বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত মাত্র এক বছরের মধ্যেই শিশুদের হত্যা ও আক্রমণের ঘটনাগুলো ঘটিয়েছিলেন লুসি। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে শিশুদের ইনজেকশনে বাতাস ঢুকিয়ে দিতেন এবং জোর করে দুধ পান করানো ছাড়াও দুই নবজাতকের শরীরে ইনসুলিন আকারে মাধ্যমে বিষ প্রয়োগ করতেন।
একের পর এক শিশু হত্যার এই বিষয়টি বিশ্বজুড়ে নাড়া দিয়েছে। অনেকেই শিশুগুলোকে কী কারণে লুসি হত্যা করেছেন তা জানতে উদ্গ্রীব হয়েছেন। তবে লুসির বিচার নিয়ে খবর প্রকাশে ইতিপূর্বে আদালতের নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে লুসিকে দোষী সাব্যস্ত করার পর ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো তাকে নিয়ে খবর প্রকাশ করছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, সাত শিশুকে হত্যা করা ছাড়াও আরও ছয় শিশুকে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন লুসি। তিনি এসব কেন করেছিলেন সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কোনো কিছু জানা যায়নি। তবে এসব হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য কিছু কারণ আদালতে তুলে ধরেছেন আইনজীবীরা। এর মধ্যে এক চিকিৎসকের প্রতি তাঁর দুর্বলতা ও গোপন সম্পর্কের কথাও প্রকাশ্যে এনেছেন তাঁরা।
শুনানিতে আইনজীবীরা জানিয়েছেন, হাসপাতালটিতে কোনো শিশুর অবস্থা গুরুতর হলেই ওই চিকিৎসককে চিকিৎসার জন্য ডাকা হতো। তাই লুসি হয়তো শিশুদের ওপর হামলা করে গুরুতর অসুস্থ বানিয়ে ওই চিকিৎসককে কাছে পেতে চাইতেন।
আদালতের নথিতে উল্লেখ আছে, লুসি এবং সেই চিকিৎসক হাসপাতালের বাইরেও বেশ কয়েকবার দেখা করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে হওয়া কথোপকথনগুলো ভালোবাসার ইমোজিতে ভরা।
তবে চিকিৎসকের সঙ্গে গোপন সম্পর্কের বিষয়টিকে অস্বীকার করেছেন লুসি লেটবি।
আইনজীবীরা দাবি করেছেন, মানসিকভাবে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিলেন লুসি। শিশুদের ক্ষতি করে তিনি হয়তো নিজেকে সৃষ্টিকর্তার মতো শক্তিমান কোনো কিছু ভাবতেন। যা ঘটছিল তা থেকে আনন্দ পাচ্ছিলেন। শিশুদের আঘাত করে তিনি হয়তো পৈশাচিক কোনো আনন্দ পেতেন। আর আঘাতের পর কী ঘটতে যাচ্ছে—তা অনুমান এবং মিলিয়ে দেখতেন তিনি।
জানা গেছে, লুসি লেটবিকে দুইবার গ্রেপ্তার করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। ২০২০ সালে তৃতীয়বার গ্রেপ্তারের পর তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করা হয়। তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে হাসপাতালের কিছু কাগজপত্র ও হাতে লেখা একটি চিরকুটও পায় পুলিশ। চিরকুটে লেখা ছিল–‘আমি খুব খারাপ, আমি এটা করেছি।’
এ ছাড়াও লুসি লেটবির লেখা কিছু কাগজপত্রও উপস্থাপন করা হয় আদালতে। একটি কাগজে লেখা ছিল, ‘আমি তাদের হত্যা করেছি; কারণ, তাদের পরিচর্যার কাজে আমি অতটা ভালো নই।
আরেকটি কাগজে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি কখনোই সন্তান নেব না, বিয়েও করব না। পরিবার কেমন, তা আমি কখনোই জানতে পারব না।’
এদিকে বিচারকদের কাছে লুসি দাবি করেন, যেসব শিশুর কম যত্নের প্রয়োজন হতো, তাদের পরিচর্যা করে তিনি কোনো আনন্দ পেতেন না। শিশুরা বেশি অসুস্থ থাকলেও তিনি কাজে মনোযোগ দিতে পারতেন।