মার্ক জাকারবার্গের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিরাপত্তা বা সমাজের বৃহত্তর কল্যাণের চেয়ে নাকি ব্যবসাটাই তার কাছে বড়। এজন্যই বাকস্বাধীনতার পক্ষের লোক হয়েও তিনি যোগসাজশ করেছেন ভিয়েতনাম সরকারের সাথে। সমাজতান্ত্রিক সরকার-শাসিত সেই দেশটির চাওয়া ছিল, সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড যেন ‘সেন্সর’ করে ফেসবুক। বার্ষিক এক বিলিয়ন দলার রাজস্ব আসে ভিয়েতনাম থেকে। তাই সেই বাজারটি খোয়াতে চাননি তিনি।
এ বছরের ৬ জানুয়ারি মার্কিন নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় আক্রান্ত হয় স্বয়ং হোয়াইট হাউজ! সে ঘটনায় প্রচুর গুজব, ‘হেইট স্পিচ’ ও ভুয়া খবর ছড়ানো হয় ফেসবুকে। সেসব কন্টেন্টগুলোকে সেন্সর করার ব্যাপারেও মার্ক জাকারবার্গের কাছ থেকে সবুজ সংকেত অনেক দেরিতে এসেছে বলে ক্ষুব্ধ কর্মীরা।
আবার ভারতে ফেসবুকের একটি পরীক্ষামূলক ‘ডামি’ অ্যাকাউন্ট থেকে মুসলিম-বিরোধী অসংখ্য গুজব ছড়ানো হয়, যা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত দৃশ্যমান ছিল। এদিকে ফেসবুকভুক্ত সামাজিক মাধ্যম ইনস্টাগ্রাম নিয়ে অভিযোগ, তা কিশোরীদের মননে ফেলছে নেতিবাচক প্রভাব। এমনকি ফেসবুকও নাকি ব্যবহৃত হচ্ছে মানবপাচারকারীদের প্রতারণার মাধ্যম হিসেবে!
এমনই গুরুতর বেশ কিছু অভিযোগ উঠে এসেছে ‘হুইসেলব্লোয়ার’ কাণ্ডে। ফেসবুকের সাবেক প্রোডাক্ট ম্যানেজার ফ্রান্সেস হাউগেন এসব তথ্য জমা দিয়েছিলেন মার্কিন সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে। তোলপাড় শুরু হয় গোটা বিশ্বে।
সেই ঘটনা পুরনো না হতেই এবার এসে গেছে ‘দ্য ফেসবুক পেপার্স’। যুক্তরাষ্ট্রের ১৭টি সংবাদ সংস্থা মিলে এই শিরোনামেই একটি সিরিজ প্রতিবেদন প্রকাশ শুরু করেছে। ফ্রান্সেস হাউগেনের প্রকাশিত সেসব তথ্যের সংশোধিত সংকলনের সাথে সেখানে আছে ফেসবুকের বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ বিতর্কিত তথ্যও।
এতসব বিতর্কেই নাজেহাল ফেসবুক। প্রতিষ্ঠানটির যোগাযোগ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট জন পিনে এক টুইট বার্তায় বলেছিলেন, ফেসবুক পেপার্স আসলে লাখ লাখ তথ্যের মধ্যে অল্প কিছু তথ্যের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উপস্থাপন। যা থেকে আসলে সঠিক উপসংহারে আসা সম্ভব নয়।
তিনি আরো জানান, শুধু নিরাপত্তা বিভাগেই কাজ করছে ফেসবুকের প্রায় ৪০ হাজার কর্মী। এছাড়াও ৭০-এর বেশি ভাষায় বিভিন্ন কনটেন্টকে রিভিউয়ের জন্য নিয়োজিত আছে প্রায় ১৫ হাজার কর্মী।
যদিও ফেসবুক বলছে, ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষার পেছনে ২০১৬ থেকে এখন পর্যন্ত তারা বিনিয়োগ করেছে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার। অথচ রাজস্ব নয়, কেবল লাভের অঙ্কই ফেসবুকের ২৯ বিলিয়ন ডলার, সেটিও শুধু গত বছরেই।
এদিকে ব্যবহারকারীদের আস্থাহীনতার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে কর্মী অসন্তোষও। ফেসবুকের ঊর্ধ্বতনদের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে খুশি নন অনেক কর্মী, এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে সিএনএন ও ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে।
এদিকে নিজেদের হারানো ইমেজ পুনরোদ্ধারে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ফেসবুক। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি তাদের ব্র্যান্ড নাম বদলের মতো সিদ্ধান্তও নিয়েছে। ভার্জের সূত্র ধরে রয়টার্স বলছে, ফেসবুকের সিইও মার্ক জাকারবার্গ আগামী ২৮ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক সম্মেলনে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলবেন।
নিজেদের ১৭ বছরের ইতিহাসে এতটা কোণঠাসা হয়নি ফেসবুক। ফলে প্রশ্ন উঠেছে এর ভবিষ্যত নিয়েই। তবে আশার কথা হলো, হুইসেলব্লোয়ার ফ্রান্সেস হাউগেন বা ফেসবুকের বিরুদ্ধে সরব কোনো সাবেক কর্মীই চান না, বন্ধ হয়ে যাক ফেসবুক। তারা মনে করেন, ফেসবুক চাইলেই তাদের ব্যাপারে তৈরি হওয়া সকল আস্থাহীনতা কাটিয়ে উঠতে পারবে।