দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বিপাকে মানুষ

মতামত, 23 February 2022, 211 বার পড়া হয়েছে,
বাজারে গিয়ে দেখলাম, অনেক দ্রব্যের দাম দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বস্তুত বাজারে চাল, ভোজ্যতেল, ডাল, ডিম, চিনি, গুঁড়াদুধসহ প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। সবজি ও মাছ-মাংসের দামও বৃদ্ধির দিকে। দ্রব্যমূল্য ও মানুষের জীবনযাত্রা এ দুটি একইসূত্রে গাঁথা। প্রতিটি পরিবার কীভাবে তাদের দৈনন্দিন জীবন অতিবাহিত করবে তা নির্ভর করে আয়, আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্য ও ভোগ্যপণ্যের মূল্যের ওপর। ভোগ্যপণ্যের মূল্য যখন ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, তখন মানুষের মধ্যে থাকে এক ধরনের স্বস্তির ছাপ।

অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে থাকে, তখন তাদের জীবনে ধীরে ধীরে নেমে আসে নানা ধরনের অসুবিধা ও অশান্তি। বর্তমানের সংকটময় মুহূর্তে এ ধরনের অসুবিধায় দিন পার করছে দেশের অধিকাংশ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। যারা লজ্জায় না পারছে কাউকে কিছু বলতে, না পারছে কারও কাছে হাত পাততে।

বিগত বছরে করোনায় দেশের অর্থনীতিতে যে ক্ষত তৈরি করেছে, তা কাটিয়ে উঠতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। উচ্চবিত্তরা ধীরে ধীরে সামলে উঠলেও এর চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে। করোনায় উপার্জন ক্ষমতা বাড়েনি; বরং অনেকে তাদের ছোটখাটো ব্যবসা হারিয়ে সংকটের মধ্যে আছে।

কেউ পেশা হারিয়ে পূর্বের জমানো সঞ্চয় থেকে জীবন নির্বাহ করছে, আবার কেউ আয়ের সঙ্গে খরচের ভারসাম্য ধরে রাখতে না পেরে জীবনযাত্রার মান কমিয়ে কোনোভাবে দিন কাটাচ্ছে। একদিকে আর্থিক অনটন, অন্যদিকে এ সময়ে যদি দ্রব্যমূল্য ক্রমাগত বাড়তে থাকে, তাহলে তাদের অবস্থা আরও শোচনীয় হবে।

বিগত কয়েক মাসের ব্যবধানে চাল, ডাল ভোজ্যতেল, চিনি ইত্যাদিসহ অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কয়েক দফা বেড়েছে। এর ফলে সমাজের মধ্য ও নিম্নমধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত শ্রেণি খুবই খারাপ অবস্থায় আছে। তাই এ ব্যাপারে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি যাতে কোনো ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পণ্যের দাম আরও বাড়িয়ে দিতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে দিনমজুর ও খেতখামারে কাজ করা মানুষসহ নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো। তাদের জন্য বাজারের উত্তাপ এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাহিদার তুলনায় বাজারে পণ্যের সরবরাহ কম হলে তার মূল্য বাড়তে থাকে। অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা অর্জনের মানসিকতায় বিভিন্ন সিন্ডিকেট তৈরি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আটকে রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে পারে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করার জন্য কর্তৃপক্ষকে বাজার মনিটরিং জোরদার করতে হবে।নিত্যপণ্যের দাম শহরে কম, গ্রামে বেশি অসাধু ও অধিক মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের দমনে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কর্তৃপক্ষকে সুষ্ঠু বাজারব্যবস্থা সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে।

– কোহিনূর আক্তার প্রিয়া, সমাজসেবক ও নারী সংগঠক