গার্মেন্ট শ্রমিক সুরক্ষায় সরকারের যত উদ্যোগ

অর্থনীতি, 10 December 2023, 162 বার পড়া হয়েছে,
নিউজ ডেস্ক : তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। দেশের জিডিপিতে এ খাতের অবদান ১০ শতাংশের বেশি। ৩২ লাখের বেশি শ্রমিক এ খাতে কাজ করেন, যাদের ৫৮ শতাংশ নারী। বাংলাদেশ সরকার শ্রমজীবী মানুষের অধিকার বাস্তবায়নে বিশেষ করে শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নির্ধারণ, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। শ্রমিকনেতা ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, যেহেতু এতোবড় একটি সেক্টরে প্রায় অর্ধকোটি শ্রমিক কাজ করে, তাদের দেখভালে সরকার ও কর্তৃপক্ষ যতটা সম্ভব সতর্ক থাকে।
বেতন বাড়লো ৫৬.২৫ শতাংশ:
শ্রমিকদের নতুন বেতনকাঠামোর দাবি ছিলো। তার ভিত্তিতে সম্প্রতি মূল মজুরি ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে পোশাক শ্রমিকদের জন্য সাড়ে ১২ হাজার টাকা সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ করেছে সরকার। মালিকপক্ষ শুরুতে ১০ হাজার ৪০০ টাকা প্রস্তাব দেয়। পরে ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়। মজুরি বোর্ডের বৈঠকে সেই প্রস্তাবই গৃহীত হয়। পরে শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি বলেন, এই মজুরি তারা মেনে নিয়েছেন। যদিও বেতন ঘোষণার আগেই বেশকিছু কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলনে নামতে দেখা যায়। আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারীবাহিনী বলছে, কিছু রাজনৈতিক দলের প্রত্যক্ষ মদদে পরিবেশ অশান্ত করার প্রচেষ্টা ছিলো। সেটি বিচক্ষণতার সঙ্গে সামলানো হয়েছে।

বেতন ঘোষণার পরে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মালিক ও শ্রমিক পক্ষ এবং নিরপক্ষে প্রতিনিধিদের নিয়ে দ্রুত নতুন মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। যে মজুরি আছে তার ওপর মূল মজুরি ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। আট হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা করা হয়েছে। ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টও বহাল আছে।”
আইনি সুরক্ষা ও শ্রমিক অধিকার:
১৩ মার্চ থেকে শুরু হওয়া আইএলওর চলমান অধিবেশনে বাংলাদেশের ওপর আলোচনায় বিশ্বব্যাপী শ্রমিকের জন্য নিরাপদ ও উন্নততর কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক কনভেনশনগুলোর আলোকে বিভিন্ন দেশের সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়। অধিবেশনে আইনমন্ত্রী বলেন, আইএলও-তে ২০২১ সালে সরকারের উপস্থাপিত রোডম্যাপের আলোকে সরকার বাংলাদেশ লেবার রুলস সংশোধন করেছে এবং ইপিজেড লেবার রুলস প্রণয়ন করেছে। বাংলাদেশে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে।
শ্রম অধিকার সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক চাপের মুখে শেষপর্যন্ত দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন চালুর অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় বিনিয়োগকারী দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের আপত্তি সত্ত্বেও – যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-র চাপ – সরকারের এ সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে। তবে বেশকিছু সংগঠন এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা জলি তালুকদার বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে শ্রম আইন কার্যকর করা হবে খুবই প্রশংসনীয় একটি উদ্যোগ।
এদিতে অর্থনৈতিক অঞ্চলের কারখানাগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন চালু করার সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন- বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “যদিও আইএলও এবং বায়ারদের চাপে সরকার ইজেডগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিন্তু সেখানে শ্রম আইন পুরোপুরি কার্যকর করা হবে না।
রানাপ্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়ন ও শ্রমিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের বিষয়ে সরকার শ্রম আইন সংশোধনসহ কার্যকর বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। এই ঘটনাটি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ইতিহাস বদলে দিয়েছে। এরকম ঘটনা যেনো আর না ঘটে সেজন্য নানা উদ্যোগ ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে। সরকার শ্রম আইনকে সংশোধন করে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন আইনে পরিণত করার চেষ্টা করছে; ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়াটিকে পুরোপুরি ডিজিটাইজড করা হয়েছে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। শ্রম আদালতের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ফলে শ্রম আদালতে মামলা নিষ্পত্তির হার আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।
করোনাকালে গার্মেন্টস শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা:
দেশের সবচেয়ে বড় শিল্পখাত, যে খাত থেকে শতকরা ৮০ শতাংশের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়, সেই গার্মেন্টস খাত করোনার প্রাথমিক ধাক্কার মাস দুয়েকের মাথায় সচল হয়। ৪০ লাখের বেশি মানুষ নিয়মিত কাজ করে চলেছেন হাজার চারেক গার্মেন্টস কারখানায়। অত্যন্ত শ্রমঘন এই খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো চালু হলে করোনা সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে- এরকম ধারণা প্রায় সব বিশেষজ্ঞই গোঁড়ার দিকে করেছিলেন। তাদের সেই কথাকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প। এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা অন্যান্য খাতের চেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন, এমন কোনো নজির নেই। এক একটা গার্মেন্টসে হাজার হাজার মানুষ কাজ করেন। সেসব জায়গায় করোনা সংক্রমণ ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছিলো সরকারের প্রত্যক্ষ তদারকিতে।