উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও ঘন মেঘের কারণে মঙ্গলবার থেকে বরিশালে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো ভারী বৃষ্টি কখনো হালকা। সঙ্গে দমকা হাওয়া। একদিকে লকডাউন অপরদিকে শ্রাবণের টানা বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। নগরীর ফার্মেসিগুলো ছাড়া তেমন কোনো দোকানপাটও খুলছে না। সড়কে মানুষ ও যানবাহনও ছিল নিতান্তই কম। বৃষ্টিতে ফাঁকা নগরীর আমতলা মোড় এলাকায় বুধবার ভ্যানে করে কলা বেচতে দেখা গেল ১২ বছরের এক শিশুকে।
বুধবার বিকালে ওই শিশুর কাছে গিয়ে কলার দাম জিজ্ঞেস করতেই পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী ভঙ্গিতে উত্তর দিল, ‘হালি ৩০ টাহা, তিন হালি নেলে ৮০ টাহা রাখমু,কম অইবে না’। বৃষ্টিতে ভিজেই কলা বিক্রি করছিল সে।
কলা বিক্রেতা ওই শিশুটির নাম-ঠিকানা এবং দুর্যোগের মধ্যে কলা বেচতে আসার কারণ জানতে চাইলে তার উত্তর,‘মোর নাম আল-রাফি। ক্লাস থ্রিতে পড়ি। করোনা আওনের পর দিয়া ল্যাহাপড়া বন্ধ। আব্বার নাম জলিল খান। থাহি কাজীপাড়া রিফুজি (রিফিউজি) কলোনীতে। দুইদিন ধইরা আব্বার জ্বর, হেইতে ভ্যান লইয়া রাস্তায় নামছি। ঘরে মা আর একটা বুইন আছে। কলাগুলা ব্যাচতে না পারলে খামু কি?’
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত এখন বরিশাল। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে- পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এই কঠিন পরিস্থিতিতেও কঠোর লকডাউন দিয়েও ঘরে আটকে রাখা যাচ্ছে না খেটে খাওয়া মানুষকে। ফলে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর শিশুরাও পড়াশোনা ছেড়ে আয়-রোজগারে পথে নেমেছে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রিফাত ফেরদৌস বলেন, মহামারি পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে ভঙ্গুর অবস্থায় পড়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের লোকেরা। সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষকে ঘরে রাখতে বাধ্য হচ্ছে সরকার। অন্যদিকে প্রাণঘাতি করোনা থেকে কোমলপ্রাণ শিশুদের রক্ষা করতে দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ রয়েছে। এই বন্ধে অনেক শিক্ষার্থী পরিবারের প্রয়োজনে পড়াশোনা ছেড়ে নানা কাজ-কর্মে যুক্ত হচ্ছে। এই বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটেছে আল-রাফি নামের শিশুর জীবনে।
অর্থনীতিবিদ রিফাত ফেরদৌস আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমজীবী মানুষের দায়িত্ব সরকারের নেয়া ছাড়া বিকল্প উপায় নেই। এক্ষেত্রে অর্থনীতি ও শিক্ষাখাত নিয়ে প্রচলিত ভাবনা থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া রোধে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া দরিদ্র পরিবারের তালিকা করে তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
সূত্র – Our Bangladesh