শেকড়ের সন্ধানে – আল-আমিন শাহীন

সোসাল মিডিয়া, 30 November 2021, 464 বার পড়া হয়েছে,
আল-আমিন শাহীন : ঐতিহ্যবাহী অন্নদা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক শ্রদ্ধেয় রশীদ স্যারের সাথে ৩৫ বছর পর কথোপকথন।  স্যার বল্লেন অন্নদা স্কুলের শিক্ষক ছিলাম তাতে সবসময়ই গর্ববোধ করি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী অন্নদা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের এ্যালামুনাই এর প্রস্তুতি চলছে। অনেকের সাথে কথা হয়। সবারই এক কথা, অন্নদার ছাত্র হিসেবে গর্বিত। এদিকে এই স্কুলের প্রাক্তন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক রশীদুল হক রশীদ স্যারের সাথে কথা হলো ৩৫ বছর পর। স্যারের মুখে একই কথা, অন্নদা স্কুলের শিক্ষক হিসেবে আমিও গর্বিত। ঢাকায় ঐ্যালামুনাই প্রস্তুতি সভা থেকে ৮৭ ব্যাচের সহপাঠি ইঞ্জিনিয়ার টিটুর ফোন। বন্ধু তোমার কাছে তো শিক্ষকদের খবর আছে, রশীদ স্যারের কোথায় জান? পরে অনুসন্ধান। শ্রদ্ধেয় শিক্ষক খুরশিদ আলম স্যারের সাথে কয়েক বছর আগে দেখা হয়েছিল, উনার কাছ থেকেই রশীদ স্যারের ফোন নম্বর নিলাম। স্কুল জীবনে রশীদ স্যারকে খুব ভয় পেতাম আজো সেই ভয়। নম্বর টিপে বুক কাঁপছে আগেরই মতো। মনে হচ্ছে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর আমার ক্লাশ টিচার রশীদ স্যার যেন সামনে। কে ? বলতেই বল্লাম, স্যার আমি আপনার  অন্নদার ছাত্র আল আমীন শাহীন। আমার ছাত্র সেই শাহীন, মুকাভিনয় শাহীন। বুঝতে বাকি রইলো না, স্যার চিনেছেন। স্যার বল্লেন জানিস কত খুশী হলাম, অনেকদিন পর আমার ছাত্র আমার খবর নিচ্ছে। কুশলাদীর পর বল্লাম, স্যার আপনার ছাত্ররা আজও আপনাকে ভুলেনি। স্যার বল্লেন জানস, যেখানে যাই সেখানেই অন্নদার কথা বলি। কারণ এই স্কুল থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি, বিশেষ করে ব্যবহার এবং বিনোদন। আমি চুপ। স্যার অনর্গল বলছেন, কত যে স্মৃতি। সব স্যারদের নাম বলছেন, স্কুলের কথা বলছেন। স্যার এক পর্যায়ে বল্লেন, আমি তোদের মেরেছি তোদের ভালর জন্য, এই কথায় আমি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়লাম, চোখ ভিজে গেল জলে, বল্লাম না স্যার আপনি খুব আদর করতেন।
রশীদ স্যার এবং খুরশিদুল ইসলাম স্যার দুজনে ভাড়া থাকতেন কান্দি পাড়ায় নাসিমা আপার (বড় হুজুর ফখরে বাঙ্গাল মাওলানা তাজুল ইসলাম রঃ- এর মেয়ে) বাসায়।  ভাগ্নে মরহুম হাসান (অন্নদা স্কুলে এসেম্বলীতে কোরআন তেলাওয়াৎপাঠ করতো) এর সাথে  আমার মেলা মেশাটা বেশী ছিল। বাসায় দুষ্টুমী করে মার খাবার ভয়ে আপার বাসায় চলে আসতাম। অভয়আরণ্যে বাঘ দেখলে যেমন হয়, একদিন তাই হলো। একবার আম্মা এসে এ বাসায় আমাকে ধরে নিয়ে বল্লেন চল , দেখি আপার বাসার সামনের একটি ঘরে ঢুকছেন, সেখানে বসা রশীদ স্যার। আম্মা বল্লেন, স্যার আমার ছেলে একটু খেয়াল রাখবেন। ব্যস হলো, এরপর থেকে স্যার এমন খেয়াল রেখেছেন, সামনের বেঞ্চিতে স্যারর সামনে বসতে হতো। চিকন বেতটা থাকতো চোখের সামনে আমার নাগালের মাঝে।
রশীদ স্যার আমার জীবনে প্রথম পুরুষ ক্লাশ টিচার,, কেননা মিশন স্কুলে পড়েছি শিক্ষকরা সবাই ছিল দিদি। এই স্যারের ক্লাশ ফাঁকির কোন সুযোগ ছিলনা। স্যার বলতেন কম, দুস্টুমির বিনিময়ে যা দরকার তা দিতেন বেশী। পরে স্যারের সাথে সম্পর্কটা একনামেই চেনার মতো হয়ে যায়। স্যারের সাথে কথা বলতে গিয়ে লজ্জা পাচ্ছিলাম অনেকদিন যে হয়ে গেছে তাই।
স্যার কিন্তু বেশ খুশী, বল্লেন ছাত্ররা খোঁজ নিলে অনেক খুশী হই। স্যার জানালেন কুমিল্লায় অন্নদা স্কুলের বেশ কয়েকজন প্রাক্তন শিক্ষক আছেন নাম বল্লেন, খুরশিদুল আলম ,গোপাল চন্দ্র ভৌমিক,অর্জুন দেবনাথ,হাবিবুর রহমান,বল্লেন ঢাকায় আছেন আহসান উল্লা স্যার, সাইদুর রহমান স্যারের ছেলে শামীম এর সাথে রশীদ স্যারের দেখা হয়েছে আমেরিকায় ইত্যাদী নানা কথা। বল্লাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেলাল স্যার সুনীল স্যার, আবু বকর স্যার আছেন, চাদঁপুরে আছেন বন্ধু টিটিুর বাবা আলী আহম্মদ স্যার। বল্লাম অবিদ হোসেন স্যার, ইসমাইল স্যার ইয়াকুব আলী স্যার এবং আবদুল হক স্যার গত কয়েক বছরে ইন্তেকাল করেছেন। স্যার নীরব কিছুক্ষণ। এক পর্যায়ে স্যার আমার পরিবারের কথা জানতে চাইলেন, বিয়ের খবর, বল্লাম স্যার প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক আবদুল হক স্যারের ফুফাত ভাইয়ের মেয়ে বিয়ে করেছি, স্যার হেসে উঠলেন বল্লেন, তাহলে তুই তো জামাই। হাসলাম। শেষে বল্লাম স্যার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসবেন । বল্লেন জীবনের শেষ প্রান্তে ছাত্রদের স্মৃতিই বেশী। যে দিন ডাকবি সেদিনই আসবো। বল্লাম দোয়া করবেন স্যার। উত্তর -তোরা আমার সন্তানের মতোই, তোদের জন্য দোয়া সব সময়।