ওস্তাদ আয়েদ আলী খাঁ এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ

সাহিত্য, 1 September 2023, 217 বার পড়া হয়েছে,

সঙ্গীতময়ী নদী তিতাস। বিশ্ববিশ্রæত সঙ্গীত সাধক সুর সম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ বলতেন আমি সঙ্গীতের সুর পেয়েছি তিতাস নদী থেকে। ভারতখ্যাত সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী শচীন দেব বর্মন (এস,ডি, বর্মন) ও বলতেন যে, তিনি সুরের সন্ধান পেয়েছেন তিতাস নদী থেকে। তিতাস নদীর তীর ঘেঁষে নবীনগর থানার অর্ন্তগত শিবপুর গ্রাম। এই শিবপুরেই রয়েছে বিশ্ববিশ্রæত সঙ্গীত পরিবার। এই পরিবারে সঙ্গীতের ধারা শুরু হয় সবদর হোসেন খাঁ থেকে। সবদর হোসেন খাঁর ছিল ৫ পুত্র। ছমির উদ্দিন খাঁ, আফতাব উদ্দিন খাঁ, আলাউদ্দিন খাঁ, নায়েব আলী খাঁ ও আয়েত আলী খাঁ। ১৮৮৪ সালের ২৬ এপ্রিল এই শিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ওস্তাদ আয়েত খাঁ। উল্লেখিত পিতা সবদর হোসেন খাঁ ও মাতার নাম সুন্দরী বেগম। দশ বছর বয়সে সঙ্গীত শিক্ষা শুরু করেন। প্রথম গুরু মেজো ভাই ফকির (তাপস) আফতাবউদ্দিন খাঁ। তারপর মাইহারে অগ্রজ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর কাছে তালিম নেন। প্রথমে সেতার ও পরে সুরবাহার যন্ত্রে সঙ্গীত সাধনা করেন। সেখান থেকে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ তাঁকে রামপুরে নিজের গুরু ওস্তাদ ওয়াজির খাঁর কাছে পাঠিয়ে দেন। অনেক ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতার পরীক্ষা দিয়ে তিনি ওস্তাদ ওয়াজির খাঁর শিষ্যত্ব লাভ করেন। গুরুর কাছে ১৪ বছর সুর সাধনা করেন। সঙ্গীত শিক্ষা জীবন শেষ করে গুরুর আদেশে কর্ম জীবন শুরু করেন। প্রথমে তিনি মাইহার রাজ্যে সভাবাদক নিযুক্ত হন। সেখানে বড় ভাই ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর তত্ত¡াবধানে প্রাচ্য দেশীয় যন্ত্র দিয়ে একটা অর্কেস্ট্রা দল গঠন করে নাম দেন ‘মাইহার স্ট্রিং ব্যান্ড’। পরে তিনি রামপুরের রাজদরবারের সভ্য সঙ্গীতজ্ঞের আসন অলংকৃত করেন। ১৯৩৫ সালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমন্ত্রণে তিনি শান্তিনিকেতনের বিশ্ব-ভারতীয় সঙ্গীত শিক্ষক রূপে যোগদান করেন। কিছুকাল পর শারিরীক অসুস্থার কারণে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং সঙ্গীতের বিকাশ, উন্নতি, প্রসার ও প্রচারকল্পে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে সঙ্গীত বিদ্যালয় খোলেন। বাদ্যযন্ত্র নিয়ে গবেষণা করার জন্য একটা বাদ্যযন্ত্রের কারখানা খুলে অগ্রজ আলাউদ্দিনের ডাকনামের সঙ্গে মিল রেখে নাম রাখেন আলম ব্রাদার্স। আলাউদ্দিন খাঁর পরামর্শ ও উপদেশ অনুযায়ী তিনি সরোদ যন্ত্রের আধুনিক রূপ দেন। এছাড়াও তিনি ‘মনোহরা’ ও ‘মন্ত্রনাদ’ নামে দুটো নতুন বাদ্যযন্ত্র সৃষ্টি করেন। তাঁর নিজের য›ত্র সুরবাহারের আকৃতি বড় করে তাতে সুরের গাম্ভীর্য ও বৈচিত্র্য আনেন। ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ অনেক রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করেন। সেগুলোর মধ্যে ‘ব্যরিষ’ ‘হৈমন্তিকা’ ‘আওল-বসন্ত’ ‘ওমর-সোহাগ’ ‘বসন্ত ভৈরো’ রাগ উল্লেখযোগ্য। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের চর্চা ও প্রসারের জন্য তিনি ১৯৪৮ সালে কুমিল্লায় ও ১৯৫৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘আলাউদ্দিন মিউজিক কলেজ’ নামে দুটি সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। তাঁর সঙ্গীত প্রতিভার স্বীকৃতি-স্বরূপ ১৯৬০ সালে গভর্ণর পদকে ভূষিত হন। তদানীন্তন পাকিস্তান সরকার ১৯৬১ সালে তাঁকে ‘তমঘা-ই-ইমতিয়াজ’ খেতাবে ও ১৯৬৬ সালে ‘প্রাইড অব পারফরমেন্স’ সম্মানে ভূষিত করেন।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭৬ সালে তিনি মরণোত্তর ‘শিল্পকলা একাডেমি’ পুরষ্কার লাভ করেন। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ১৯৮৪ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার প্রদান করেন। তাঁর কৃতি পুত্রদের মধ্যে ওস্তাদ আবেদ হোসেন খাঁন, ওন্তাদ বাহাদুর হোসেন খাঁন, ওস্তাদ মোবারক হোসেন খাঁন, ও ওস্তাদ শেখসাদী খাঁনের নাম উল্লেখযোগ্য। তাঁর শিষ্যদের মধ্যে সেতারে আলী আহমেদ খাঁ, ওস্তাদ খাদেম হোসেন খাঁন, অজয় কুমার সিংহ, উরশাদ আলী খাঁ, কুরশিদ খাঁন সালাউদ্দিন চৌধুরী, নগেরন দাস ও মানিক মিয়া; বেহালায় মতিউর রহমান (মতি মিঞা), এস্ত্রাজে ওস্তাদ ফুলঝুরি খাঁ, ও ওস্তাদ ইসমাইল খাঁন, সরোদে আফজালুর রহমান ও মালালউদ্দিন চৌধুরী, কন্ঠসঙ্গীতে গজেন্দ্রলাল রায়, উমেশ চন্দ্র বণিক, অশ্বিনীকুমার রায়, মিনতি চক্রবর্তী, সিন্ধুরাণী ধর, (মনস্য দেবী) ও অমর পালের নাম
উল্লেখযোগ্য। বিশ্ববিখ্যাত সঙ্গীদবিদ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর তিনি অনুজ। তিনি ১৯৬৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর কুমিল্লায় মৃত্যুবরণ করেন।

আমির হোসেন, কথাসাহিত্যিক
সম্পাদক-সাহিত্যের ছোট কাগজ ‘স্বদেশ’
চেতনায় স্বদেশ গণগ্রন্থাগার, শিমরাইলকান্দি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।