মাদক পাচারে নারীর অংশগ্রহণ: কোন দিকে সমাজ? -রুদ্র মোহাম্মদ ইদ্রিস

অপরাধ, 24 October 2025, 51 বার পড়া হয়েছে,

শুক্রবার দুপুর সোয়া তিনটায় নবীনগর থানা পুলিশের একটি অভিযানকালে শহরের পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের পদ্মপাড়া এলাকায় ৩ জন মাদক কারবারীকে গ্রেফতার করা হয়। এই সময় তাদের হেফাজত থেকে ৪২০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, নগদ ১৩,২২০ টাকা ও ৭টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারের মধ্যে এক নারী রয়েছেন -৩০ বছরের আয়েশা বেগম, স্থানীয় ঠিকানা খাজানগর। এছাড়া দুদিন আগে মাদকসহ ভাইবোন ধরা পড়ে। এ ঘটনা গুলো প্রমাণ করে যে মাদক পাচারে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে বা নারীদের মাদক পাচারের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নিয়ন্ত্রক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা জরুরি। নারীর অংশগ্রহণের চিত্র: বাংলাদেশে মাদক পাচারে নারীর ভূমিকা আজো বিস্তারে রয়েছে। একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশই নারী হতে পারে। আরেক জরিপে দেখা গেছে, নারী মাদক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। উদাহরণস্বরূপ, নারী মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ২৮৫,০০০ জন যা পুরো মাদকাসক্ত জনসংখ্যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে রয়েছে।
এছাড়া নিয়ন্ত্রণকারীদের মতে, অনেক সময় সীমান্ত এলাকায় দারিদ্র্য ও সামাজিক দুর্বলতার কারণে নারীদের মাদক পার্ষদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
কারণবাহী দৃষ্টিকোণ: দারিদ্র্যতা ও অসচ্ছলতায় এখানে নারীকে অনৈতিক এই কাজে অংশগ্রহনে বাধ্য করে। অনেক নারী অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অবস্থানে থাকেন। আয় নেই বা সীমিত। এটি পাচারকারী সন্ত্রাসীদের কাছে সহজভাবে সুযোগ তৈরি করে।
শিক্ষাগত ও সামাজিক সুযোগের অভাব : শিক্ষাগত সুযোগ কম থাকলে বিকল্প জীবিকা সীমিত হয়। ফলে অবৈধ কাজে ঝোঁক বাড়তে পারে।
পরিবার ও পারিবারিক চাপে পড়ে বাধ্য প্রয়োজনে : কেউ স্বামী বা সন্তানকে রাখতে অর্থের অভাবে এমন কাজের পথে যেতে বাধ্য হতে পারেন।
যৌন ও সামাজিক শোষণ : নারী পাচার বা মাদকচক্রের শিকার হলে তারা সামাজিকভাবে আরও অসহায় হয়ে পড়েন।
নিয়ন্ত্রকের নজর comparatively কম : নারী পাচারকারীদের বা সামান্য ভূমিকার নারীদের উপর নজর অন্যদের তুলনায় কম পড়তে পারে। ফলে সন্ত্রাসীরা এই সুযোগ নেয়।
প্রভাব ও ঝুঁকি: নারীর সংশ্লিষ্টতা মাদক পাচারে সমাজের জন্য একটি বিপজ্জনক সংকেত। সামাজিক মূল্যবোধ বিপর্যস্ত হয়- নারীর এমন ভূমিকা পরিবার ও সম্প্রদায়ের বিশ্বাসকে দানবায়িত করে। নারীরা মাদকপাচার চক্রে প্রবেশ করলে তারা সাধারণত বড় রিস্কের মুখে পড়েন- আইনগত বিচার, সামাজিক বঞ্চনা ও নিরাপত্তাহীনতা বাড়তে থাকে।
নারীরা যদি পাচারের কাজে ব্যবহার হয়, তাহলে অপরাধীদের অভিযোগ থেকে সমাজের প্রতিরোধ শক্তি কমে যায়।
মাদকচক্রের মধ্যে নারীর আগমন পরবর্তী গবেষণার বিষয় রয়েছে, কারণ এটি শুধু ‘মাদক ব্যবহার’ নয়, ‘মাদক পাচার’ সংক্রান্ত বিষয়।
সমাজ ও প্রশাসনের জন্য কিছু সুপারিশ দেওয়া যায়: সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচারণা বাড়ানো : বিশেষ করে নারীদের জন্য, যাতে তারা মাদক পাচারে ব্যবহার হওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হন।
কী করা যেতে পারে?
নারীর জন্য প্রশিক্ষণ, চাকরির সুযোগ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন।
নারীর নির্যাতন ও হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং পাচারকারী চক্র নারীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে পাচারে ব্যবহার করে, সেটা প্রতিহত করা জরুরি।
সমাজকর্মী, নারী সংগঠন ও স্থানীয় প্রশাসন একসাথে কাজ করতে পারে, নারীদের জন্য নিরাপত্তা ও সহায়তার পরিবেশ তৈরি করতে। নারীর মাদক পাচারে অংশগ্রহণের প্রকৃতি, মাত্রা ও কারণ সম্পর্কে নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করা দরকার। এটি নীতি নির্ধারণে সহায়ক হবে।