অবহেলায় পড়ে আছে পল্লীকবির বাড়ি

সারাদেশ, 1 January 2022, 350 বার পড়া হয়েছে,

ফরিদপুর প্রতিনিধি : পল্লীকবিজসীম উদদীন। যার লেখনীতে বাংলা সাহিত্যের ভান্ডার হয়েছে সমৃদ্ধ। সেই কবির বাড়িটি এখনো পড়ে আছে অবহেলায়। ফরিদপুরে অবস্থিত পল্লীকবি জসীম উদদীনের বাড়ি ঘিরে বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও তা কখনো বাস্তবে রূপ নেয়নি। অনেকটা অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে কবির বাড়ি ও তার ব্যবহৃত সব জিনিসপত্র।

যে কবির কবিতায় দোল খায় প্রকৃতি, নদী, মাঠ, বেঁদেপল্লীসহ অনুপম সব কাব্যগাঁথা, তিনি পল্লীকবিজসীম উদদীন। ১৯০৩ সালে পহেলা জানুয়ারি ফরিদপুর সদরের কৈজুরী ইউনিয়নের ডোমরাকান্দি গ্রামের মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন পল্লীকবি জসীম উদদীন। ‘নকশী কাঁথার মাঠ’, ‘সুজন বাদিয়ার ঘাট’ সহ কবির প্রতিটি রচনায় রয়েছে আধুনিক শিল্প চেতনার ছাপ।

এ কবির লেখনীর ভেতর দিয়ে ফুটে উঠেছে গ্রাম-বাংলার জীবন-জীবিকা, শ্রমজীবী, পেশাজীবীসহ সমাজের নানা স্তরের মানুষের কথা। ‘আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসূলপুরে যাও।’ অথবা ‘ওইখানে তোর দাদির কবর ডালিম গাছের তলে, তিরিশ বছর ভিজিয়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে,’ অথবা ‘ছুঁয়ে দাও আসি সুপ্তি জড়িমা, ফুটিছে রজনীগন্ধ্যা ক্লান্ত দেহের শান্তিদায়িনী, চিত্ততোষিনী সন্ধ্যা।’ এমনি শত শত কবিতা, গল্প, নাটক ও গানের মাধ্যমে পল্লী মানুষের দুঃখ-কষ্ট, হাসি-কান্না, আনন্দের কথা তুলে ধরে কবি পেয়েছিলেন পল্লীকবির উপাধি।

পল্লীকবিজসীম উদদীনের বাড়িটি ঘিরে প্রতি বছর আয়োজন করা হতো ‘জসীম পল্লী মেলা’। কিন্তু পাঁচ-ছয় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে জসীম মেলাও। মেলা বন্ধের কারণটিও অজানা। ফলে জসীম ভক্ত ও স্থানীয়রা বিষয়টি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। আবার দ্রুতই জসীম মেলা শুরু হবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

স্থানীয়দের ভাষ্য, পল্লীকবির বাড়িটি দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন অনেক মানুষ আসে এখানে। কিন্তু বাড়িটিতে এসে রীতিমতো হতাশ হন তারা। বাড়িটিতে কবির ব্যবহৃত জিনিসপত্র তেমন একটা নেই। নেই কোনো বসার স্থান। পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থাও নাজুক। শীত মৌসুমে বিভিন্ন জেলা থেকে ছাত্রছাত্রী ও লোকজন পিকনিক, শিক্ষাভ্রমণ করতে আসেন পল্লীকবির বাড়িতে। কিন্তু এখানে এসে রীতিমতো হতাশ হন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জসীম উদদীনের বাড়ি সংলগ্ন নির্মিত হয়েছে জসীম সংগ্রহশালা। সংগ্রহশালা নির্মাণ করাই যেন সার। সেটির কোনো প্রচার-প্রচারণা না থাকায় অনেকটা লোকশূন্য। লোকজন সেখানে যাচ্ছে না। তবে অযত্ন আর অবহেলা সবকিছু কাটিয়ে উঠে কবির বাড়িটিকে ঘিরে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে এমনটাই প্রত্যাশা কবির ভক্ত অনুরাগীদের।

কয়েক বছর ধরে শুধুমাত্র পহেলা জানুয়ারি পল্লীকবি জসীম উদদীনের জন্মবার্ষিকীতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিভিন্ন সংগঠন। কবির কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন সংগঠন। দোয়া মাহফিলের আয়োজনও করা হয়। এ ছাড়া বছরজুড়ে তেমন কোনো অনুষ্ঠান কর্মসূচি লক্ষ্য করা যায় না। অনেকটা নীরবে নিভৃতেই পেরিয়ে যায় পুরোটা বছর।

এলাকাবাসী বক্তার খান জানান, আমি জসীম ফাউন্ডেশনের শুরুর দিকের একজন সদস্য, কিন্তু এখন আছি কিনা জানি না। এখানে কোনো কিছুই নিয়ম কানুন মেনে হয় না। কোনো উন্নয়ন নেই। বাড়ির পেছনের দিকে মিউজিয়ামটা করার কারণে কারো দৃষ্টিতে আসে না। প্রচার-প্রচারণা নেই। এক সময়কার জমজমাট মেলাটিও বন্ধ। সব মিলিয়ে বলা চলে বড় অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে কবির বাড়িটি।

কবির প্রতিবেশী জাহিদ হোসেন জাগো নিউজকে জানান, সরকারের দিক থেকে কবির বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের তেমন কোনো ভূমিকা নেই। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় একটি ঝাড়ুদার নিয়োজিত আছে। সে সকাল-বিকেল একটু ঝাড়ু দেয়। এছাড়া অবহেলায় পড়ে আছে কবির বাড়িটি।

কবির বাড়িতে দায়িত্ব পালনরত ও আত্মীয় ফাহিম আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, কবির বাড়িটি অনেকটা অযত্নে আর অবহেলায় পড়ে আছে। আমরা সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা পাই না বললেই চলে। আমাদের নিজেদের উদ্যোগে কোনো মতো টিকিয়ে রেখেছি।

এ ব্যাপারে পৌরসভার দশ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সামছুল আরেফিন সাগর জাগো নিউজকে বলেন, কবির বাড়ি সংলগ্ন জসীম সংগ্রহশালাটি সরকারের আওতাভুক্ত। কিন্তু বাড়িটি এখনও সরকারের আওতায় নেওয়া হয়নি। তাছাড়া দীর্ঘদিন মেলাটিও বন্ধ। এছাড়াও কবির বাড়ির পাশে অম্বিকাপুর রেলওয়ে স্টেশন আছে কিন্তু ট্রেন থামে না। এলাকাবাসীর পক্ষে এখানে ট্রেন থামার পাশাপাশি জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাসে জসীম মেলা চালুর দাবি জানান তিনি।

এসব বিষয়ে পল্লীকবির ছেলে জামাল আনোয়ারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।

এ প্রসঙ্গে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, পল্লীকবির বাড়িটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে বিষয়টি পুরোপুরি এমন নয়। কবির বাড়িটিকে সরকারের আওতায় নিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের পরিকল্পনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও করোনা মহামারি বৃদ্ধি না হলে জসীম পল্লী মেলার আয়োজন করাসহ এলাকাবাসীর বিভিন্ন দাবির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে বলে তিনি জানান।