কেউ কি আছেন? আমার সন্তানদের বাঁচান।

সোসাল মিডিয়া, 12 August 2021, 559 বার পড়া হয়েছে,

শহিদুল ইসলাম সেলিম : আজ দেড় বছরে আমার সন্তানদের আমি কাঁধে কিংবা বগলে চেপে বই-খাতা দিয়ে ওর স্কুলে পাঠাতে পারিনি। টিফিনের ফাঁকে হৈহৈ করে বের হওয়ার আনন্দ দিতে পারিনি। ওদের মাকে স্কুলের উদ্ভট গন্ধমাখা ইউনিফর্মের পরম মমতায় ময়লা পরিস্কারের ভাললাগা দিতে পারিনি। উপরের কথাগুলো হয়তো কিছুটা আবেগ তাড়িত বলছি। একান্তই বাস্তবতা হলো…..
আমার বড় ছেলে ক্লাস টেনে পড়ে। প্রাইভেট মাষ্টার যা পড়ায় তার বাইরে একটি অক্ষর নিজ থেকে পড়তে চায়না। জোড়াজুড়ি করলে রিএক্ট করে। সারাদিন মোবাইল ঘাটে, আমি যতদূর পারি লক্ষ্য রাখি সে মোবাইলে কি করে বা দেখে। ভালোর মধ্যে যা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে এবং মাঝেমধ্যে মসজিদে আযান দেয়। বিকালে ফুটবল বা ক্রিকেট খেলে। বাড়িতে গাছ গাছালি লাগানো বা তাদের পরিচর্যা করে। এত কিছুর পরেও আমি আজ তাকে নিয়ে বড়ই আতংকিত যে, পড়াশোনার বেসিক বিষয়টিতে একেবারেই শুন্য। সামনে সে কিভাবে পড়াশোনার লম্বা দৌঁড়ে টিকে থাকবে?
মেজো ছেলে ক্লাস নাইনে পড়ে। আলহামদুলিল্লাহ সে অত্যন্ত মেধাবী। রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের ইংরেজি ভার্সনের ছাত্র। চাপে পড়ে বাধ্য হয়ে অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। সুযোগ পেলেই মোবাইলে পাপজি খেলে।তাকে আমি মফস্বলে বসবাস করে ইংরেজি মাধ্যমের কোন টিচার দিতে পারছিনা, না এখন আমার যে আয় রোজকার তাতে করে ঢাকায় ওর স্কুলের আশেপাশে বাসা নিয়ে ওকে লেখা পড়ার সুযোগ করে দিতে পারছি! স্কুল খোলা না হওয়া পর্যন্ত আমি কোনভাবেই তাঁকে সহযোগিতা করতে পারবো না। আমার সাত বছরের মেয়ে ‘সারা’ চট্টগ্রামের একটি নামকরা স্কুলে প্লে,নার্সারী, কেজি পড়ে ওয়ানে উঠেছিল। বাধ্য হয়ে মফস্বলের একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করেছি। কারণ বাচ্চারাতো বাচ্চাদের পরিবেশেই বড় হয়। স্কুল তো আর খুলছে না। এ তো আমার নিজের বাচ্চাদের কথা বললাম। এমন লক্ষ লক্ষ ছেলে মেয়ে পড়াশোনা বাদ রেখে মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়েছে। গ্রামে এখন আর অন্ধকার রাতে জোনাকি পোঁকা দেখা যায়না, তবে রাস্তার মোড়ে, গাছের তলায় অসংখ্য মোবাইলের আলোর নড়াচড়া দেখা যায়। রাতবিরেত চলতে থাকে দলে দলে মোবাইলে গেমস বা অন্য আরো কিছু। দিনের বেলা ওরা খুঁজো হয়ে হাটে, অনেকের চোখে সমস্যা দেখা দিচ্ছে, কী এক ভয়ংকর আগ্রাসী থাবায় আমাদের সন্তানেরা অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে। ওরা গার্জিয়ানের কথা শুনছে না, শুনবে কী করে? আমরা কি ওদের এ দুঃসময়ে ভাললাগার কোন কিছু কী করে দিতে পারছি? আমাদেরই বা কি করার আছ? ইতোমধ্যে অসংখ্য কিশোর গ্যাং তৈরী হয়েছে। এদের দ্বারা এমন সব ভয়াবহ ঘটনা ঘটছে যা সিনেমাকেও হার মানায়। এ দু তিন বছরে যে সকল তরুণ তরুণী সময় পার করছে তাদের সামনে এ প্রতিযোগিতাময় বিশ্বে টিকে থাকার যে করুণ পরিণতি হবে তা ভাবতেও কষ্ট লাগছে।

এমতাবস্থায় দেশের সকল গার্জিয়ান, শিক্ষক মন্ডলী, সচেতন মহলের কাছে অনুরোধ আপনারা জেগে উঠুন, যে কোন কিছুর বিনিময়ে হলেও আমাদের সন্তানদের বাঁচাতে হবে। এটি একটি সুস্পষ্ট ষড়যন্ত্র, এভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে কোমলপ্রাণ ছেলে-মেয়েদের ধ্বংস করে দিতে পারিনা। লক্ষ লক্ষ গার্মেন্টস কর্মী, কর্মকর্তা সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে ” কই একজন গার্মেন্টসকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে আমার জানা নেই। স্কুলের নিয়ম শৃঙ্খলা বজায় রেখে ক্লাস চালু করলে আমার বিশ্বাস, আল্লাহর উপর ভরসা করে বলতে পারি আমাদের একটি সন্তানেরও করোনা হবেনা ইনশাআল্লাহ। আপনারা সবাই রাস্তায় নেমে আসুন। যে বা যারা আমাদের
শিক্ষা মন্ত্রী এবং শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গদের মগজে আমাদের সন্তানদের ধ্বংস করার পরামর্শের বীজ বপন করছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সন্তানদের বাঁচানোর জন্যে দুর্বার আন্দোলন ও প্রতিরোধ গড়ে তুলি। এভাবে আমরা সন্তানদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিতে পারি না। হতে দেবনা।