আজ দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে নিহতের স্বজনেরা ঘটনা স্থলে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। নিহতের স্বজনদের দাবী তাকে হত্যার পর লাশ পুকুরে ফেলে রাখা হয়েছে।
সিপা জেলা শহরের গভ. মডেল গার্লস হাই স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। সে সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের বিরামপুর গ্রামের শাহিন মিয়ার মেয়ে। তারা পরিবারসহ জেলা শহরের মুন্সেফপাড়ায় বাসা ভাড়া করে বসবাস করতেন।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিপার টিউশন শিক্ষক ও প্রেমিক বাইজিদ সরকারকে (২৬) আটক করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে হত্যার ঘটনার সাথে জরিত সন্দেহে এক যুবকে উত্তম মাধ্যম দিয়ে পুলিশে সোর্পদ করেছে এলাকাবাসী।
আটক বাইজিদ সরকার জেলার কসবা উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়নের খিদিরপুরের মুখলেছুর রহমানের ছেলে। তিনি জেলা শহরের মুন্সেফপাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে মাস্টার্স শেষবর্ষে অধ্যয়নরত এবং শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ান।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাইজিদ সরকার মুন্সেফপাড়ায় বিভিন্ন বাসাবাড়িতে টিউশনি করান। সিপাকেও তার বাসায় গিয়ে গত তিন বছর ধরে পড়াচ্ছিলেন বাইজিদ। এরই মধ্যে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্প্রতি সিপা বিয়ের জন্যে বাইজিদকে চাপ দেয়। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মুন্সেফ পাড়ায় ভাড়া বাসায় পরিবারের সাথে বসবাস করতেন সেনাবাহিনীর অবসর প্রাপ্ত সার্জেন শাহানূর ইসলামের কন্যা ও গভ:মডেল গালর্স উচ্চ বিদ্যালয়ের এএসসি পরিক্ষার্থী আশিফা জাহান শিপা । গতকাল দুপুরে প্রাইভেট শিক্ষকের বাসায় যারার কথা বলে সে বাড়ী থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। পরে স্বজনেরা অনেক খোঁজাখুজি করেও তার কোনো সন্ধ্যান পাননি। পরে আজ রোববার দুপুরে শহরের অন্নদা উচ্চ বিদ্যালয়ের বোর্ডিং মাঠের পাশের পুকুরে রক্তাক্ত অবস্থায় তার লাশ ভেসে উঠলে,“ স্থানীয়রা স্বজনদের খবরদেয়।পরে স্বজনেরা ঘটনা স্থলে এসে তার লাশ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। এসময় তারা এ ঘটনার জন্যে শিক্ষার্থী শিপার পরিবারের সদস্যরা পূর্বের পরিচিত গৃহশিক্ষক বায়েজিদ মিয়াকে দায়িকরেন। তারা জানান সে প্রায়শই তাকে নিয়ে আজেবাজে মন্তব্যকরতো। তারা দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী করেন।
নিহত আশিফা জাহার শিপার চাচা সবুজ মিয়া বলেন, গতকাল দুপুরে প্রাইভেট শিক্ষকের বাসায় যারার কথা বলে সে বাড়ী থেকে বের হয়। এরপর থেকে শিপার কোনো খোজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তার গৃহশিক্ষক বায়েজিদ মিয়ার কথা বলার পর তার কথাবার্তায় আমাদের সন্দেহ জাগে। বায়েজিদ পুকুর পাড়ের আশে পাশে বার বার আসতে বলে আমাদের। আমরা তখন বায়েজিদকে বলেছিলাম যদি আমাদের মেয়ের সাথে তার কোনো সর্ম্পক থাকে তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিব। এর কিছুক্ষণ পর খবর পাই বোডিং মাঠের পাশে একটি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এখানে এসে দেখি আমার ভাতিজির লাশ। আমরা মনে করি আমার ভাতিজিকে বায়েজিদই হত্যা করে পানিতে ফেলে দিয়েছে। আমরা এ ঘটনার বিচার দাবী করছি।
এদিকে নিহত শিক্ষার্থী শিাপার সহপাঠিরা জানান,“ সে গত কয়েকদিন ধরে মানসিক যন্ত্রনায় ভোগ ছিলেন,“তবে বিষয়টি তাদের কাছে সে শেয়ার করেননি। নিহত শিপার সহপাঠী গভ: মডেল গালস্ হাই স্কুলের জানিয়া আক্তার বলেন, সে বেশ কয়েকদিন ধরেই অন্তমনস্ক ছিলো। কারো কাছে কিছু বলত না।
মারিয়া আক্তার নামে আরেক সহপাঠী বলেন, সে ক্লাসে বেশ কয়েকদিন ধরেই অন্যরকম ছিলো। মানসিক যন্ত্রনায় ভোগ ছিল সে।আমরা জানার চেষ্টা করলেও কারো কাছেই কিছু বলেনি শিপা। আজকে সকালে জানতে পারি পুকুর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার দাবী করছি।
বাইজিদ সরকার বলেন, ‘সিপার সঙ্গে আমার প্রায় তিন বছরের প্রেমের সম্পর্ক। কয়েকদিন আগে তার পরিবারের সদস্যরা আমাদের দুজনকে রাস্তায় একসঙ্গে দেখে ফেলেন। এরপর থেকে সে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। গতকাল রাত আড়াইটার দিকে সিপা আমাকে কল করে বিয়ের কথা বলে। আমি তখন তাকে বলেছি এই মুহূর্তে আমার বিয়ে করা সম্ভব না। তখন সে বলে আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছি। এরপর আর তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল ইসলাম বলেন, মরদেহ ভেসে ওঠার খবরে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। মেয়েটির প্রেমিকক বাইজিদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর গভ:মডেল গালর্স উচ্চ বিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগ থেকে এএসসি পরিক্ষায় অংশ গ্রহন করার কথা ছিল মেধাবী শিক্ষার্থী আশিফা জাহান শিপার।