কেল্লা বাবার ওরসে পির-ফকির-সাধু সন্ন্যাসীদের মিলনমেলা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 15 August 2022, 163 বার পড়া হয়েছে,

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার খরমপুরে প্রখ্যাত আউলিয়া শাহ ছৈয়দ আহাম্মদ গেছুদারাজ (রহ.) ওরফে শাহপির কেল্লা বাবার মাজারে বাৎসরিক ওরসে পির, ফকির, বাউল আর সাধু সন্ন্যাসী যেমন যোগ দিয়েছেন, তেমনি এসেছেন পর্যটক-দর্শনার্থীরাও।

করোনা মহামারির কারণে গেল ২ বছর বন্ধ থাকার পর ১০ আগস্ট থেকে শাহপির কেল্লা বাবার মাজারে ভক্ত-আশেকান, বাউল, পির, ফকির, সাধু সন্ন্যাসী আর দর্শনার্থীদের মিলনমেলায় মুখরিত মাজার প্রাঙ্গণ।

ভক্তরা কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে দান সদকা মান্নতের গরু, ছাগল আর মোরগ দিচ্ছেন কেল্লা বাবার দরবারে। জাতপাত মানবতাবাদী অহিংসা মনের সন্ধানে মাজার এলাকায় ধ্যানজ্ঞান আর জিকির ফিকিরে মগ্ন পির-ফকির আর সাধু-সন্ন্যাসীরা।

শাহ ছৈয়দ আহাম্মদ গেছুদারাজ (রহ.) শাহপির কেল্লা বাবার মাজারে সপ্তাহব্যাপী ওরস এবং মাসব্যাপী মেলাকে কেন্দ্র করে দেশের নানাপ্রান্ত থেকে নৌকা, বাস ও ট্রেনযোগে ভক্ত আশেকান ও পর্যটকদের পদচারণায় মাজার এলাকায় জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।

কেল্লা বাবার মাজারে আসা লাখো ভক্ত-আশেকানের প্রত্যাশা আল্লাহর ওলির অসিলায় গুনাহ মাফ ও কেল্লা বাবার জীবন আদর্শের সান্নিধ্য লাভ করতে পারবেন তারা।

কেল্লা বাবার বাৎসরিক ওরস উপলক্ষকে ঘিরে মাজার প্রাঙ্গণে বসেছে মেলা। মেলায় দর্শনার্থীদের জন্য নানা পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। ওরসে আগত মাজারের ভক্ত-আশেকান জায়েরিনদের ইবাদত-বন্দেগী, নামাজ, জিয়ারত, কুরআন তেলাওয়াত, মিলাদ, তোবারক বিতরণ, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সংরক্ষণে মাজার এলাকায় আইনশৃঙ্খলা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

প্রতি বছর ১০ আগস্ট থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত সাত দিনব্যাপী বাৎসরিক ওরসের আয়োজন করে থাকে মাজার পরিচালনা কমিটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৩০৩ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত সুফি দরবেশ হযরত শাহজালাল (রহ.) ইসলাম প্রচারের জন্য ৩৬০ জন আউলিয়া নিয়ে এসেছিলেন সিলেটে। ওই ৩৬০ জন শিষ্যের মাঝে অন্যতম ছিলেন শাহ ছৈয়দ আহাম্মদ গেছুদারাজ (রহ.) প্রকাশ শাহপির কেল্লা শহীদ (র.)। তিনি হযরত শাহজালাল (রহ.) খুব কাছের লোক ছিলেন।

কেল্লা বাবার মাজার পরিচালনা কমিটির সদস্য ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাকদির খান খাদেমসহ একাধিক খাদেমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই সময় খড়মপুর গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের জেলেরা তিতাস নদীতে মাছ ধরত। একদিন চৈতন্য দাস ও তার সঙ্গীরা তিতাস নদীতে মাছ ধরার সময় হঠাৎ তাদের জালে একটি খণ্ডিত মস্তক (কেল্লা) আটকা পড়ে। বিষয়টি দেখে জেলেরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন।

খণ্ডিত মস্তকটি উঠাতে গেলে আল্লাহর কুদরতে খণ্ডিত মস্তকটি বলে ওঠে- ‘একজন আস্তিকের সঙ্গে আরেকজন নাস্তিকের কখনো মিল হতে পারে না। তোমরা যে পর্যন্ত কলেমা পাঠ করে মুসলমান না হবে ততক্ষণ আমার মস্তক স্পর্শ করবে না।’

খণ্ডিত মস্তকের কাছ থেকে এ কথা শোনার পর চৈতন্য দাস ও তার সাথীরা হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। খণ্ডিত মস্তকের নির্দেশ অনুযায়ী ইসলামি মতে খণ্ডিত মস্তকটি দাফন করেন এবং তারা মাজারটির খাদেমদারিতে নিযুক্ত হন।

রাজা আচক নারায়ণের সঙ্গে হজরত শাহজালালের (রহ.) প্রধান সেনাপতি হযরত সৈয়দ নাসিরউদ্দিনের (রহ.) যে যুদ্ধ হয়েছিল সেই যুদ্ধে হযরত ছৈয়দ আহমদ গেছুদারাজ (রহ.) শহিদ হন এবং তার খণ্ডিত মস্তক তিতাসের স্রোতে ভেসে যায়। ভক্ত আশেকানরা বিশ্বাস করেন- একদিন খড়মপুর গ্রামের কিছু লোক মাছ ধরার সময় খণ্ডিত মস্তকটি (কল্লা/কেল্লা) পান।