বিদায় নিল আরেকটি বছর -আদিত্ব্য কামাল

সাহিত্য, 1 January 2022, 282 বার পড়া হয়েছে,
নিশি অবসান, ওই পুরাতন বর্ষ হয় গত! মহাকালের অমোঘ নিয়মে ইতিহাসের পাতা থেকে বিদায় নিল আরেকটি বছর। শুরু হল ইংরেজি নতুন বর্ষ ২০২২ সালের প্রথম দিন। আনন্দ-বেদনা, সাফল্য-ব্যর্থতা, আশা-নিরাশা, প্রাপ্তি-প্রবঞ্চনার হিসেব-নিকাশ পেছনে ফেলে নতুন বছরকে স্বাগত জানাই আগামী দিনের নতুন স্বপ্নে সোনালি প্রত্যাশার পাখা মেলে।

যে ২০২১ সাল চলে গেল কিংবা তারও আগে বছরখানেকের মতো যে সময় গত হলো, শোক ও দুঃখে, সর্বগ্রাসী ত্রাস ও মৃত্যুভয়ে, তাকে বিদায় দিলেও স্মৃতি থেকে বাদ রাখা কি সম্ভব? একেবারেই নয়। কারণ ২০২০ সাল এসেছিল ভয়ংকর দানবরূপে, যে দানব বিশ-একুশের কাল পেরিয়ে গোটা বিশ্ব সংসার তছনছ করেছে, ছিনিয়ে নিয়েছে অর্ধকোটি মানুষের জীবন!

মহামারির এ তাণ্ডবকে অনেকেই প্রকৃতির প্রতিশোধ বলে আত্মতুষ্টি লাভ করতে চাইবেন, কিন্তু মোট কথা-এর মূল লক্ষ্যবস্তু মানুষ, হাজারো-লাখো মানুষের জীবন। যাদের জীবন গেছে, দানব জীবাণু যাদের অস্তিত্ব বিলীন করেছে, তারা সবকিছুর বাইরে; কিন্তু যারা বেঁচে আছে, তারা পার করেছে শতাব্দীর নিষ্ঠুরতম এক বিচ্ছিন্নতা! বিশ্বের সব মহাদেশ-এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকা, এমনকি অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড-এমন কোনো জনপদ নেই যেখানে করোনার রাহুগ্রাস কোটি মানুষকে অসহায় করেনি। কোনো বড় যুদ্ধপ্রলয়ে যা ঘটেনি-তা-ই ঘটেছে উন্মত্ত ভয়ংকর এ সময়ে।

না, এ মহাপ্রলয় নতুন বছরকে ছেড়েছে বা ছাড়বে, সেটিও নিশ্চিত করে বলা যাবে না; নানা নামে বিবর্তিত হয়ে ২০২২ সালেও এ মহাদানবের বিচরণ অব্যাহত থাকবে এটা ধরেই নেওয়া যায়। তবে যে নামেই অশুভ আসুক, তার দাহন একই থাকে। ২০১৯ সালের শেষ প্রান্তে চীনের মাটিতে মাথা তুলে যে মহাদানব বিশ্ব দাপিয়ে বেড়িয়েছে, শত নখরে বিস্তৃত হয়ে আগ্রাসী থাবায় জনজীবন, অর্থনীতি, যোগাযোগ, পারস্পরিক সম্পর্ক তছনছ-ক্ষতবিক্ষত করেছে, নতুন বছরে তাকে আমরা স্বাগত না জানালেও সে তো আজরাইলই।

বাংলাদেশের জীবনকেও ক্ষতবিক্ষত করেছে এ মহাপ্রলয়, সংখ্যার ভেদে কম ভাবা হলেও এ শকুনি ছোবল খুব কম ছিনিয়ে নেয়নি আমাদের মানুষদেরও। ছিনিয়ে নিয়েছে আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের বহুবিধ পুরোধাকে, যারা আমাদের নমস্য ছিলেন কর্ম ও কীর্তিতে, পরাভূত হয়েছেন তারাও মৃত্যুতে।

আশা ছাড়া জীবন অচল হয়, স্বপ্ন দেখা ছাড়া জীবন স্থবির হয়। সে কারণেই আশা রাখি-২০২২ নতুন আশা, নতুন বিশ্বাসের জন্ম দেবে। মানুষ লড়াই করেছে, এযাবৎ নানা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, আশা রাখি মহামারির তাণ্ডবকে পরাজিত করতে পারবে মানুষ। কারণ বেঁচে থাকার মূল শর্ত সংগ্রাম, লড়াই। মানুষ, মনুষ্যত্ব এ সংগ্রামে সফল হোক, প্রার্থনা করি।
পুরনো বছরের ভুলগুলো শুধরে সমস্ত ইতিহাস থেকে ভালো ভালো শিক্ষা গ্রহণ এবং অতীতের সফলতা-ব্যর্থতাকে পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের লক্ষ্যে আমাদের সামনের দিকে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ অর্থাৎ বাঙালি অন্যদের তুলনায় এই ভেবে অনায়াসে গর্ব করতে পারে যে, তাদের একটি নিজস্ব বর্ণমালা এবং একটি বর্ষপঞ্জি রয়েছে, যা বিশ্বের অনেক বিখ্যাত জাতিরও নেই। নিজস্ব বর্ষপঞ্জি থাকার কারণে বাঙালি বছরে দু’বার বর্ষবরণ করে, তার একটি পয়লা বৈশাখ। আরেকটা হলো ১লা জানুয়ারি। বাঙালি একবার বলে শুভ নববর্ষ। আরেকবার বলে হ্যাপি নিউ ইয়ার।
চিরসংগ্রামী, লড়াকু ও আশাবাদী মানুষের প্রত্যাশা সব ধরনের স্থবিরতা কাটিয়ে নতুন বছর সবার জীবনে বয়ে আনবে অনাবিল আনন্দ। এ দেশে ফিরে আসবে শান্তি, সমৃদ্ধি, স্বস্তি, গতিময়তা। নতুন আশার আলো প্লাবিত করবে দিক-দিগন্ত। নতুনের প্রতি সবসময়ই মানুষের থাকে বিশেষ আগ্রহ ও উদ্দীপনা। নতুনের মধ্যে নিহিত থাকে অমিত সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপায়ন করার সুযোগ করে দিতে এলো নতুন বছর।
মহাকালের অতলে হারিয়ে গেলো আরো একটি বছর। সময়ের চক্রে আর কখনোই ফিরবে না ২০২১ সাল। তবে বছরটির রেখে যাওয়া স্মৃতি-বিস্মৃতি আলোড়িত হবে প্রকৃতি-পরিবেশ-মনুষ্য সভ্যতায়। আজি নব-বর্ষ-প্রভাতে ভিক্ষা চাহি মার্জনা সবার। আবারও সবাইকে জানাই ইংরেজি নতুন বছরের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। শুভ হোক ইংরেজি নববর্ষ।