ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ৩৫টি গ্রামের মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছেন। ইউনিয়নগুলো হলো চর-ইসলামপুর ইউনিয়ন, পত্তন ইউনিয়ন, ইছাপুরা ইউনিয়ন, চম্পকনগর ইউনিয়ন, বুধন্তি ইউনিয়ন ও হরষপুর ইউনিয়ন। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এসব গ্রামের ফলসি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিতাস নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার দত্তখোলা, এক্তারপুর, সহদেবপুর, চর-ইসলামপুর, মনিপুর, পত্তন, গোয়ালখলা, লক্ষীমোড়া, চান্দুরা, কালিসিমা, চম্পকনগরের ভাটি এলাকাসহ উপজেলার ২০টি গ্রামে পানি ঢুকেছে। এতে করে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ১৭ শত পরিবারের প্রায় সাড়ে ৮ হাজার মানুষ। বানভাসি মানুষের অভিযোগ গত ১ সপ্তাহ ধরে তারা দুভোর্গের শিকার হলেও এখন পর্যন্ত সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা পাননি।
জানা গেছে, সম্প্রতি অতি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে বন্যার রূপ নিয়েছে।
গত সপ্তাহে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পানি আখাউড়া দিয়ে আসতে শুরু করে। এতে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, কসবা, নাসিরনগর, সরাইল উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করে। এতে করে ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, পুকুর, ডোবা, ঘরবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হতে শুরু করে। উপজেলার রামপুর-মনিপুর সড়ক, বুল্লা-বড়চাল সড়কসহ অনেকাংশ এলাকার সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যায়।
আর পুকুর ডোবার বাঁধ ভেঙে মাছ বন্যার পানিতে ভেসে যায়। পানিবন্দী হয়ে পড়ে অনেক পরিবার। বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার হরষপুর, চরইসলামপুর, বুধন্তী, পত্তন, চান্দুরা, বিষ্ণুপুর ও ইছাপুরা ইউনিয়ন। উপজেলায় তিনটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
বন্যাকবলিত মনিপুর গ্রামের নায়েব মিয়া বলেন, বন্যার পানিতে পরিবার পরিজন, গরু-বাছুর নিয়ে খুব সমস্যায় আছি। রান্নাঘর, টিউবওয়েল, বাথরুম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। যদি পানি বাড়তে থাকে তাহলে আমাদের বাড়িছাড়া হতে হবে।
উপজেলার চান্দুরা ইউনিয়নের কালিসীমা গ্রামের জয়নাল ইসলাম বলেন, বাড়ি ঘরে পানি উঠেছে। পুকুরের মাছ সব ভেঁসে গেছে। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে আমরা কোনো ধরনের সহায়তা পাইনি। জনপ্রতিনিধিরাও আমাদের পাশে নেই।
কালীসীমা গ্রামের আমেনা বেগম নামে এক নারী বলেন, প্রতিদিনই পানি বাড়ছে। বাড়ির উঠানে কোমর পানি। এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যান কেউ কোনো খোঁজ নেয়নি।
উপজেলার চর-ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দানা মিয়া ভূঁইয়া বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা সরকারিভাবে কোনো সহায়তা পাইনি। এলাকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার সাব্বির আহমেদ বলেন, বন্যায় ৩,৩৭০ হেক্টর আউশ ধানের জমি ও ৫০ হেক্টরের সবজির জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ.এইচ. ইফরান উদ্দিন আহমেদ বলেন, বুধবারও তিনি বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বন্যাকবলিত লোকদের জন্য ২৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপজেলার ২০ গ্রাম বন্যায় কবলিত হয়েছে। ৬৮৭টি পরিবারের ৩,৪৩৫জন মানুষ পানিবন্দী হয়েছেন। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করছি।