নাসিরনগরে সংযোগই নেননি, তবুও টেলিফোন বিলের চিঠি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 28 June 2022, 136 বার পড়া হয়েছে,

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে দীর্ঘ ১২ বছর টেলিফোন ও সংযোগ না থাকার পরও গ্রাহকদের কাছে টেলিফোন বিল দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) বিরুদ্ধে। সাবেক গ্রাহকদের এ বিল পরিশোধ করতে বিটিসিএলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকরা।

এ বিষয়টি নিয়ে গত ৬ জুন ভুক্তভোগীদের পক্ষে উপজেলা সদরের ২০ জন গ্রাহক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোনাব্বর হোসেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দাসকে বিষয়টি তদন্ত করার দায়িত্ব দেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার সকালে নাসিরনগর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ে শুনানির আয়োজন করেন এবং শুনানিতে জেলার বিটিসিএলের এসটিএ মো. আমির জাহান খান, উপসহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম ভূঁইয়া ও ভুক্তভোগীসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা সদরে বিটিসিএলের গ্রাহক সংখ্যা ১৭৫ জন। সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলা সদরের প্রায় ১২ বছরের আগের ভুতুড়ে টেলিফোন বিলের চিঠি পেয়ে সাধারণ গ্রাহকরা হতবাক। যেখানে বাড়িতে লাইনই নেয়নি, সেখানে আবার বিল কিসের- এমন প্রশ্ন উপজেলা সদরের মো. মামুন ভূঁইয়ার। তার মতো এমন অনেকেই আছেন, যারা বাড়িতে টেলিফোন লাইন সংযোগ নেননি, কিন্তু তাদের নামে প্রায় ১২ বছরের বকেয়া বিল ধরিয়ে দিয়েছে উপজেলা বিটিসিএল অফিস।

সাধারণ গ্রাহকদের অনেকেই জানান, তাদের বকেয়া বিল উপজেলা বিটিসিএল অফিসের কর্মচারী তাপস মুখার্জীর কাছে পরিশোধ করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন।

উপজেলা সদর ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা মামুন তাদের বাড়িতে টেলিফোন লাইনের সংযোগ নেননি। অথচ তার নামে ১২ বছরের বকেয়া বিল করা হয়েছে।

নাসিরনগর সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. আব্দুল হক বলেন, ১২ বছর আগেই টেলিফোন লাইনের সকল বিল পরিশোধ করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছি। কিন্তু কিছুদিন আগে আমার নামে ১২ বছরের বকেয়া বিল পরিশোধ করার চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আমার জন্য খুবই বিব্রতকর।

উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অঞ্জন কুমার দেব বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করার সময় সকল বিল পরিশোধ করে প্রত্যয়ন নিয়েছি, কিন্তু তারপরও আমার নামে ১২ বছরের বিল দেখানো হয়েছে। আমি বিল পরিশোধের প্রত্যয়ন দেখানোর পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে এসব নাকি ভুয়া কাগজ।

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) নাসিরনগর অফিসের কর্মচারী তাপস মুখার্জী বলেন, গ্রাহকের সব টাকা সময়মতো জমা করেছি; কিন্তু কী কারণে এত বিল আসল বিষয়টি আমার জানা নেই।

তদন্তকারী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দাস বলেন, গ্রাহকের সবার কথা শুনেছি। আমি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। তারপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

জেলার বিটিসিএলের সহকারী ব্যবস্থাপক (রাজস্ব) মো. আমির জাহান খান বলেন, গ্রাহকরা লাইনের সংযোগ নিয়ে পরে তারা বিচ্ছিন্ন করার জন্য কোনো আবেদন করেনি। ফলে তাদের নামে অনেক বিল এসেছে। তবে যাদের নামে বিল এসেছে, তাদের সবাইকে বিল পরিশোধ করতে হবে।

অফিসের কর্মচারী তাপস মুখার্জীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রাহকদের কাছ থেকে আমি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনেছি। তিনি এখন বদলি হয়ে চাঁদপুরে জেলায় আছেন। তবে এ ব্যাপারে যদি তিনি অভিযুক্ত হন তদন্তসাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।