১০ বছরের শিশু হত্যার দায় স্বীকার করে প্রধান অভিযুক্ত কথিত জ্বীনের মা 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 11 October 2024, 16 বার পড়া হয়েছে,
মোঃনিয়ামুল ইসলাম আকঞ্জি,ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ১০ বছরের শিশু জাজু আক্তারকে হত্যার দায় স্বীকার করে প্রধান অভিযুক্ত কথিত জ্বীনের মা শিউলি আক্তার।
চলতি মাসের ৭ অক্টোবর তিনদিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জাজু হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আসামিদের ৮ অক্টোবর কারাগারে পাঠায়। ওই দিনই প্রধান আসামি শিউলি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শিশু জাজু হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
জানা গেছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে নিখোঁজ হয় জাজু আক্তার (১০) নামে এক শিশু। সারাদিন খোঁজাখুঁজির পর মেলেনি তার সন্ধান। আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম ও এলাকার মসজিদের মাইকে প্রচার করা হয় শিশুর নিখোঁজের সংবাদ। দিনশেষে এলাকায় চাউর হয় জ্বীনে ওই শিশুটিকে নিয়ে গেছে। ওই দিনই সন্ধ্যার পর বাড়ির পাশে একটি খাল থেকে উদ্ধার করা হয় জাজুর মরদেহ। তার পরিবারের লোকজনও বিশ্বাস করে জ্বীনই হয়তো হত্যা করেছে তাঁর মেয়েকে। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানা পুলিশ কুসংস্কারে বিশ্বাস করেনি।
স্থানীয় বসিন্দা হাবিবা আক্তার বলেন, আমরা জীবন নিয়া আতঙ্কে আছি। রাতে ঘর থেকে বের হইতে পারি না। সাদা সাদা কাপড় পড়ে জ্বীন এসে আমাদের বাড়িতে ভয় দেখায়। আমার ঘরের রান্না করার চুলা ভাঙছে, দরজায় তালা দিছে। শিউলি জেলে যাওনের পর থেকে বাড়িতে আর জ্বীন আসে না। তবে আমাদের আতঙ্ক এখনও কাটে নাই।
ঘটনার রাতেই তদন্তে নামে নাসিরনগর থানা পুলিশ। পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে অজ্ঞাতনামা আসামি করে নাসিরনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন শিশুটির বাবা শাহ আলম। তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার তিন দিন পর সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে শিউলি আক্তার নামে এক নারী ও তার শ্বশুর দুধ মিয়াকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠান। তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিদের ১০ দিন রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ৯ অক্টোবর বুধবার রাতে নাসিরনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল কাদের এসব তথ্য জানান।
নিহত জাজু আক্তার (১০) উপজেলার ফান্দাউক ইউনিয়নরে আতুকুড়া গ্রামের ৯ নং ওয়ার্ডের শাহ আলম মিয়ার মেয়ে। সে আতুকুড়া মাষ্টার কিন্ডার গার্ডেন স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। স্বীকারোক্তি দেওয়া নারী শিউলি আক্তার (২৫) একই গ্রামের কাজী মিয়ার স্ত্রী।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দির সূত্র ধরে নাসিরনগর থানার ওসি মো. আব্দুল কাদের বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারী নিজেকে জিনের মা পরিচয় দিয়েছেন। তার উপর জিনের আসর আছে। কিন্তু জাজুর বাবা এসব বিশ্বাস করতো না। জাজুকে হত্যার এক সপ্তাহ আগে শিউলির বাড়িতে জিনের আসর বসানো হয়। সেখানে দাবী করা হয় পাচঁ মণ মিষ্টি ও পাঁচটি গরু দিলে এলাকার সব সমস্যা শেষ হয়ে যাবে। মূলত জ্বীন ও কুসংস্কারের প্রতিবাদ করে শিশুটির বাবা। তাই জাজুকে হত্যা করেছেন বলে তাঁর দেওয়া তথ্যে উঠে এসছে।
স্থানীয়দের দাবি, ঘটনার সূত্রপাত দুই-তিন বছর আগের। গত কয়েক বছর ধরে ফান্দাউক ইউনিয়নের আতুকুড়া গ্রামের ৯নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন মহল্লার সাধারণ মানুষ বিকাল থেকে কেউই ঘর থেকে বের হতে পারতো না। সন্ধ্যার পরপরই কারো ঘরের দরজায় তালা, আবার কারো ঘরের দরজায় সাদা সুতা দিয়ে বাধা, কারো বাড়ির রান্না করার চুলা ভেঙ্গে রাখতো, আবার কারো ঘরের টিনের চালায় ইট নিক্ষেপ করা হতো। মূলত স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতেই শিউলির কিছু লোকজন এসব করতেন। এসব কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ করেন নিহত জাজুর বাবা শাহ আলম। এ থেকেই ক্ষিপ্ত হতে থাকেন শিউলি। সুযোগ খোঁজতে থাকেন কিভাবে শাহ আলমকে শায়েন্তা করা যায়।
আরেক বাসিন্দা বিলকিস বলেন, আমার ঘরে তিনজন জ্বীন সাদা কাপড় পইরা নয়টা তালা দিয়া গেছে। চাবি সঙ্গে নিয়া গেছে। আমরা জানালা দিয়া সব দেখছি। কিন্তু মরনের ভয়ে ঘর থেকে বের হই নাই।