উক্ত সম্মেলন উদ্বোধন করেন, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ।
সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।
জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের আদর্শে বিএনপি গঠন করেছিলেন বলে দাবি করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন? জিয়াউর রহমান কখনোই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। জিয়াউর রহমান ছিলেন পাকিস্তানের এজেন্ট।
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হানিফ বলেন, বিএনপি আজকে বলে আমরা বারবার জিয়াউর রহমানের প্রসঙ্গ আনি কেন। জিয়াউর রহমানের নাম তো আসবেই, কারণ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নাম আসলে তো জিয়াউর রহমানের নাম আসবেই। কারণ এই হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমান জড়িত। জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের এজেন্ট ছিল বলেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পেরেছে। এই বাংলাদেশে যারা মুক্তিযুদ্ধে চেতনা ধারণ করে, যারা স্বাধীনতা বিশ্বাস করে তাদের হাতে কখনও বঙ্গবন্ধুর দিকে গুলি করার চিন্তাও আসবে না। যারা পাকিস্তানি ভাবধারায় বিশ্বাসী তাদের পক্ষেই সম্ভব ছিল বঙ্গবন্ধুকে আঘাত করা।
তিনি বলেন, ক্ষমতা দখলের জন্য পৃথিবীর বহু দেশের রাষ্ট্র প্রধানরা হত্যার শিকার হয়েছেন। কোথাও রাষ্ট্র প্রধানদের পরিবারের সকল সদস্যদের হত্যা করা হয়নি। নারী শিশুকে হত্যা করা হয়নি। কারণ বঙ্গবন্ধু হত্যা শুধু ক্ষমতা দখলের কারণে ছিল না। এটা ছিল ১৯৭১ সালে পরাজিত হওয়ার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। পাকিস্তান এবং তাদের পশ্চিমা মিত্র যারা স্বাধীনতা মেনে নিতে পারে নাই তারাই ষড়যন্ত্র করে এই হত্যা করেছে।
বাংলাদেশের মূল প্রতিনিধিত্বকারী, মূল চক্রান্তকারী ছিল খুনি জিয়াউর রহমান। যেটা বারবার ইতিহাসের পাতায় উঠে এসেছে। জিয়াউর রহমান নিজেই বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে নিজেই প্রমাণ রেখে গেছেন। নিজে যদি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নাই থাকবেন, তাহলে কেন ইনডেমনিটি আইন করে এই বিচার কাজ বন্ধ করবেন। কেন খুনিদের কে বিদেশে পুনর্বাসন করে পুরস্কৃত করলেন? যদি জিয়াউর রহমান পুনর্বাসিত না করে তাদের বিচারের আওতায় আনতেন, তাহলে মূল কারিগর হিসেবে তার (জিয়াউর রহমান) নামটাও চলে আসতো। সে যে মূল চক্রান্তকারী সেটা বের হয়ে আসতো।
ওই সময়ে অনেকেই বিপদে পড়েই হোক দায়িত্ব নিয়েছিল, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করতে পারে নাই। আজকে বিএনপি নামক যে দলটি জিয়াউর রহমান গঠন করেছিল, সেই দলটিই পাকিস্তানের আদর্শে গঠন করেছিল জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান যে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, তার প্রমাণ তিনি নিজেই। গোলাম আজমের মত কুখ্যাত রাজাকারকে উনি দেশে ফিরিয়ে আনলেন। অসংখ্য রাজাকারকে দিয়ে তিনি তার ক্যাবিনেট সাজালেন। কোনও মুক্তিযোদ্ধাকে তার চোখে পড়ে নাই। জয় বাংলা স্লোগান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের স্লোগান, জিয়াউর রহমান জয়বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ করলো।
পাকিস্তান জিন্দাবাদের আদলে, করেছেন বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, এটা উনি নিয়ে আসলেন। এই যে বিএনপি নামক দলটি এটা পাকিস্তানের আদলে পাকিস্তানের বিশ্বাসদারীদের দিয়েই, ওই আদর্শে গঠন করেছিলেন। তার উত্তরসূরি খালেদা জিয়া, তারেক রহমানও পাকিস্তানি আদর্শে বিশ্বাসী, তাদের চিন্তা চেতনাও পাকিস্তানি ভাবধারার। জিয়াউর রহমান যেমন রাজাকার জামায়াতের নেতাদের দিয়ে মন্ত্রী পরিষদ গঠন করেছিলেন তেমনি খালেদা জিয়াও কুখ্যাত রাজাকার নিজামি, আলী আহসান মুজাহিদের গাড়িতেও পতাকা তুলে দিয়েছিল।
সভায় সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ও চাঁদপুর (শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ) -৫ আসন থেকে বার বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম।
বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক বাবু সুজিত রায় নন্দী, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম দুলাল পাটওয়ারী । সাবেক সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি নূরজাহান বেগম মুক্তা।
সভায় বক্তব্য রাখেন শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসরিন জাহান শেফালী, শাহরাস্তি পৌর সভার মেয়র হাজী আবদুল লতিফ, প্রথম অধিবেশন সমাপনী বক্তব্য রাখেন শাহরাস্তি উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক ও সভার সভাপতি মোস্তফা কামাল মজুমদার।
সভায় সভাপতিত্ব করেন, শাহরাস্তি উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তফা কামাল মজুমদার।
আতঃপর শাহরাস্তি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের জন্য দ্বিতীয় অধিবেশনের পূর্বে সম্মেলন উপলক্ষে কেন্দ্র এবং চাঁদপুর জেলা থেকে আগত অতিথিবৃন্দ কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরদের নিয়ে এক আলোচনা সভা মিলিত হন। আলোচনা সভায় কেন্দ্রের নির্দেশনা মোতাবেক আগত নের্তৃবৃন্দ সর্ব সন্মতিক্রমে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে কামরুজ্জামান মিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক পদে জেড.এম আনোয়ারকে নির্বাচন করেন। এই সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক শাহরাস্তি উপজেলা মেয়র উপস্থিত সকলের জ্ঞাতার্থে ঘোষণা করেন।
ত্রি-বার্ষিক এই সম্মেলনটির সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান মিন্টু।
এই সম্মেলনে চাঁদপুর জেলা ও শাহরাস্তি উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীগন উপস্থিত ছিলেন।