পাঁচ কোটি টাকা নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগ নেতা গায়েব

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 24 February 2023, 88 বার পড়া হয়েছে,
নিউজ ডেস্ক : শান্ত কুমার রায় (৩০)। এক লাখ টাকা দিলেই এক সপ্তাহে পর সেই টাকার সাথে দিতেন ১০ হাজার টাকা লাভ। দুই লাখে ২০ হাজার টাকা। যে যত বেশি টাকা দিবে, তার লাভ তত বেশি পেতেন। কাউকে বলেছেন স্বর্ণ, কাউকে বলেছেন জমির ব্যবসা, আবার কাউকে বলেছেন সিগারেটের ব্যবসায় লগ্নি করে মিলে এই টাকা লাভ। কিন্তু কারো কাছে বলা যাবে না এই ব্যবসায় লগ্নির করার কথা। এই ফাঁদে পড়েন দুটি গ্রামের অন্তত ১৫জন মানুষ থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা নিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন এই ছাত্রলীগ নেতা।
শান্ত কুমার রায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের থোল্লাকান্দি গ্রামের নির্মল রায়ের ছেলে। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক। রয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও। দেখতে সুশ্রী-ভদ্র। ধর্মীয় আচার আচরণ মেনে চলেন। ছাত্রলীগের রাজনীতির পাশাপাশি সক্রিয় সদস্য ছিলেন ইসকনের (ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস)। গত শনিবার থেকে ছাত্রলীগ নেতা শান্তকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপরই উন্মোচন হতে থাকে শান্ত রায়ের আসল পরিচয়। একে একে গত মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত অন্তত ৯টি অভিযোগ পড়েছে নবীনগর থানায়। এসব অভিযোগে শান্ত রায় ছাড়াও তার বাবা নির্মল রায়কে বিবাদি করা হয়েছে।

এরমধ্যে শ্যামল চন্দ্র দাস ৮ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, ছগির আহমেদ ১২ লক্ষ, হক সাব ৪০ লক্ষ, আব্বাস উদ্দিন ২০ লক্ষ ৬০ হাজার, সুজন মিয়া ২০ লক্ষ, অক্লান্ত দেবনাথ ৩ লক্ষ লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। লিখিত অভিযোগের প্রস্তুতি নিয়েছেন সাইমন স্টোরের মালিক মাহফুজুর রহমান ৩লক্ষ ৬ হাজার, ঢাকা কনফেকশনারির বাবুল মিয়া ১১ লক্ষ, জাহাঙ্গীর আলম থেকে ৩৯ লক্ষ, বিকাশ এজেন্ট আরিকুর রহমান রনি ৩ লক্ষ, আরেক বিকাশ এজেন্ট মা টেলিকম থেকে ৮০ লক্ষ টাকা। এছাড়াও বড়িকান্দি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী জাহিদুল  ইসলাম থেকে ১ লক্ষ ও সলিমগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী রিফাত আহমেদ থেকে ৬ লক্ষ টাকা নেওয়া অভিযোগ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শান্ত কুমার রায়ের পিতা নির্মল কুমার রায় পরিবার নিয়ে চট্রগ্রামে বসবাস করেন। কিন্তু শান্ত কুমার রায় গ্রামের বাড়ি জেলার নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দিতে বসবাস করতেন। তিনি সবাইকে জানিয়েছেন, তার বাবা স্বর্ণের ব্যবসা করেন। শান্ত দীর্ঘদিন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি হতে চেষ্টা করেছিলেন। তাই জেলা ছাত্রলীগের এক নেতার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতাদের সান্নিধ্য পান। ফলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতির বদলে এক লাফে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেন। শুধু তা ই নন, পেয়ে যান সদস্য সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-সম্পাদক পদ। এসব পদ পদবীর কারণে সাঙ্গপাঙ্গরা আশপাশে থাকতো। ছাত্রলীগের নেতার পাশাপাশি তিনি পরিচয় দিতেন সিগারেট, স্বর্ণ ও জায়গা ব্যবসায়ী। তাই তার ব্যবসায় লগ্নির প্রস্তাব দিয়ে প্রথম দিকে পরিচিত ব্যবসায়ীদের আস্তা অর্জন করতে অল্প টাকায় অধিক মুনাফা দিতে শুরু করেন। কেউ এক লাখ টাকা দিলে তাকে সপ্তাহে ১০ হাজার টাকাসহ ফেরত দিয়েছেন। কেউ ১০ লাখ টাকা দিলে এক লাখ টাকা লভ্যাংশ সহ ফেরত দিয়েছেন। ব্যাংক থেকে অধিক লাভ পাওয়ায় অনেকেই লোভে পড়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ তাকে দিয়েছেন। শর্ত ছিল কাউকে এই লাভের কথা বলা যাবে না। কিন্তু গত শনিবার থেকে শান্ত রায়ের কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বের হয়ে আসে একে একে অনেক পাওনাদার। প্রায় ৫ কোটি টাকা নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা ভারতে পালিয়ে যাওয়া খবর উপজেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।

ছাত্রলীগ নেতা শান্তকে ৪০ লক্ষ টাকা দেওয়া হক সাব জানান, ‘শান্ত ও তার বাবা ব্যবসার কথা বলে আমার থেকে প্রায়ই টাকা নিতেন। আবার ফেরতও দিতেন। সর্বশেষ ৪০ লাখ নিয়েছেন। অন্য কারো থেকে টাকা নিতেন বলে আমার জানা ছিল না। এখন শুনতে পাচ্ছি, আমার মতো ৩০ থেকে ৪০ জন থেকেও কয়েক কোটি টাকা নিয়েছেন।
সুজন মিয়া বলেন, শান্ত আমার বন্ধু। তার বাবা চট্টগ্রামে স্বর্ণের ব্যবসা করেন। স্বর্ণ ক্রয় করার কথা বলে কয়েক দিনের জন্য আমার থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়েছেন। টাকাগুলো আমি বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করে দিয়েছিলাম। গত শনিবার আমার টাকা ফেরৎ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাত থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ আছে।

সলিমগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী রিফাত আহমেদ বলেন, উনার সাথে আমি দীর্ঘ ৬ বছর ছিলাম। অধিকাংশ সময় এক সাথে রাতে দুইজন ঘুমিয়ে। দুইজনের মধ্যে আন্তরিকতার কোন কমতি ছিল না। আমার কাছ থেকে ৬ লক্ষ টাকা নিয়েছেন সিগারেটের ব্যবসার কথা বলে। কিন্তু হঠাৎ তিনি গায়েব হয়ে গেলেন। এখন শুনি অসংখ্য মানুষ তার কাছে টাকা পান।
ছাত্রলীগ নেতা শান্ত কুমার রায় ও তার বাবা নির্মল রায়ের মুঠোফোনে অনেকবার চেষ্টা করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এই বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল বলেন, বসামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শান্ত কুমার রায়ের বিষয়ে শুনেছি। এই বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। ঘটনা যদি সত্যি হয় তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, ‘শান্তের বিষয়ে আমরা বেশকিছু লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ গুলো খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।