জীবন যুদ্ধে হার না মানা ‘সুলতানের’ বয়স ৭০ ছাড়িয়ে ৮০ ছুঁই ছুঁই। বয়সের বাড়ে কিছুটা নুইয়ে পড়লেও হার মানেনি জীবন যুদ্ধে। তবুও থেমে থাকেননি। কখনো হাত পাতেননি কারও কাছে। জীবনযুদ্ধে হার না মানা সংগ্রামী ‘সুলতান’ এর বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ‘বিহাইর’ গ্রামে। ভাড়ায় প্যাডেল রিকসা (পায়ে পালিত) চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি।
ফরিদুল হুদা রোডে প্রথমে নজর পড়লো উনার দিকে কিন্তু পায়ে টানা রিকসা এবং বয়স্ক মানুষ দেখে না উঠতে চাইলে দেখলাম মুরুব্বির মনটা খারাপ হয়ে গেল তারপর বাধ্য হয়েই উঠলাম ওনার রিকসায় যেতে যেতে শোনা হল ‘সুলতান’ এর জীবনের সত্য গল্প। স্বাধীনতার সময় বয়স ছিল ২৫ বছর, মুক্তির সংগ্রাম দেখেছিল, বিভিন্ন সময় মুক্তিবাহিনীর লোকদেরকে আশ্রয় দিয়েছে বলে দাবি করেন ‘সুলতান’। তবে নেই কোন স্বীকৃতি, যাইহোক যৌবনের নানান সময় নানান কাজ করে কাটিয়েছেন। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে চালাচ্ছেন পায়ে টানা রিকসা। তবে এখন বৃদ্ধ বয়সে রিকসা চালাতে খুব কষ্ট হয় তার। তারপরও কি করা বাড়িতে আছে পাগল এক সন্তান, আরেক সন্তান বিয়ে করে বউ নিয়ে আলাদা থাকেন, আছে বয়স্ক স্ত্রী, তাদের খাবার তো জোগাড় করতে হয়। তারপর জিজ্ঞেস করলাম সারা দিনে কত টাকা কামান, উত্তরে আমতা আমতা করে বলল তিনশো টাকার মতো কামাই, তবে সারাদিন চালাইতে পাড়িনা বাজান, বেলা তিনটা পর্যন্ত চালায়। তবে যদি একটি ব্যাটারি রিকসা পাইতাম দিনটা ভালই চলতো। আমি জিজ্ঞেস করলাম ব্যাটারি রিকসা ভাড়া নেন না কেন? বলল ৪০০/৫০০ টাকা ভাড়া দিয়ে নিজের জন্য কিছু থাকবে কিনা ভয় পাই তাই যা পারি এটা দিয়েই কামাই। তারপর জিজ্ঞেস করলাম এটার ভাড়া কত? বলল সারাদিন ১০০ টাকা দেয়। তবে কেউ যদি একটা ব্যাটারি রিকসা আমাকে দেয় তাহলে তার জন্য দোয়া করমু। শুনতে শুনতে আমার গন্তব্য এসে গেল নেমে পড়লাম। ৩০ টাকার ভাড়া বলে উঠেছিলাম পরে ১০০ টাকা দিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম আর ভাবলাম তিনি অপরাজিত সৈনিক। জীবন যুদ্ধে হার না মানা একজন স্বামী ও পিতা।
আমরা যদি সবাই মিলে জীবন যুদ্ধে অপরাজিত সৈনিক বৃদ্ধ ‘সুলতান’কে একটি ব্যাটারি চালিত রিকসা কিনে দিতে পাড়ি তাহলে হয়তো এর মাধ্যমে তার কাঁধের বোঝা কিছুটা হলেও হালকা করতে পাড়বো।
এইচ এম জাকারিয়া জাকির,নির্বাহী সম্পাদক জনতার খবর।