ছুটির দিনে এত মানুষ, স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই

সারাদেশ, 21 January 2022, 293 বার পড়া হয়েছে,

নিজস্ব প্রতিবেদক : কয়েকদিন ধরে দেশে করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। এ অবস্থায় জনসমাগম বন্ধসহ বেশকিছু বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। এর মধ্যেই পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে চলছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসর। মেলার ২১তম দিনে শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। তবে অধিকাংশ ক্রেতা-দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি।

কারণ হিসেবে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং দর্শনার্থীরা বলছেন, মেলা শেষ হওয়ার সময় যত এগিয়ে আসছে তাই ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে। তাছাড়া আজ ছুটির দিন হওয়ায় অনেকে মেলায় আসতে দিনটি বেছে নিয়েছেন।

শুক্রবার মেলা প্রাঙ্গণে সরেজমিনে দেখা গেছে, জুমার নামাজের পর থেকেই কুড়িলে মেলাগামী বিআরটিসি বাসের টিকিটের জন্য মানুষজনের লম্বা সারি। বাস থেকে নেমে মেলা প্রাঙ্গণে পৌঁছাতেই দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের আরও কয়েকগুণ ভিড় দেখা যায়।

মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে দেখা যায়, দল বেঁধে দর্শনার্থীরা প্রবেশ টিকিট কেটে আসছেন। মেলায় দর্শনার্থীদের এমন আগমনে বিক্রেতাদের মুখে উচ্ছ্বাসের হাসি। মেলায় আসা ক্রেতারা বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে চাহিদা মতো নিজের কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি কেনার চেষ্টা করছেন। আবার অনেকে কেনাকাটা শেষ করে স্টলে বাইরে বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। মেলায় আসা ক্রেতা-দর্শনার্থীদের কেউ কেউ মাস্ক পরলেও অনেককেই মাস্কবিহীন ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। বিক্রেতাদের কারও কারও মুখেও ছিল না মাস্ক।

আগত দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেলার আজ ২১ দিন চলছে। আর মাত্র ১০ দিন বাকি রয়েছে, এরপর মেলা সমাপ্ত। শেষ সময়ে বিভিন্ন স্টলে নানা ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় অনেকেই মেলায় ঘুরতে এসেছেন।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে আসা আঞ্জুমান রোজী বলেন, মেলায় শুরুর দিকে এক দিন এসেছিলাম। তখন এত মানুষ ছিল না। কিন্তু আজ প্রচুর মানুষ। আমি এসেছি কিছু ক্রোকারিজ পণ্য কিনতে। কিছু কিনেছি, আরও কিছু কিনব ছাড় দেখে।

রাজধানীর মিরপুর থেকে মো. জামিল পরিবার নিয়ে বাণিজ্য মেলায় এসেছেন। তিনি বলেন, মেলা শহর থেকে অনেক দূরে হওয়ায় যাতায়াতের অনেক কষ্ট। প্রতি বছরই মেলায় একাধিকবার গিয়েছি এবং কেনাকাটা করেছি। একবারও না আসলে কেমন লাগছিল নিজের কাছে, তাই কষ্ট হলেও এসেছি মেলায় ঘুরে দেখতে। যদি পছন্দ হয় এবং দামে সাশ্রয়ী হয় তাহলে কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনব।

অন্যদিকে মেলায় দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখে খুশি বিক্রেতারা। মেলার শেষ সময়ে ক্রেতাদের এমনই ভিড় প্রত্যাশা করছিলেন তারা। এদিকে মেলায় আসা ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে কাপড়, প্রসাধনী ও ক্রোকারিজ পণ্যের স্টলগুলোতে।

নীলকান্তা প্রসাধনী স্টলের মালিক রোকসানা নীলা বলেন, মেলার শুরুর পর থেকে আজ সর্বোচ্চ ক্রেতা দেখছি। ভালো কেনা-বেচা হচ্ছে। এত মানুষের মধ্যে ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থীর সংখ্যাই বেশি।

ক্রোকারিজ পণ্যের স্টল নিকাইয়ের এক বিক্রয়কর্মী বলেন, আজ অনেক সেল হচ্ছে। আমরা আশা করছি আগামী কয়েক দিন এভাবেই সেল হবে। আজ দর্শনার্থী যেমন বেশি, তেমনি ক্রেতাও অনেক বেশি।

পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত এবারের বাণিজ্য মেলায় দেশি-বিদেশি মোট ২২৫টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে বিদেশি ছয়টি স্টল ও চারটি মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। বাকিগুলো দেশি স্টল।

এবারও প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন, জেনারেল স্টল, ফুডকোট, মিনি স্টল, প্রিমিয়ার স্টল ক্যাটাগরি রয়েছে। মিলনায়তনের ভেতরে নিজস্ব ক্যাফেটরিয়াও রয়েছে। সেখানে একসঙ্গে ৫০০ জন বসে খেতে পারেন।

প্রবেশমূল্য ও সময় : মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে। তবে ছুটির দিনে মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এবার প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। তবে কেউ যদি বিকাশে টিকিট নেন, তাদের জন্য ৫০ শতাংশ ছাড় রয়েছে।

এদিকে শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে তাতে একদিনে ১২ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে। নতুন করে ১১ হাজার ৪৩৪ জনের করোনা শনাক্ত হওয়ার কথাও জানানো হয়। শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। গত দুই সপ্তাহ যাবত এ হার বেশ দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এ অবস্থায় ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর জন্য সরকার জনসমাগম বন্ধসহ ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করেছে, তবে সেটা এখনও খুব ভালোভাবে কার্যকর হতে দেখা যায়নি। তার মধ্যেই শুক্রবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধসহ নতুন করে পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়েছে। এসব বিধিনিষেধের মধ্যেও বাণিজ্য মেলা চালু রাখায় ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।