আফগানিস্তানে তালেবানের হাত থেকে রক্ষা পেতে পুরো ১০ বছর পুরুষ সেজে ছিলেন নাদিয়া গুলাম দাস্তগির নামে এক নারী। তার এ ঘটনা সর্বপ্রথম ২০১০ সালে বিশ্বব্যাপী প্রকাশ পেলে বেশ আলোচিত হয়। তখন তিনি স্পেনের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয়ে এবং ২৫ বছরের যুবতী। তবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে তাকে অনেকদিন হাসপাতালেও থাকতে হয়েছিল।
নারী হওয়া সত্ত্বেও আফগানিস্তানে যতদিন ছিলেন পুরুষ সেজে থাকতে হয়েছিল নাদিয়াকে। বিদেশ পালিয়ে যাওয়ার পরই নিজ সত্ত্বাকে উন্মোচন করার সাহস পান তিনি। তার আগ পর্যন্ত সর্বত্র পুরুষ সেজে উঠবস করতে হতো। এমনকি একটা সময় নারী সত্ত্বা ভুলতে বসেছিলেন। তার এই গল্প রুপকথাকেও হার মানায়।
আফগানিস্তানে তখন গৃহযুদ্ধ। এমন অবস্থার মধ্যেই ১৯৮৫ সালে কাবুলে জন্মগ্রহণ করেন নাদিয়া গুলাম দাস্তগির। সে সময় বোরকা ও হিজাব ব্যাতিত নারীরা ঘর থেকে বাহির হওয়ার অধিকার পেতেন না। ফলে ছোট থেকেই দেখেছেন তার দেশে নারীদের অধিকার নেই। খুন, অঙ্গচ্ছেদ, ধর্ষণসহ নারীর ওপর তখন সব ধরনের নির্যাতন চলতো।
১৯৯৩ সালে তালেবানের বোমা হামলায় নাদিয়াদের বাড়ির একাংশ ধ্বংস হয়ে যায়। পরিবারের সবাই প্রাণে বাঁচলেও মৃতু্য হয় তার ভাইয়ের। নাদিয়া নিজেও গুরুতর জখম হন এবং প্রায় দুই বছর হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাটান। ১৯৯৬ সালে কাবুল পুরোপুরি তালেবানদের দখলে চলে গেলে তার জীবনও সম্পূর্ণ বদলে যায়।
তখন মাত্র ১১ বছর বয়সী নাদিয়া তার মায়ের কথাতেই প্রথম পুরুষের বেশ ধরেন। অনাহারের হাত থেকে পরিবারকে এবং তালেবানের অত্যাচার থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য মৃত ভাইয়ের পরিচয়ে সামনে আসেন। এটা ছাড়া তার হাতে বিকল্প কোনো উপায় ছিল না।
পুরুষের বেশে তিনি বাড়ির বাহিরে একা চলাফেরা করতে লাগলেন, মসজিদে গিয়ে কোরআন পড়া শুরু করেন, এমনকি কাবুলের এক মসজিদে কর্মচারী হিসাবেও চাকরি নেন। এভাবেই দিনের পর দিন উপার্জন করে পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতেন। ১৬ বছর বয়সের সময় তাকে পুরুষ ভেবে তালেবানরা স্কুলে ভর্তিরও অনুমতি দিয়েছিল। এভাবে পুরুষ সেজে পুরোপুরি ১০ বছর কাটিয়ে দেন নাদিয়া।
এই দিনগুলোতে প্রতিটি মুহূর্তে তিনি নিজেকে আরও বেশি পুরুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করতেন। এতে করে মানসিক ও শারীরিক দ্বন্দ্ব মারাত্মক আকার ধারণ করে। কিন্তু বয়স বাড়তে থাকায় সেটাও আর সম্ভব হচ্ছিল না। পোশাক ছাপিয়ে নারী সত্ত্বা জানান দিতে শুরু করে। এমন অবস্থায় ২০০৬ সালে আফগানিস্তানের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ হয় তার। ওই সংস্থাটির সহায়তায় কাবুল থেকে পালাতে সক্ষম হন এই নারী।
স্পেনে আশ্রয় নেওয়ার পর সেখানে নাদিয়ার বেশ কিছু দিন চিকিৎসা চলে। তারপর দেশটির একটি শরণার্থী শিবিরে বসবাস করতে শুরু করেন। পরবর্তীতে স্পেনেরই একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ২০১৬ সালে ‘ব্রিজেস অব পিস’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা গড়ে তুলেন এবং শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া অনেকের শিক্ষার দায়িত্ব নেন।