আমাদের একজন হুমায়ুন কবির আছেন -আবদুল মতিন শিপন

জনতার কন্ঠ, 27 October 2022, 224 বার পড়া হয়েছে,
প্রকৃতির রুক্ষতার বিদায় লগ্নে বসন্তের আগমনী বার্তায় কৃঞ্চচূড়ার লাল আভায় কোকিলের কুহুতানে মুখরিত চারপাশ আর বাঙালীর জাতীয়বাদ বিকাশের আন্দোলনে মাতৃভাষার দাবি রক্ষায় ”রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” ছাত্র-জনতার তুখোড় স্লোগানের বজ্রকণ্ঠের ধ্বনি, ঠিক সেই মুহূর্তে ১৯৫২ সালের ২রা ফ্রেব্রুয়ারী জম্ম নেন কিংবদন্তী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এড.হুমায়ুন কবির। তার জম্ম বেড়ে উঠা পলি মাঠি সমৃদ্ধ শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির রাজধানী খ্যাত তিতাস জনপদে।তার জম্মই হয়েছিল খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে বেগবান করার জন্য। এইজন্যই তিনি হয়ে উঠেছিলেন তার নিজ গুনে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার সর্বজন শ্রদ্ধেয় কীর্তিমান মানুষ।
তিনি ড্রইং রুম কেন্দ্রীক নেতা ছিলেন না, পুরো রাজনৈতিক জীবন বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে সাধারণ মানুষকে এত বেশি কাছে টেনে নিয়েছেন তাদের আবেগ অনুভূতি ভালোবাসার আরেক নাম হুমায়ুন কবির হয়ে উঠেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তার সুখ দুখের ভাগি হতে পারলেই জীবন স্বার্থক।সেই স্বার্থকতা থেকেই তিনি শিক্ষা অনুরাগী হয়ে গড়েছেন অগনিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, এতিমখানা। যা সমাজের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। গরীব দুখী, ধর্ম, বর্ন জাত-পাত সবকিছুর উর্ধ্বে থেকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাকে সকল ধর্মের মানুষের নিরাপদ আবাসস্থলে পরিনত করেন। সামাজিক মেলবন্ধন, শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেন। তিনি কিংবদন্তী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি ব্যক্তিজীবনে ছিলেন সাদামাটা একজন মানুষ।
যার মেধা মননশীল চর্চা মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসায় তিনি বেঁচে আছেন এত কাল অব্দি যদিও তিনি জীবনের শেষ প্রান্তে দীর্ঘ সময় রাজনীতির মঞ্চে অনুপস্থিত ছিলেন তার শারিরীক অসুস্থতার জন্য। তারপরও মানুষ তাকে ভুলে নাই, শ্রদ্ধা ভরে আজও স্মরন করে তার স্মৃতির প্রতি।
হুমায়ুন কবিরের তখন কতই বা বয়স, ১৯ কিংবা ২০। এই টগবগে যুবক মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে হাতিয়ার হাতে নেমে পড়েন প্রশিক্ষণ নিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধে। শৈশবকাল থেকেই তার স্বদেশের প্রতি ছিল অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। মায়ের মতনই তিনি মাতৃভূমিকে ভালবাসতেন। মৃত্যু ভয় অপেক্ষা করে সম্মুখসারীর যোদ্ধা হিসেবে নিজেকে আবিষ্কার করেছিলেন।
একটাই স্বপ্ন ছিল যেকোনো মূল্যে পাকিস্তানি হায়নাদের শিকল থেকে শোষন, বঞ্চনা, নিপীড়ন, নিষ্পেষিত ও অধিকারবঞ্চিত বাঙালি জাতি যেন আজীবনের লড়াই-সংগ্রাম থেকে নিস্তার পাই।বাংলাদেশ নামে একটা স্বাধীন সার্বভৌমত্ব ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন।
তার দূরদশি চিন্তা চেতনা তাকে রাজনীতির মাঠে সরব করে তুলেন, ছাত্র জীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। খুব অল্প বয়সে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে পৌরবাসীর সেবা করার সুযোগ পান, এরপর শুধুই তার চড়াই,আইনপেশার পাশাপাশি হয়েছেন সাংসদ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী, দেশের তুখোড় রাজনীতিবিদের একজন।
যদিও এই অবস্থানে থেকে সবাই ঢাকা মুখী হয়, কেউ নিজের জেলায় অবস্থান করে না তেমন একটা কিন্তু তিনি নিজের জেলাকে ভালোবেসে, জেলার মানুষের প্রতি একটা ভীষন দূর্বলতা থেকে এখানেই বেশির ভাগ সময় থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।
আর্দশের উজ্জ্বল আলোকবর্তিতা জ্বালিয়ে সমাজের কুপমু-কতা দমন ও ব্যক্তিজীবনে ধর্মভীরু মানুষটির প্রগতিশীল চিন্তা, স্বদেশের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তার জীবন দর্শন তরুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। তাকে শুধু জম্ম বা মৃত্য দিবসে সেমিনার সিম্পোজিয়াম, আলোচনা মঞ্চে আবদ্ধ রাখলে হবে না। আমাদের নিজেদের স্বার্থে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তিনি বেঁচে থাকার সাথে মিশে আছে এই তিতাস জনপদের সমৃদ্ধি,অর্জন আর আমাদের যে একজন হুমায়ুন কবির আছেন তার বর্ননা।