কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :মাদক কারবারির ছুরিকাঘাতে নিহত এএসআই পেয়ারুল ইসলাম কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার চন্দ্রপাড়া গ্রামের শিক্ষক আব্দুর রহমান মিন্টুর ছেলে। মা গৃহিণী। চার ভাইবোনের মধ্যে পেয়ারুল ইসলাম সবার বড়। বৈবাহিক জীবনে দুই ছেলে সন্তানের বাবা তিনি। বড় ছেলে হাম্মামের ৬, আর ছোট ছেলে আব্রাহামের বয়স মাত্র ২ বছর।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের হারাগাছ থানায় কর্মরত ছিলেন পেয়ারুল ইসলাম। গত ২৪ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় হারাগাছ থানাধীন সিগারেট কোম্পানির বাজারে ইয়াবা বিক্রির সময় মাদক বিক্রেতা পারভেজ রহমান পলাশকে আটক করেন তিনি। আটক অবস্থায় মাদক কারবারি পলাশ সাথে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে অতর্কিতভাবে পেয়ারুলের বুকে এলোপাতাড়ি কোপ দেয়। এতে তিনি গুরুতর জখম হন।
পরে হারাগাছ থানার ওসি শওকত আলী দ্রুত আশঙ্কাজনক অবস্থায় এএসআই পেয়ারুলকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে আইসিইউতে থাকা অবস্থায় গতকাল শনিবার সকাল সোয়া ১১টায় প্রাণ হারান তিনি।
আজ রোববার পেয়ারুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পেয়ারুলকে হারিয়ে পরিবারের সবাই অসুস্থ হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। পেয়ারুলের মা ‘আল্লাহ্-আল্লাহ্’ ছাড়া আর কিছুই বলছেন না। স্ত্রী হেনা খাতুন বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। শিশুছেলে হাম্মাম (৬) বারাবার বাবার কবরের পাশে গিয়ে বলছে ‘আব্বু আর কথা বলে না, আব্বু কখন কথা বলবে।’
কথা হয় হত্যাকাণ্ডের শিকার পিয়ারুলের বাবা আব্দুর রহমান মিন্টুর সাথে। ছেলের হত্যাকারীর ফাঁসি দাবি করে তিনি বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত হতে পারে। হত্যাকাণ্ডের সাথে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে। তাদের খুঁজে বের করা প্রশাসনের দায়িত্ব। যারা আমার ছেলের অবুঝ সন্তানদের এতিম করলো, বাবা-মায়ের কোল খালি করে দিলো, তাদের কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি হওয়া দরকার। আর এ শাস্তি আমি দেখে যেতে চাই।
এর আগে গতকাল শনিবার বিকেল ৪টায় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে জানাজা নামাজের আগে পিয়ারুলকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। তার কফিনে ফুল দেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আব্দুল আলীম মাহমুদ, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, পুলিশ ট্রেনিং কমান্ডেন্ট বাসুদেব বণিক, রংপুর জেলা পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার, পিবিআই পুলিশ সুপার জাকির হোসেন, সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ আরএমপির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এছাড়া জানাজায় অংশ নেন রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট শাফিয়ার রহমান শফি ও সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তিসহ পুলিশ সদস্যবৃন্দ। পরে গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাটের বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চন্দ্রপাড়া গ্রামে এএসআই পেয়ারুলের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি পৌঁছলে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
ওইদিন রাত সাড়ে ৯টায় চন্দ্রপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন রাজারহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ সোহরাওয়ার্দী বাপ্পী, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার আলতাফ হোসেন, হারাগাছ থানার ওসি শওকত আলী ও রাজারহাট থানার অফিসার ইনচার্জ রাজু সরকারসহ কয়েক হাজার মুসল্লি।
জানাজা নামাজে অংশ নেয়া মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে হারাগাছ থানার ওসি শওকত আলী নিহত এএসআই পেয়ারুলের বীরত্বের কথা বর্ণনা করেন এবং তার পরিবারের প্রতি গভীর দুঃখ ও সমবেদনা প্রকাশ করেন। শেষে তাদের মসজিদের পাশেই তার দাফন সম্পন্ন হয়।