একটি বজ্র কণ্ঠ, তর্জনীর একটি বজ্র নিনাদ
মিটিয়ে দিলো পলাশীর পরাজয়ের অপবাদ।
টুঙ্গি পাড়ার দামাল ছেলে জাতির জনক বঙ্গবীর
শোষিত বাঙালীর নেতা তিনি চির উন্নত শির।
খোকার হাতে বাঙালী লিখল বিজয়ের ইতিহাস,
অবাক পৃথিবীর সবাক কথন সাবাস সাবাস।
শেখ মুজিবুর রহমান। ‘শেখ মুজিব’ নামেও পরিচিত। সংক্ষিপ্তরূপে বলা বা লেখার জন্য অনেকে ‘শেখ মুজিব’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন। ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটির ব্যবহার আরও বেশি। যারা বঙ্গবন্ধু বা শেখ মুজিব শব্দ ব্যবহার করে, তারা শেখ মুজিবুর রহমান শব্দ বা নাম ব্যবহার করে না। এমনকি একই সঙ্গে দুটি নাম ব্যবহারের প্রয়োজন থাকে না। আরও একটি সম্প্রদায় ‘শেখ সাহেব’ শব্দ ব্যবহার করে। শেখ সাহেব শব্দ ব্যবহারের আরেকটি তাৎপর্য আছে। বিশেষত শেখ মুজিবুর রহমানের সামসময়িক (সমসাময়িক শব্দটি বহুল প্রচলিত হলেও ভুল) রাজনীতিকরা শেখ সাহেব শব্দটি বেশি ব্যবহার করে থাকেন। এটি শেখ মুজিবুর রহমানের জীবদ্দশা থেকে এখনও প্রবীণ রাজনীতিকদের মধ্যে চালু আছে।
মুজিব নামটা শুনলে চোঁখের সামনে ভেসে ওঠে সাদা পরনে পাঞ্জাবি-পায়জামা সাথে কালো ওয়েস্ট কোট, চোঁখে কালো মোটা ফ্রেমের চশমা। যাঁর মধ্যে দিয়ে দেখা যায় চকচকে ঝকঝকে শানিত একজোড়া চোঁখ। অতি সাধারণ পোশাক পরিহিত একজন অসাধারণ মানুষের ছবি। সেই মানুষের ছবি জেগে ওঠে যাঁর হৃদয় ছিল আকাশের মত বিশাল, যাঁর সকাল হত দেশের মানুষের কথা মনে নিয়ে, যে চোঁখে ঘুম নামতো দেশের আপামর মানুষের প্রতি ভালবাসা নিয়ে।
সেই মানুষটা আমাদের বাঙ্গালি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান, আপামর জনতার ভালবাসা তাঁকে শুধু জাতির পিতাই করেনি করেছে বন্ধু,বাংলার বন্ধু, বাংলার মানুষের বন্ধু, তিনি আমাদের বঙ্গবন্ধু। যাঁর প্রেরণায় বিনা অস্ত্রে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে সমুখ সমরে নেমে ছিল বাঙলার আমজনতা। সাথে ছিল শুধু একবুক সাহস, আর এই সাহস জুগিয়েছিলেন আমাদের বাঙ্গালার বন্ধু আমাদের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর ঋণ কেউ শোধ করতে পারবে না।
যাঁর চিন্তা চেতনায় সবার আগে এসেছে দেশ, দেশের মানুষ, দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, পেট ভরে ভাত খেতে পাবে, দুর্নীতিমুক্ত সমাজে বাস করবে, দেশের মানুষ শিক্ষা দীক্ষায় উন্নত হবে। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো একটা দেশ উপহার দিতে চেয়েছে, সেই লক্ষ্যে কাজ করছিলেন তিনি, একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশেকে উনি সাড়ে তিন বছরে সোজা করে দাঁড় করিয়েছিলেন। কিন্ত সে হাসি হাসতে পারেন নি। কারণ ৭১’এর দোসররা রয়ে গিয়েছে আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, সমাজে, সরকারে। আর তারাই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, নির্দ্বিধায় খুন করে দেশের একমাত্র বন্ধুকে, বঙ্গবন্ধুকে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের রূপকার, কিংবদন্তি এই নেতা ১৭ মার্চ ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার ছোট্ট একটি গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি ঘাতকের নিষ্ঠুর বুলেটে প্রাণ না হারাতেন তবে আজ ১৭ মার্চ তাঁর বয়স হতো ১০২ বছর।
কিন্তু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এই বাঙালিকে জাতি হিসেবে আমরা মাত্র ৫৫ বছর ৪ মাস বাঁচতে দিয়েছি। স্বাভাবিক মৃত্যু হলে শতায়ু তিনি হতেন না, তা কে বলতে পারে! যদি তিনি তাঁর অতি প্রিয় বাংলার মাটিতে শতবর্ষ বেঁচে থাকতেন তবে এই দিনটি জাতি তখন কীভাবে পালন করত, তা ভাবলে মনেপ্রাণে শিহরণ জাগে।
লেখক: এস এম শাহনূর
কবি ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক।