স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে নতুন ঘরে থাকা হলো না নিজামের

সারাদেশ, 25 October 2022, 105 বার পড়া হয়েছে,

নিউজ ডেস্ক : নিজাম উদ্দিন। একমাস আগে মালয়েশিয়া থেকে ছুটিতে দেশে ফেরেন। এরপরই তিনি শুরু করেন নতুন পাকা বাড়ি নির্মাণের কাজ। আগামী শুক্রবার এ বাড়িতেই পরিবার নিয়ে উঠার কথা ছিল তার। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। নতুন বাড়িতে উঠার আগেই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এ লন্ডভন্ড হয়ে গেলো সবকিছু।

সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে স্ত্রী শারমিন আক্তার সাথী (২২) ও চার বছরের মেয়ে নুসরাতকে নিয়ে পুরাতন টিনের ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন নিজাম। এসময় ঝড় তাণ্ডব শুরু করলে একটি গাছ উপড়ে গিয়ে পড়ে নিজামের টিনের বসত ঘরে। এতে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে মারা যান তিনি।

নিজামের বাড়ি জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখাল ইউনিয়নের হেসাখাল (খামার পাড়) গ্রামে। তিনি একই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল রশিদের ছেলে।

মারা যাওয়া নেজাম উদ্দিনের ভাই জামাল উদ্দিন বলেরন, মাত্র এক মাস আগেই মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরেন নিজাম। স্ত্রী মেয়েকে নতুন বাড়িতে তুলে দিয়ে আগামী মাসে আবারো ফিরে যাওয়ার কথা ছিলো তার। সোমবার রাতে ঝড় শুরুর সময় স্ত্রী এবং মেয়েকে নিয়ে নিজের পুরাতন টিনের ঘরে ঘুমে ছিলেন তিনি। এসময় ঘরের পাশে থাকা একটি বিশালাকৃতির গাছ উপড়ে নিজামের টিনের ঘরের ওপর পড়ে। এতে তারা তিনজনই মারা যান।

হেসাখাল ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার মজুমদার জানান, ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর আঘাতে মর্মান্তিক মৃত্যুর শিকার হয়েছে স্বচ্ছল এই পরিবারটি। তাদের প্রতি আমাদের সমবেদনা জানানো ছাড়া কিছুই করার নেই। ঝড়ে তিনজনের মৃত্যু ছাড়াও নাঙ্গলকোট উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় গাছ উপড়ে ক্ষতির শিকার হয়েছে অনেক ঘরবাড়ি।

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সকালে মারা যাওয়া নিজামের বাড়িতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা যায়। একই পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যুর ঘটনায় শোকে বিহ্বল স্বজনরা। তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন প্রতিবেশীরা। আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও মানুষজন ছুটে আসছেন নিজাম বাড়িতে। স্বজনদের কান্নায় তাদের চোখও ছলছল করে ওঠে।

নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান মেহেবুব বলেন, নিজাম, তার স্ত্রী ও মেয়েকে গুরুতর আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে মারা যাওয়া প্রত্যেকের দাফনের জন্য ৫ হাজার টাকা করে মোট ১৫ হাজার টাকা সহযোগিতা করছি।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ফলে যে কোনো ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে খবর নেওয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত শুকনো খাবার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। নিহত নিজামের পরিবারের প্রতি আমরা শোকাহত। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা প্রদান করা হবে পরিবারটিকে।