শেখ রাজেন : একদিকে নাজুক পরিস্থিতি অন্যদিকে যানবাহনের তীব্র চাপ। সবমিলিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ঢাকা-সিলেট এবং কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক। এর মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সাসহ তিন চাকার যান যেন মরার উপর খড়ার ঘা’য়ে পরিণত হয়ে উঠেছে। মহাসড়কে যারা এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করার কথা সেই হাইওয়ে পুলিশও যেন অনেকটাই হাঁফ ছেড়ে বসে আছেন।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৭৪ কিলোমিটার অংশে সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা-নসিমন-করিমন ও ভটভটিসহ তিন চাকার যান উচ্চ আদালতের এক রায়ে নিষিদ্ধ করা হলেও রহস্যজনক কারণে মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব যানবাহন। এতে প্রায়শই ঘটছে দুর্ঘটনা। মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হচ্ছে তরতাজা প্রাণ। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হতাহতদের স্বজনসহ হাইওয়ের পাশের বাসিন্দারা।
এদিকে সিএনজি অটোরিক্সা চালকেরা বলছেন, পুলিশকে ম্যানেজ করেই মহাসড়কে চলাচল করছেন তারা। এতে দূরপাল্লার বাস চালকদের ক্ষোভের শেষ নেই।
ইসলামপুর এলাকার সাইফ ইসলাম বলেন, এই অটোরিক্সা সিএনজি হাইওয়ে রোডে চলাচল বন্ধ করতে হবে। যদিও এই রোডে হাইকোর্ট এই ধরণের যান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছেন। কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর হতে হবে যেন এই ছোটছোট গাড়ি হাইওয়ে রোডে না চলতে পারে।
ইভান মিয়া নামের আরেকজন বলেন, এই ছোট গাড়ির কোনো নিরাপত্তা নেই। যারা চালক তাদেরও কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। উল্টাপাল্টা গাড়ি চালায় হাইওয়ে রোডে। ছোট এসব গাড়ির কারণে বড় গাড়িগুলো গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। যার কারণে প্রায়ই এই রোডে দুঘর্টনা ঘটে এবং মানুষ মারা যায়। অচিরেই এই গাড়িগুলো মহাসড়কে চলাচল বন্ধ না করলে দুর্ঘটনা আরও বাড়বে।
এদিকে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চালকেরা বলছেন, ‘হাইওয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করেই মহাসড়কে চলাচল করছেন তারা।’
অপরদিকে মহাসড়কে নিষিদ্ধ ঘোষিত তিনচাকার যানগুলোর বেপরোয়াপনার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন- গ্রীন লাইন, হানিফ, শ্যামলী ও এনা’র মতো দূরপাল্লার পরিবহনের চালকেরা।
ঢাকা থেকে সিলেটগামী হানিফ পরিবহনের চালক কামরুল হোসেন বলেন, এই রোডে সিএনজি অটোরিক্সার জন্য আমরা গাড়ি চালাতে পারি না। এই গাড়িগুলো হুট করে মহাসড়কের ডানে বামে চলে যায়। যার কারণে আমরা গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।
এদিকে ঢাকাগামী ইউনিক পরিবহনের চালক কামাল মিয়া জানান, প্রশাসনের কাছে এসব ছোট গাড়িগুলো বন্ধের নির্দেশনা থাকলেও তারা বিষয়টি দেখে না। এই ছোট গাড়িগুলোকে বাঁচাতে গিয়ে আমাদের বড় গাড়ি ক্ষতির সম্মুখিন হয়। যাত্রীদের জীবনও ঝুঁকিতে থাকে।
সিএনজি চালক কামরুল বলেন, আমরা কোনোরকমে মহাসড়কে চলাচল করছি। মাসিক টাকা দিয়েও আমাদের গাড়ি প্রায় হাইওয়ে রোড থেকে আটক করা হয়। হাইওয়ে পুলিশকে প্রতি মাসে অনেক টাকা দেওয়া হয়। তারপরেও আমরা নিশ্চিন্তভাবে গাড়ি চালাতে পারি না। তবুও টুকিটাকি যতটুকু সম্ভব চালানো হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা পুলিশের রয়েছে প্রায় ২৫ সদস্যের একটি ‘দালাল টিম’। তারা মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন থেকে প্রতিদিন/ সাপ্তাহিক ও মাসিক হারে টাকা উঠান।নিরাপদ সড়ক চাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সভাপতি মো. সাদেকুর রহমান বিডি২৪ লাইভকে বলেন, থ্রি হুইলারগুলো মহাসড়কে চলার কোনো অনুমতি নেই। সরকারও এগুলোকে নিষিদ্ধ করেছে মহাসড়কে। তবু হাইওয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করেই এই গাড়িগুলো মহাসড়কে চলাচল করছে। যার কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। বড়গুলোর ধাক্কায় প্রায়ই এসব ছোটগাড়ির যাত্রীরা মারা যাচ্ছেন। আমরা আশা করব প্রশাসন অতিদ্রুত এসব ছোটগাড়ি মহাসড়কে চলাচল বন্ধের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
খাটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুখেন্দু বসু বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশিত থ্রি হুইলার গাড়িগুলো মহাসড়কে বন্ধের ঘোষণা আছে। এ ব্যাপারে আমরা প্রতিনিয়তই মামলা দিচ্ছি। যদিও মহাসড়কের তুলনায় আমাদের জনবল অনেক কম। তবুও আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি। যাতে এই গাড়িগুলো মহাসড়কে চলাচল করতে না পারে। তবে দালাল টিম দিয়ে টাকা উঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কথা বলা যাবে না বলে জানান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বিডি২৪ লাইভকে বলেন, এ ব্যাপারে শীঘ্রই কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। চার লেনের কাজ শেষ হয়ে গেলে আমরা কঠোর অবস্থানে গিয়ে মহাসড়কে থ্রি হুইলার চলাচল বন্ধ করার জন্য কাজ করব।
প্রসঙ্গত, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৩৪ কিলোমিটার এবং কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ৪০ কিলোমিটার অংশে অন্তত ১৬ হাজার তিন চাকার যানবাহন চলাচল করছে। গত এক বছরে কেবল তিনচাকার যানের কারণে ঝড়েছে অর্ধশত প্রাণ।