এক মুক্তিযোদ্ধার মায়ের আর্তনাদ -জাকারিয়া জাকির

সোসাল মিডিয়া, 4 January 2022, 470 বার পড়া হয়েছে,

ছোটবেলা থেকেই দুরন্ত চঞ্চল সেই ছেলেটি নাম তার হোসেন। মা তাকে খোঁজে হোসেন কই হোসেন কই? জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বলে গেল আমার হোসেন কোথায়? আসবে কি ফিরে আমার বুকে?

যেই মা পাঠিয়েছিল তার ছেলেকে দেশ রক্ষার জন্য একাত্তরে হানাদার বাহিনীদের বিরুদ্ধে লড়তে। ছিনিয়ে এনেছিল লাল সবুজের পতাকা। কিন্তু মা’র মনে প্রশ্ন ছিল কেন আমার ছেলে যুদ্ধপরবর্তী সময়ে ১৯৭৪ সালের ৪ঠা এপ্রিল রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মওসিন হলে সংঘটিত হয় এই নির্মম হত্যাকাণ্ড লাশ হয়ে ফিরে এলো মায়ের আদরের সেই হোসেন। মায়ের আর্তনাদ এই কি ছিল আমার পাওনা? খুব কাছ থেকে আমার দেখা আমৃত্যু শুধু হোসেনকে খুঁজে বেড়িয়েছেন এই মমতাময়ী পুত্রহারা মা। তার বড়ছেলের ফেসবুকে লেখাটি নিম্নে সংযুক্ত করলাম।

আজ ৩ জানুয়ারি, ষাট-সত্তোর দশকের নারী নেত্রী-সংগঠক, ভাষাসংগ্রামী, মুক্তিযাদ্ধের সংগঠক প্রগতিশীল রাজনৈতিক এডভোকেট আবদুস সামাদের স্ত্রী, বীর মুক্তিযাদ্ধা শহীদ হোসেনের মাতা, আমার মা সৈয়দা রহিমা বেগম এর ২য় মৃত্যু বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সবায় আমার মা’র জন্য দোয়া করবেন।
মায়ের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীতে মা’কে নিয়ে একটি অসমাপ্ত লেখা লিখেছিলাম, আজ সমাপ্ত করতে গিয়ে মনে পড়লো মা’র লেখা একটি আবেদনের কথা যা আজও প্রাসঙ্গিক। তাই মাকে নিয়ে নিজের কথা না লিখে মা’এর লেখাটাই শেয়ার করলাম।
যিনি তার বড় সন্তানকে হারিয়ে আমৃত্যু শোকাহত ছিলেন। মা তার অনেক পরিচয়ের মধ্যে একজন বীর মুক্তিযাদ্ধার গর্বিত মাতা হিসাবে অহংকার করতেন। দেশকে স্বাধীন করার জন্য যে ছেলেকে যুদ্ধে পাঠিয়ছিলেন স্বাধীন দেশে সেই ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাশ হিসাবে ফেরত পাঠানোর শোক আজীবন বহন করেছেন।
তাই স্বামীর সাথে সুর মিলিয়ে বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন ‘মুজিব ভাই, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে যে ছেলেটি ফিরে এলো, তাকে পাঠিয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য, তাকে লাশ করে ফেরত পাঠালেন- কি নিষ্ঠুর পুরস্কার।
মা লিখেছিলেন সন্তান হারানোর শোক লাগব পাওয়ার জন্য অধীকার বোধ থেকে,যাদের জন্য তিনি তাঁর ছেলেকে হারিয়েছেন। বাবা সেই লেখাটিকে বিশ্ববিদ্যালয় হত্যাকাণ্ডের উপর রচিত তার উল্লেখযোগ্য বই ‘ক্যাম্পস থেকে গনভবন’ এ সন্নিবেশিত করেছেন। মায়ের দাবী এখনো ফুরিয়ে যায়নি বলে লেখাটি আপনাদের সামনে নিয়ে আসলাম।