ভারত থেকে ফিরলেন মানসিক ভারসাম্যহীন পাঁচ বাংলাদেশি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 1 April 2022, 229 বার পড়া হয়েছে,

৭ বছর আগে অন্তু দেব তার পিতা সন্তোষ দেবকে হারিয়েছেন। অন্তু এখন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সাত বছর পর বাবাকে ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে অন্তু দেব।

অন্তু বলে, মানসিক ভারসাম্যহীন হারিয়ে যাওয়া বাবাকে ফিরে পাওয়ার আশা তার পরিবার ছেড়েই দিয়েছিল। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের সহযোগিতায় শুক্রবার দুপুরে বাবাকে ফিরে পান।

সাত বছর আগে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপেজলার নিজ বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলেন সন্তোষ দেব। তিনি ওই এলাকার মনিন্দ্র লাল দেবের ছেলে।

অপরদিকে এক যুগ আগে হারিয়ে যায় পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার কোড়ালিয়া গ্রামের রোজিনা বেগম। তাকে ফিরে পায় তার ভাই শাহাবুদ্দিন। সন্তোষ দেব কিংবা রোজিনার মতো কুমিল্লার চান্দিনা উপেজলার কুলসুম বেগমসহ আরও দুই বাংলাদেশি দেশে ফিরে পেল আপনালয়।

শুক্রবার দুপুরে আখাউড়া-আগরতলা সীমান্ত দিয়ে ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনার ও আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজ নিজ পরিবারের কাছে তাদের হস্তান্তর করেন।

নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায় আব্দুল খালেকের ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন বিজয় চুনু আট বছর আগে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। তার স্বজন জাহাঙ্গীর আলী ও আব্বাস উদ্দিন জানান, নারায়ণগঞ্জ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের ত্রিপুরায় কীভাবে পৌঁছাল সেটা নিয়ে তারাও আশ্চর্য।

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর পুরাদহ গ্রামের মনির বেপারীর মা ময়না বেগম ৯ বছর আগে হঠাৎ করে একদিন বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। দুই বছর আগে স্থানীয় থানার মাধ্যমে জানতে পারেন আগরতলায় মানসিক হাসপাতালে ময়না চিকিৎসাধীন আছেন।

তার ছেলে মনির জানান, ৯ বছর আগ থেকেই সে মাকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। মানসিক ভারসাম্যহীন মাকে হারিয়ে অসহায় স্বজনরা। পরে পুলিশ খুঁজ নিতে বাড়িতে গেলে পরিবার জানতে পারে আগরতলায় আছেন তার মা।

কুমিল্লার চান্দিনা উপেজলার নাজিরপুর গ্রামের লিটন সরকারের স্ত্রী কুলসুম বেগম। তাকেও ফিরে পায় পরিবার। কীভাবে ভারত পৌঁছল জানাতে পারেনি নিতে আসা পরিবারের কেউ। নিখোঁজ স্বজনদের কাছে পাওয়ার ব্যাকুলতা আর বাঁধভাঙা খুশি যেন কোনো বাধাই মানছিল না। সকাল থেকেই ত্রিপুরা সীমান্তের এপারে আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের নোম্যান্সল্যান্ডে অপেক্ষা করছিলেন পরিবারের স্বজনরা।

অপেক্ষার প্রহর ভেঙে দুপুর ঠিক দেড়টার দিকে ভারতের ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মদ অ্যাম্বুলেন্সে এক-এক করে বাংলাদেশিদের আখাউড়া-আগরতলা নোম্যান্সল্যান্ডে নিয়ে আসেন। নোম্যান্সল্যান্ডে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমানা আক্তারের মাধ্যমে নিজ পরিবারের কাছে তাদের স্বজনদের তুলে দেন। এ সময় সুস্থ হয়ে আসায় স্বজনরা পরম আদরে বুকে টেনে নেন তাদের। এ সময় স্বজনদের আনন্দ অশ্রু সবার চোখে ঝরতে দেখা গেছে।

আখাউড়া-আগরতলা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট সীমান্তের শূন্যরেখায় আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি রেজাউল হক চৌধুরী, কমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (স্থানীয়) মো. এসএম আসাদুজ্জামান, আখাউড়া উপজেলা সহকারী কমিশন (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম, আগরতলা মর্ডান সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালের ডা. উদয়ন মজুমদার, আখাউড়া ইমিগ্রেশন ইনচার্জ আবু বকর, সহকারী উপ-পুলিশ পরিদর্শক মুর্শেদুল হক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।