চার বছরে ২০০ বেওয়ারিশ লাশ দাফন করলো বাতিঘর

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 25 June 2025, 7 বার পড়া হয়েছে,

নিজস্ব প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: বেওয়ারিশ, নামহীন, অচেনা- যাদের মৃত্যুর পরও কেউ দাবি করে না, যাদের জন্য কাঁদে না কোনো আপনজন, তাদের শেষ গন্তব্যে পৌঁছে দিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর’।

গত মঙ্গলবার (২৪ জুন) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পূর্ব মেড্ডাস্থ তিতাস নদী সংলগ্ন বেওয়ারিশ কবরস্থানে কসবা থেকে উদ্ধার হওয়া এক অজ্ঞাতনামা মহিলার (বয়স আনুমানিক ৫০ বছর) মরদেহ দাফনের মধ্য দিয়ে বাতিঘরের এ মানবিক কার্যক্রম ২০০তম সংখ্যায় পৌঁছালো।

গতকাল দাফন করা অজ্ঞাত মহিলার মরদেহ গত শুক্রবার (২০ জুন) সন্ধ্যায় কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের কসবা উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের দারোগাবাড়ি এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাঁশঝাড় থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় মরদেহটি বেওয়ারিশ ঘোষণা করে দাফনের দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর’কে।

এই দাফন কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘরের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ও বেওয়ারিশ লাশের অভিভাবক ইঞ্জিনিয়ার মো. আজহার উদ্দিন। তিনি বলেন, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আমার পারিবারিক ও ব্যক্তিগত অর্থায়নে ২০০টি বেওয়ারিশ লাশের দাফন করেছি। মহামারি করোনার সময় থেকেই আমরা এই কাজ শুরু করি। এখনও নিয়মিত জেলার বিভিন্ন থানা থেকে চিঠি পেয়ে লাশ দাফন করে থাকি।

তিনি আরও বলেন, টাকা-পয়সা নয়, সাহস আর মানবিকতা নিয়ে আমরা কাজ করি। প্রতিমাসে গড়ে ৫ থেকে ৭টি বেওয়ারিশ লাশ দাফন করি। কারও পরিচয় নেই বলে তাদের মর্যাদাহীন দাফন হতে পারে না। আমরা চেষ্টা করি যেন মর্যাদার সঙ্গে জানাজা, দোয়া ও কাফনসহ দাফনটা সম্পন্ন হয়।

তিনি আরও বলেন- বাতিঘরের সদস্যরা নিজেরা লাশ ধোয়ানো, কাফনের কাপড়, বাঁশ, চাটাই-দাড়ি, কবর কুড়া ও জানাজার নামাজ- সবকিছুই নিঃস্বার্থভাবে করে থাকেন। তাদের কবরস্থানে শায়িত অনেকেই সড়ক দুর্ঘটনা, ট্রেনে কাটা, পানিতে ডুবে, হত্যা বা আত্মহত্যার শিকার। অনেক সময় অর্ধগলিত বা দ্বিখণ্ডিত লাশ দাফন করতেও পিছপা হন না তারা।

কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল কাদের বলেন, মানবিক দায়িত্ববোধ থেকেই বাতিঘর বেওয়ারিশ লাশগুলো দাফন করে আসছে। আমাদের থানায় যখনই কোনো অজ্ঞাত মরদেহ আসে, তখনই বাতিঘরের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা অত্যন্ত যত্নসহকারে জানাজা পড়ে মরদেহ দাফন করে। এর আগে কেউ এমন কাজ করেনি।

বাতিঘরের এই নিঃস্বার্থ কাজ সমাজে নতুন আলো ছড়াচ্ছে। যেখানে মৃত্যুতে সবাই মুখ ফিরিয়ে নেয়, সেখানে বাতিঘর মৃত্যুর পরে একজন অচেনা মানুষকে শেষ সম্মান দেয়। এই মানবিক উদ্যোগ শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নয়, গোটা দেশের জন্যই এক অনন্য অনুপ্রেরণা।