নিজস্ব প্রতিবেদক : অ্যাম্বুলেন্সের হৃদয়ফুঁড়া বিউগল বাজিয়ে হাসপাতালের দরজা পর্যন্ত আসাই সার, মিলছে না বহুল আকাঙ্ক্ষার ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের একটি সিট।
সিলেটে একটি আইসিইউ বেডের জন্য করোনাক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের স্বজনদের রীতিমতো মাতম চলছে। সিলেটে করোনা ডেডিকেটেড ১০০ শয্যার সরকারি চিকিৎসালয় শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাসহ সিলেটের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের গত কয়েকদিনের চিত্রই এমন।
বুধবার দুপুরে শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের সামনে দিশেহারা হয়ে হাঁটতে দেখা যায় সিলেটের বালাগঞ্জের মোস্তফা আহমদ নামের এক যুবককে। তিনি তার সত্তর বছর বয়েসী মাকে নিয়ে এসেছেন এ হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভর্তি করাতে। বুধবার তার মায়ের করোনা রোগ শনাক্ত হয়। বুধবার সকাল পর্যন্ত নগরীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসারত ছিলেন। কিন্তু করোনা পজিটিভ আসার পর এবং শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আর সেখানে রাখেননি। পরামর্শ দেন শামসুদ্দিনে ভর্তি করার। সেখান থেকে বেরিয়ে মোস্তফা তার মাকে ভর্তি করাতে বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে নিয়ে আসেন শামসুদ্দিনে। এসেই শুনতে পারেন দুঃসংবাদ, এখানেও খালি নেই আইসিইউ বেড।
আলাপকালে কান্নায় ভেঙে পড়েন মোস্তফা। তার বৃদ্ধা মায়ের জন্য দোয়া চেয়ে বলেন, আমার মাকে বাঁচাতে পারবো কি-না বুঝতে পারছি না। চরম অসহায় বোধ করছি। আরেকবার শেষ চেষ্টা করে দেখবে এখানে (শামসুদ্দিনে) কোনো আইসিইউ বেড পাই কি-না।মোস্তফার সঙ্গে কথা বলার সময় দেখা যায়, শামসুদ্দিন হাসপাতালের সামনে গাড়িতেই মাকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিচ্ছেন তিনি।
এভাবে শুধু মোস্তফা নয়, প্রতি ঘণ্টায় অন্তত: ২-৩টি করোনা আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীর স্বজনরা আইসিইউ বেডের চাহিদা নিয়ে শামসুদ্দিন হাসপাতাল প্রাঙ্গনে আসছেন এবং কাঙ্ক্ষিত সিট না পেয়ে নিজের প্রিয়জন নিয়ে কান্নাভেজা চোখে অন্য হাসপাতালের দিকে ছুটছেন দিশাহারা হয়ে।
জানা গেছে, একই চিত্র সিলেটে করোনা চিকিৎসা দেয়া বেসরকারি হাসাপাতাল নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পার্ক ভিউ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মাউন্ড এডোরা হসপিটাল ও নুরজাহান হসপিটালে।
সিলেটে শঙ্কটাপন্ন করোনা রোগীদের জীবন বাঁচানোর শেষ অবলম্বন হাসপাতালের আইসিইউ বেডের জন্য কতটা হাহাকার তা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে সবখানে।
শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দ নাফি মাহদি বুধবার (৭ জুলাই) বিকালে বলেন, শামসুদ্দিনে বর্তমানে রোগীর এত চাপ যে- করোনা ইউনিটের ১০০ বেডের বাইরে আরও ৩টি বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। এই ১০৩টি-ই এখন পরিপূর্ণ। আর আইসিইউ-এর ১৬টি বেড তো গত ৪ দিন থেকেই পরিপূর্ণ। প্রতিদিন ২-৩ জন মুমূর্ষু রোগীকে ফেরত পাঠাতে হচ্ছে। বিষয়টি আমাদেরকেই পীড়া দিচ্ছে।
তিনি বলেন, গত ৩/৪ দিন থেকে সারাদিনে করোনা ইউনিটে ভর্তি হতে আসা অন্তত: ১৫ জন রোগীকে ফেরত পাঠাতে হচ্ছে।