মোঃ নিয়ামুল ইসলাম আকঞ্জি,ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানায় দুই মাস ধরে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পদটি শূন্য হয়ে আছে। দুই দারোগা সাহেবেরাই এখন সবকিছুর হর্তাকর্তা এই থানার। বন্ধ নেই চাঁদাবাজি বাণিজ্য। মহাসড়কে অবাধে চলছে নিষিদ্ধ সব যানবাহন। যেসব গাড়ির সঙ্গে মাসিক চুক্তি নেই তাদের ধরে জরিমানা আদায় কিংবা মামলা দেয়া হচ্ছে। মহাসড়ক ছেড়ে আশাপাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও চাঁদাবাজি বাণিজ্যের খাত বাড়াতে ধন্যা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে থানার বর্তমান সকল কর্তাদের বিরুদ্ধে।
থানার ওসি আকুল চন্দ্র বিশ্বাস গত ৭ই মার্চ বদলি হয়ে যান। এরপর পরই দায়িত্ব দেয়া হয় সাব-ইন্সপেক্টর সালাউদ্দিন মোল্লাকে। থানার স্টাফ কাঠামোতে এসআই’র দুটি পদ। সালাউদ্দিন না থাকলে ওসির কাজ চালান আরেক সাব-ইন্সপেক্টর সারোয়ার হোসেন। থানার অন্য পদেও লোকবলের সংকট রয়েছে বলে জানা যায়।
সার্জেন্টের একটিই পদ সেটিও শূন্য। ৪ জন এএসআই’র মধ্যে আছেন ১ জন, নায়েক ২ জন থাকলেও স্টেশনে নেই কেউই। অন্যত্র ডিউটিতে সম্পৃক্ত করা হয়েছে তাদের। ২৯ কনস্টেবলের মধ্যে ৮ জনের পদ শূন্য। এবার ঈদুল ফিতরের আগে আশপাশের পেট্রোল পাম্পে যান ওসি’র দায়িত্বে থাকা এসআই সালাউদ্দিন মোল্লা। এসব বাম্পে তিনি জানতে চান হাইওয়ে থানার সঙ্গে বাম্পের কে মেইনটেইন করে থাকেন সম্পর্কের লেনদেন। ওসি বদলি হয়ে গেছেন জানিয়ে, এসব বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন একটি পেট্রোল পাম্পের মালিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই পেট্রোল পাম্প মালিক বলেন, আমি পরে তাকে ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছিলাম মেইনটেইনটা কি। এর আগে কখনো এমন হয়নি। পরে অবশ্য আমার পাম্পে তিনি আর আসেননি। আর দালালদের মাধ্যমে সিএনজি চালিত অটোরিকশা থেকে মাসিক টাকা নিয়ে তাদের মহাসড়কে চলতে দেয়ার অভিযোগ এই থানা পুলিশের বিরুদ্ধে এবিষয় অনেক পুরনো। থানার পাশেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কুট্টাপাড়া মোড়। এই মোড়ে সিএনজি অটোরিকশার জটলা সবসময়েরই। সেখান থেকে চান্দুরা, সাতবর্গের দিকে যাওয়া-আসা করছে এসব সিএনজি অটোরিকশা। সরজমিন দেখা গেছে, এই মোড় এবং বিশ্বরোড থেকে মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শত শত সিএনজি চালিত অটোরিকশা। কিন্তু নির্বিকার হাইওয়ে থানা পুলিশ। সবাই জানে, মান্থলি দিয়েই চলছে এসব পাড়ি। প্রতি সিএনজি অটোরিকশা প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা করে দিয়ে হাইওয়ে সড়কে চলার অনুমতি পায়। দালালদের মাধ্যমে মাসিক চুক্তির এই টাকা থানার কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। জেলার আশুগঞ্জ থেকে সাতবর্গ পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক আর বিশ্বরোড থেকে কসবার কুটির কালামুড়ি পর্যন্ত কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কগুলো এই থানার অধীনে। দুটি মহাসড়কেই সিএনজি অটোরিকশা চলছে অবাধে ঘটছে নীয়মিত দুর্ঘটনা।
কুট্টাপাড়া মোড়ে হোসেন মিয়া নামে এক সিএনজি অটোরিকশা চালক জানান, এই মোড় থেকে ৫০/৬০টি সিএনজি অটোরিকশা চান্দুরা পর্যন্ত চলাচল করে। তারা মাসে ৩ হাজার টাকা করে থানায় দেয়। আরেকজন অটোরিকশা চালক সায়েম জানান, যেসব সিএনজি’র মান্থলি রয়েছে সেগুলোর ভাড়া বেশি করে নিয়ে যাত্রী পারাপার করছে। ৫শ’ টাকার স্থলে ৬শ’ টাকা ভাড়া দিতে হয় গাড়ির মালিককে। গাড়ির মালিক থানার সঙ্গে চুক্তি করে রেখেছেন বিধায়।
মার্চ মাসে এই থানায় হওয়া মামলার হিসেবে দেখা গেছে সর্বোচ্চ ১৪৩টি মামলা হয়েছে ইজিবাইকের বিরুদ্ধে। ৮৩টি মামলা হয়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৬টি মোটরসাইকেল এবং ১টি বাস ও ট্রাকের বিরুদ্ধে।
ওসির দায়িত্বে থাকা সাব-ইন্সপেক্টর সালাউদ্দিন মোল্লা জানান, এসপি অফিস থেকে তাদের প্রতিদিন ৭০টি মামলা দেয়ার নির্দেশ আছে। কিন্তু আমরা পারতেছি না। ৩০টার মতো মামলা দিতে পারছি। সিএনজি অটোরিকশা থেকে মান্থলি নেয়ার বিষয়টি সত্যি নয় এবং কতোটা সিএনজি চলে জানা নেই। এই জেলায় সিএনজি’র সংখ্যা অন্য জেলা থেকে বেশি। মহাসড়কের জায়গায় অবৈধ দোকানপাট থাকলে সেগুলো আমরা উচ্ছেদ করতে পারি। আইনে সেই ক্ষমতা আছে। আমরা কারও কাছে চাঁদা চাই না।