামের তাকিয়া আশ্রাফ আলী কবিরাজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুই পরিবারের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার প্রেক্ষিতে প্রেমিক হামিদুর রহমান আজাদ ও প্রেমিকার ভাই দীন মোহাম্মদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের দুইজনকে সোমবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
এলাকাবাসী, পুলিশ ও মারধরের শিকার যুবকের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রাইভেট পড়ানোর সূত্র ধরে এক স্কুলছাত্রীর সঙ্গে নির্যাতনের শিকার হামিদুর রহমান আজাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত রোববার রাত ৮টার দিকে ওই ছাত্রীর জন্মদিনে উপহার দিতে গিয়ে রাতে তাদের বাড়ির একটি কক্ষে লুকিয়ে থাকেন আজাদ। রাত একটার দিকে ওই ছাত্রীর বাবা ও ভাই বিষয়টি টের পেয়ে আজাদকে আটক করেন। এরপর তাকে বেধড়ক পিটিয়ে ঘরের সামনে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখেন।
তারপর খুঁটিতে বাধা আজাদের ছবি তুলে ছাত্রীর ভাই দীন মোহাম্মদ তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেন। পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন- ‘তাকিয়া বাজারে স্বর্ণচোর ধরা খেয়েছে। রাত তিনটায় দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকেছে। পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’ এরপর মুহূর্তের মধ্যে তার পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ আজাদকে উদ্ধার করে সোনাগাজী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হেফাজতে নেয়।
ওই ছাত্রীর বাবা অভিযোগ করেন, দীর্ঘ দুইবছর ধরে আজাদ তার স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করে আসছেন। সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আজাদ রোববার রাতে সুকৌশলে ঘরে ঢুকে তার মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা চালান। বিষয়টি টের পেয়ে তিনি ও তার ছেলে মিলে আজাদকে আটক করে রশি দিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখেন। তার ছেলের সঙ্গে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে লাঠির আঘাতে আজাদের মাথা ফেটে যায়। তিনি আজাদকে একমাত্র আসামি করে তার স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন।
অন্যদিকে, আজাদের বাবার অভিযোগ, প্রাইভেট পড়ানোর সূত্র ধরে তার ছেলের সঙ্গে ওই স্কুলছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রোববার মেয়েটির জন্মদিন ছিল। মেয়েটি বিষয়টি তার ছেলেকে জানালে আজাদ দুই প্যাকেট লজেন্স ও একটি কলম উপহার নিয়ে তার বাড়িতে যান। রাতে সেখানে খাওয়া-দাওয়াও করেন। কিন্তু গভীর রাতে তার ছেলেকে নির্মমভাবে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। শুধু তাই নয়, সেই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তাই তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দীন মোহাম্মদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
জানতে চাইলে সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম মামলার বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, স্কুলছাত্রী ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে হামিদুর রহমান আজাদ ও খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে দীন মোহাম্মদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।