সম্প্রীতি ও সহনশীলতা – জাকারিয়া জাকির

মতামত, 9 May 2022, 221 বার পড়া হয়েছে,
আমরা জীবনে যা কিছু করি প্রায় সবকিছুর জন্যই সহনশীলতা প্রয়োজন। আমরা প্রায়ই কেনো এক স্থানে রওনা দিয়ে যানজটে আটকা পড়ে যাই, ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে গিয়ে বা কোনো জায়গায় যাওয়ার টিকেট কাটার জন্য লম্বা লাইনের দাঁড়াতে হয়। এসব স্থানে রাগারাগি বা চিৎকার করলেও কোন লাভ হয়না সেখানে সহনশীল মনোভাব নিয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো গতি থাকেনা।

আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে, যারা অন্যের কথা শুনতে চায় না বা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। অথচ অন্যদের কথা শোনার সহনশীলতা তাদের থাকা উচিত। অন্যদের কথা শোনার ফলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সমৃদ্ধ করার এবং আরো ভালো করে আমাদের অবস্থানকে বোঝার সুযোগ হতে পারে। এভাবে অসহিষ্ণুতার কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের কথা শোনার ফলে আমরা অনেক নতুন তথ্য পেতে পারি, আপনার জ্ঞানের পরিধি বেড়ে যেতে পারে। আমাদের দুটি কান এবং একটি মুখ রয়েছে। সৃষ্টির এ রহস্য আমার জানা নেই। তবে যতটুকু বুঝি, আমরা কথা বলার চেয়ে দ্বিগুণ শুনব। এ ব্যাপারে সহনশীলতা আমাদের সহায়ক হতে পারে।

একদিকে দেশে শিক্ষার হার বাড়ছে, যোগাযোগের বিকাশ ঘটছে এবং জীবনযাত্রার মানও বাড়ছে। অন্যদিকে সমাজে সহনশীলতা কমে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষণীয়। রাজনৈতিক বা ধর্মীয় বিশ্বাস-নির্বিশেষে সমাজে অসহিষ্ণুতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের চর্চারও অভাব দেখা যাচ্ছে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের মানুষও নানা সম্প্রদায়ের মিশ্রণ এবং এই মিশ্র সম্প্রদায়ের সমাজে বেঁচে থাকা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের প্রত্যেকেরই সহনশীল হওয়া একান্ত প্রয়োজন, যা বিশ্বের এই অংশে শতাব্দীকাল ধরে বিদ্যমান।

সহনশীলতা শুধু নৈতিক দায়িত্বই নয়, বর্তমান সমাজের প্রতিটি স্তরে তার শক্তিশালী উপস্থিতি কাম্য। আইনের প্রয়োজন রয়েছে, কিন্তু অসহিষ্ণুতা প্রতিরোধে শুধু আইনই যথেষ্ট নয়। অতএব সহনশীলতা বৃদ্ধি এবং সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সহনশীলতা এবং অহিংসা প্রচারের জন্য সমতা এবং মৌলিক মানবাধিকারের জন্য আইন প্রণয়ন করা উচিত। আইনি কাঠামোর এমন বাস্তবায়ন থাকতে হবে, যাতে মানুষ বিচার নিজেদের হাতে তুলে নিতে না পারে এবং তাদের বিরোধ মেটানোর জন্য সহিংসতার আশ্রয় নিতে না পারে। অসহিষ্ণুতা প্রায়শই একজন ব্যক্তি বা একটি গোষ্ঠীর রাজনৈতিক বা অন্যান্য দুরভিসন্ধি পূরণ করতে সাহায্য করে। এসব ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ছাড়াও মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যখন অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পায়, আমাদের অবিলম্বে এগিয়ে আসা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সর্বোত্তম প্রচেষ্টা করা উচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সহনশীলতার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে হবে এবং তাদের জীবনের প্রতিক্ষেত্রে সহনশীল হতে অনুপ্রাণিত করতে হবে। দেশের প্রত্যেক মানুষকে সহনশীল হতে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন সচেতনতামূলক আচার-অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে।

এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টির, যাতে প্রত্যেক নাগরিক নির্দ্বিধায় তার বিশ্বাস ও মতামত প্রকাশ করতে পারে। কারো মতামত বা চিন্তা-ভাবনা যদি অন্যের চোখে আপত্তিকর হয়, তাহলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান করা উচিত। এটাই সহনশীলতার শিক্ষা। আমাদের সহনশীলতার শক্তিতে আমরা যেন সমাজের প্রতিটি স্তরে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রেখে বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি সেই প্রত্যাশাই রইল।