লিবিয়া প্রতিনিধি : এই কথাটা এর আগেও অনেকবার বলেছি, লিবিয়াতে, বা ইনফ্যাক্ট অধিকাংশ আরব দেশে এখনও পর্যন্ত নারীদেরকে যে পরিমাণ সম্মান দেওয়া হয়, সেটা বিশ্বের অন্যান্য সোসাইটিতে বিরল।
যুদ্ধের পর থেকে ত্রিপোলিতে পুরুষরা দিনের বেলাও নির্ভয়ে গাড়ি চালাতে পারত না। ছিনতাই না শুধু, মিলিশিয়াদের চেকপয়েন্টে অনর্থক হয়রানির শিকার হওয়ার ভয়ে। কিন্তু গাড়িতে একজন মহিলা থাকলে রাতের বেলাও নিরাপদ। ৯০% চেকপয়েন্টে চেক না করেই ছেড়ে দিবে।
এবং চেক করলেও বাড়তি কোনো ঝামেলা করবে না। পাশে থাকা মহিলার আইডি কার্ড বা পাসপোর্ট তো চাইবেই না, ড্রাইভিং সিটে থাকা পুরুষের কাগজপত্রে বা গাড়ির কাগজপত্রে অসঙ্গতি থাকলেও অন্য সময়ের মতো নামিয়ে রেখে দিবে না, বরং পরে দেখা করতে বলবে।
রাতের বেলা বের হওয়ার সময় তাই বাংলাদেশীরা (অনেক সময় লিবিয়ানরাও) সবাই সাথে বউকে বা মা-বোনকে নিয়ে বর হয়। স্ত্রীলোক এখানে ড্রাইভিং লাইসেন্সের চেয়েও বড় সুরক্ষা।
নিজেদেরও এরকম অভিজ্ঞতা প্রচুর হয়েছে। ২০১৫ সালে সিরত থেকে ত্রিপোলিতে যাওয়ার সময় গাড়ি থামিয়ে সবার পাসপোর্ট দেখতে চাচ্ছিল। সবারটা বের করে দিয়ে দিয়েছিলাম। পুরুষদেরগুলো উল্টেপাল্টে পড়ে পড়ে দেখছিল, কিন্তু বোনের পাসপোর্ট উল্টে যেই না দেখেছে মেয়ের চেহারা, সাথে সাথে সেটা আর না পড়েই, উল্টে না দেখেই, চেহারার সাথে না মিলিয়ে ফেরত দিয়ে দিয়েছে।
গতবছর ত্রিপোলি থেকে আম্মুকে সাথে নিয়ে ফেরার সময় ঘটেছিল আরও ইন্টারেস্টিং ঘটনা। যাত্রা শুরু করার পর টের পেয়েছিলাম, গাড়ির ইঞ্জিনে ট্রাবল দিচ্ছিল। স্লো করলেই স্টার্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। পরে একটু ঠান্ডা হলে আবার স্টার্ট নিচ্ছিল। তো সিরতের কাছাকাছি হিশার চেকপয়েন্টে স্পিড ব্রেকার পার হওয়ার জন্য স্লো করতেই স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেল।
হিশার চেকপয়েন্টটা ছিল স্পেশাল। কারণ কয়েক মাস আগেই সেখানে আইএস আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছিল। এখন এরকম একটা চেকপয়েন্টে বিদেশী একটা লোক গাড়ি চালাচ্ছে, তার পাশে এক মহিলা বসে আছে ফুল নিকাব পরে, এবং তারা ঠিক চেকপয়েন্টের সামনে এসেই গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে দিয়ে বসে আছে – পুরো ব্যাপারটাই প্রচণ্ড সন্দেহজনক হওয়ার কথা ছিল।
আমি মনে মনে ফ্রিজ হয়ে গেছিলাম। আমি নিশ্চিত, একা হলে এতক্ষণে আমার চারপাশে দশ-বারো জন এসে ঘিরে ধরত, গাড়ি থেকে নামিয়ে বডি সার্চ শুরু করত, এরপর বাকি কথা। কিন্তু শুধুমাত্র পাশে আম্মু ছিল বলে তারা কিছুই করল না। এমনকি আইডি কার্ডও দেখতে চাইলো না। একজন আর্মি শুধু এসে জিজ্ঞেস করল, কী সমস্যা। যখন বললাম স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেছে, সে নিজে বনেট খুলে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করল, এরপর আমাকে ড্রাইভিং সিটে বসে থাকতে বলে পেছন থেকে গাড়ি ঠেলে রাস্তা থেকে একটু পাশে সরিয়ে দিয়ে বলল, ওয়েট কর, ঠান্ডা হলে এরপর ট্রাই করলেই স্টার্ট হবে। এই হচ্ছে অবস্থা।
অ্যানিওয়ে এই ছবিটা দেখে এত কথা মনে পড়ল। ছবিটা লিবিয়ার না, সৌদি আরবের। সেখানে নারীরা ড্রাইভিং করার অনুমতি পেয়েছে মাত্র কিছুদিন হলো। কিন্তু যেসব নারী নিকাব পরে, তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স বা আইডিকার্ড পুলিশ চেক করবে কীভাবে? চেহারার সাথে মেলানোর জন্য নিকাব খুলতে বলবে?
না। ইন অ্যারাব সোসাইটি, দ্যাট ইজ কনসিডার্ড অ্যাজ হিউমিলিয়েটিং। সেজন্য সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশের হাতে একটা ফিঙ্গারপ্রিন্ট ভেরিফিকেশন ডিভাইস তুলে দিয়েছে। এখন চেকপয়েন্টে নিকাব পরা মহিলাদেরকে তাদের ফেস রিভিল করতে হবে না। ডিভাইসে ফিঙ্গার প্রেস করলেই স্ক্রিনে তার তথ্য-পরিচয় শো করবে। অ্যান্ড দ্যাট ইজ হাউ টেকনোলোজি শুড বি ইউজড। ঠিকভাবে ব্যবহার করলে টেকনোলজিকে ধর্মীয় বা সামাজিক প্রথার সাথে সাংঘর্ষিক হতে হয় না।