নিউজ ডেস্ক : একটি মামলা দায়েরকে কেন্দ্র করে আইনজীবী সমিতির নেতাসহ একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে বিচারকের অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগের পর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালত পাড়া। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে আইনজীবী সমিতি।
বুধবার (০৪ জানুয়ারি) ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের কর্মচারিরা, আইনজীবী সমিতি ও আইনজীবী সহকারী সমিতির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে সারাদিন উত্তপ্ত ছিল আদালত পাড়া। সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্যে কর্মবিরতিতে গিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের কর্মচারিরা। বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীদের অসৌজন্যমূলক আচরণ, বিচারিক কাজে হস্তক্ষেপ, কর্মচারিদের মারধর, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ এনে বিচার বিভাগীয় কর্মচারি অ্যাসোসিয়েশন এই কর্মসূচি দিয়েছে। একইসঙ্গে জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গণে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন তারা। তারা আদালতে বিচারিক কক্ষে তালা বন্ধ করে কাজ বন্ধ রেখেছে।
এই কর্মসূচির প্রেক্ষিতে বেলা ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করে আইনজীবীরা। এসময় আইনজীবীর সমিতির নেতারা জেলা ও দায়রা জজের অপসারণ দাবি করে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকেন। পাশাপাশি যারা আদালতের বিচারিক কক্ষে তালা দিয়েছে, তাদের বিচার দাবি করেন। এরপরই ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সহকারী (মুহুরী) সমিতির নেতাদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। বিক্ষোভ মিছিলে আদালতে নাজির, পেশকার ও বেঞ্চ সহকারীদের ঘুষ বন্ধের দাবি জানিয়ে আইনজীবী সমিতির আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন। এসব ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালত পাড়া।
বিচার বিভাগীয় কর্মচারি অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আইয়ুব আলী ও সদস্য উজ্জ্বল ইসলাম জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের তিনশত কর্মচারি আজ থেকে একযোগে কর্মবিরতিতে আছি। একটি মামলার ঘটনায় বিচারকের সঙ্গে শুধু নয়, কিছু আইনজীবী কর্মচারিদের সঙ্গে প্রতিনিয়তই বাজে ব্যবহার করে আসছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সহকারী (মুহুরী) সমিতির সভাপতি রিয়াজুল করিম খান (খায়েশ) বলেন, আমরা আইনজীবী সহকারী হিসেবে আদালতে সাধারণ মানুষের পক্ষে মামলা মুকদ্দমা চালাই। আমরা আদালতে হাজিরা, পিটিশন ও বিভিন্ন তদবির করি। কিন্তু এসব করতে গেলে অফিস সহকারী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে ঘুষ চায়, তা আর আমরা দিব না। ঘুষের বিরুদ্ধে আমাদের আজকের আন্দোলন। আমরা আইনজীবীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মফিজুর রহমান বাবুল বলেন, চাকুরির বিধিবিধান লঙ্ঘন করে জেলা জজ আদালতের কর্মচারিদের নিয়ে বৈঠক করে উস্কে দিয়েছেন। তারা আজ কর্মবিরতি করে মানবন্ধন করেছে। চাকুরী বিধিবিধান লঙ্ঘন করায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। এখানে যারা চাকুরী করেন তাদের অধিকাংশ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার, তাদের এই জেলা থেকে অন্যত্র অপসারিত করা হোক।
তিনি আরও বলেন, এই সংকটের কারণ জেলা জজ। তিনি যদি শুরুতেই ব্যবস্থা নিতেন তাহলে এই পরিস্থিতি হতো না। তিনি আইন মন্ত্রণালয়ের আমাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছেন। ফলে আরও খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের কিছু দাবি রয়েছে। তা হচ্ছে-আদালতে রেইনশেড তৈরি করতে হবে, দূর্ণীতিবাজ নাজির মুমিনের অপসারণ এবং সকল দায়দায়িত্ব মাথায় নিয়ে জেলা জজের অপসারণ চাই। পাশাপাশি পেশকার থেকে পিয়ন পর্যন্ত যারা আমাদের আইনজীবী সহকারীর কাছ থেকে ঘুষ নেয়, তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। আইনজীবী বার এবং বেঞ্চের মধ্যে সুসম্পর্ক ফিরিয়ে আনতে উচ্চ মহলের পদক্ষেপের জন্য আবেদন জানাই।
আদালতের একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মূলত একটি মামলা দায়েরকে কেন্দ্র করে আইনজীবী সমিতির নেতাসহ একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের বিতন্ডা হয়। সময় পার হয়ে যাওয়ায় নিয়ম অনুসারে মামলাটি নিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ক্ষিপ্ত হন আইনজীবীরা। এ ঘটনায় গত ২৬ ডিসেম্বর সভা করে ১ জানুয়ারি থেকে সংশ্লিষ্ট আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতি। এরপর থেকেই মূলত এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।