কেমন আছেন যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশীরা

প্রবাসী খবর, 19 January 2023, 251 বার পড়া হয়েছে,

একজন মানুষ কেন নিজের দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমায়? জন্ম মুহূর্ত থেকে দিনের পর দিন একটু একটু করে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা পারিবারিক ও সামাজিক আচার, সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক, আবহাওয়া ও অন্যান্য উপকরণের সঙ্গে শক্তপোক্তভাবে লালিত হওয়া সুঠাম দেহ আর মনকে কেন একজন মানুষ খুব আপন আর প্রিয় মৃত্তিকা থেকে সমূলে উপড়ে নিয়ে শিকড় ছড়ায় ভিন্ন দেশে, ভিন্ন আবহে, ভিন্ন বাতাসে? কিছু প্রশ্নের জবাব একটি মাত্র উত্তরে দেয়া যায় না। শত আঙ্গিকে শত প্রসঙ্গের অবতারণায় মিলেমিশে তৈরি হয় অনেকগুলো উত্তররেখা।

যুক্তরাজ্যে অভিবাসী সম্প্রদায়ের ভেতর অন্যতম বৃহত্তম সংখ্যায় আছে ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের অবস্থান। ইংল্যান্ডের নতুন ঘরবাড়িগুলো সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে তৈরি হয়ে থাকে। গোটা ইংল্যান্ডে মোটামুটি একই ধরনের ঘরবাড়ি দেখা যায়। ফ্ল্যাট ছাড়া বাড়িগুলো তৈরি হয় তিনটি ধারায়। টেরাস, সেমি ডিটাচড ও ডিটাচড হাউজ। অনেকগুলো বাড়ি একটির সীমানা দেয়াল থেকেই আরেকটি বাড়ি, এমন করে ৩০-৪০টির মতো বাড়ি এক লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে, এদের বলা হয় টেরাস হাউজ।
আবার গায়ে গায়ে লাগিয়ে দুটি করে বাড়ি তৈরি করা হয়, এদের বলা হয় সেমি ডিটাচড হাউজ। এবং বাংলাদেশের মতো যে বাড়িগুলোর চারপাশের খোলা জায়গা থাকে তাকে বলা হয় ডিটাচড হাউজ। বর্ণনা এবং ব্যাখ্যা থেকে সহজেই অনুমেয়, দামের দিক থেকে ডিটাচড হাউজের মূল্য বেশি।

সিলেট ছাড়াও যুক্তরাজ্যে আছে বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার মানুষ। এর মধ্যে ঢাকা, কুমিল্লা, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, চট্টগ্রাম, যশোর উল্লেখযোগ্য। নন-সিলেটিদের ভেতর বেশির ভাগ মানুষ ইংল্যান্ডে আসে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে। অর্থাৎ তারা বাংলাদেশ থেকে ইউকের ভিসার আবেদন করে কোনো একটা কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে একটা কোনো সাবজেক্টে লেখাপড়া করার আগ্রহ প্রকাশ করে। ইংল্যান্ডে স্টুডেন্ট ভিসায় আগত ইন্টারন্যাশনাল ছাত্রছাত্রীরা টার্ম টাইমে কাজ করার অনুমতি পায় সপ্তাহে শুধু ২০ ঘণ্টা আর কলেজ বন্ধের সময় ফুলটাইম কাজ করা যায়। যদিও স্টুডেন্ট ভিসায় আসা ৯০ ভাগ মানুষ ইংল্যান্ডে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে চাকরির সন্ধানে নেমে পড়ে।

লন্ডনে আমাদের বাংলাদেশিরা পিছিয়ে নেই। বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা বাণিজ্য কাপড়ের দোকান হোটেল রেস্টুরেন্ট এমনকি স্বর্ণের ও ডায়মন্ডের ব্যবসা করছেন আমাদের বাংলাদেশী ভাইয়েরা। নিউ জেনারেশনের অনেকে ই উচ্চশিক্ষিত হয়েছে এবং হচ্ছে।

ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে লইয়ার ব্যারিস্টার এমনকি বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকরা প্রশংসা করিয়েছেন।

এমনই একজন গর্বিত মানুষ মান্নান আঙ্কেল যার সাথে কথা বলতে বলতে জানা যায় উনি তিন ছেলে এক মেয়ে ও নাতি-নাতকরসহ লন্ডনে এসেছেন এসে ওনার ছেলে মেয়ে ও নাতিনা করে অনেক ভালো অবস্থানে আছেন। উনার বড় নাতি জুবেলরহমান লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে ম্যাথমেটিক্সে মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারে আছেন এরপর ইয়াসিন আরাফাত তারা নামিদামি কলেজে পড়ালেখা করছেন।

এরপর কথা হয়েছে দেওয়ান মোশারফ সাহেবের সাথে উনার এক ছেলে মেহেদী হাসান ওয়েস্ট মিনিস্টার ইউনিভার্সিটি তে কম্পিউটার সাইন্স ( সিএসসি )তে পড়েন।

ধর্মীয় দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের কমিউনিটি বাংলাদেশ ইন্ডিয়া পাকিস্তান এর সম্মিলিত কমিটিতে ইস্ট লন্ডনে ফরেস্ট গেইট, গ্রীন স্ট্রিট, রমফর্ড রোডে অন্তত ৫০ টির মত ছোট বড় মসজিদ চোখে পড়ে। এসব ইসলামিক সেন্টার গুলাতে সন্ধ্যায় মক্তব চালু রয়েছে। তাছাড়াও দুটি ইন্ডিয়ান মন্দির চোখে পড়ে। হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিষ্টান সবাই যেন ভাই ভাই ধর্ম নিয়ে নেই কোন বাড়াবাড়ি হানাহানি সবাই যার যার মত যার যার ধর্ম পালন করছে। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের নব প্রজন্ম খুবই ভালো আছে লন্ডনে।