অপরদিকে অভিযুক্তরা হলেন, উত্তর মৌড়াইল এলাকার মৃত এনামুল হক ভূইয়ার স্ত্রী শাহিনুর বেগম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের আওতাভুক্ত সাবেক দলিল লেখক সুমন খন্দকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের সাবেক সাব-রেজিস্ট্রার শাহ আলম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের মূল দলিল সংরক্ষণকারী ব্যক্তি।
এই বিষয়ে নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে হাসন মাহমুদ গত ০৮ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় একটি জিডি করেছেন।
এছাড়াও অভিযুক্তরা প্রতারণা করে নামজারি ও খারিজ খতিয়ান যেন পেতে না পারেন সেই জন্য গত ৭ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর একটি আবেদন করেছেন হাসান মাহমুদ।
অভিযোগপত্র, সংশ্লিষ্ট জায়গা সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজগপত্র বিশ্লেষন করে ও অভিযোগকারীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৩ সালে হাসানের বাবা আলী মিয়া কাজী পাড়া মৌজার নিজের মালিকানাধীন ১০০ ভাগের ৪০ পয়েন্ট জায়গা বিক্রি করেন উত্তর মৌড়াইল এলাকার এনামুল হকের কাছে। যার দলিল নং – ৩৩৯/১৩।
কিন্তু পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মূল রিসিট সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে উত্তলন করে ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে এনামুলের স্ত্রী এনামুলকে রেজিস্ট্রি বায়না করে দেন। অথচ পরবর্তীতে একই দলিল নম্বরে (৩৩৯/১৩) আলী মিয়ার কাছ থেকে ৭ শতক ৪০ পয়েন্ট জায়গা কিনে নেওয়ার দলীল কিভাবে আবিষ্কার হলো এটি একটি প্রশ্ন।
পরবর্তীতে এনামুল হক তার স্ত্রী শাহিনুরের বিরুদ্ধে আদালতে একটি দেওয়ানী মামলা দায়ের করেন, এবং পরিস্থিতি তাদের পক্ষে যায়। কিন্তু সেখানে রহস্যজনক কারনে স্বামী এনামুল ওই মামলায় তার স্ত্রীকে স্ত্রী বলেননি।
অভিযোগপত্রে হাসান মাহমুদ আরো বলেন, উক্ত মামলায় আমাকে ৩ নং আসামী করা হয় যেটা আমি জানতামইনা এবং আদালতের জারীকারকের সাথে যোগসাজসে টিপসই নিয়া আমাকে নোটিশ জারী দেখানো হয়েছে।
বিষয়টি জানতে পেরে হাসান মাহমুদ ২১ নভেম্বর ২০২২ তারখে একটি ছানি মামলা ও গত ২৭ নভেম্বর ২০২২ তারিখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতে জায়গাটির উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে একটি আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে আদালত ১ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে জায়গাটির উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
দলিল আছে দুই পক্ষেরই। এই দুই পক্ষের দলিলের নম্বরও একই। এর মধ্যে হাসানের কাছে যেই দলিলের ফটোকপি আছে তাতে দেখা যাচ্ছে ২০১৩ সালে দলিল তৈরি হয়েছে, এখানে ১০০ পয়েন্টের মধ্যে ৪০ পয়েন্ট বিক্রি করা হয়েছে। অপরদিকে শাহিনুর বেগমের সেই দলিল সেটার ফটোকপিতে দেখা যায় ২০১৬ সালের তরিখ এবং জায়গার পরিমান ৭ শতক ৪০ পয়েন্ট। এই দুই দলিলের মধ্যে কোনটা সঠিক সেটি এখন দেখার বিষয়।
এবিষয়ে হাসান মাহমুদ বলেন, আমি যখন বিদেশ ছিলাম তখন জানতে পারি এনামুল হক ভূইয়ার পরিবারের লোকজন আমার বাড়ি দখল করতে চায়। তখন আমি দেশে আসি। তাদের কথাবার্তা শুনে আমি অবাক হই। আমার বাবা যেখানে তাদের কাছে কাজী পাড়া মৌজার ৪০ পয়েন্ট জায়গা বিক্রি করেছিলো এখন তারা কিভাবে উত্তর মৌড়াইল মৌজার জায়গাসহ ৭ শতক ৪০ পয়েন্ট কিনেছে । তারা সম্পূর্ণরুপে জালিয়াতি করে আমার উপর জুলুম করছে। কারন আমি আমার বাবার একমাত্র ছেলে সন্তান, আমার কোন ভাই নেই। আমার এই নিরীহ দূর্বল অবস্থাকে তারা পুজি করে আমার বাড়ি জোর করে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।
৩৩৯/১৩ নম্বর দলিলে ৪০ পয়েন্ট জায়গা বিক্রির সময় এই কাজটি সম্পাদনা করা দলিল লেখক হাজী আব্দুর রহমান মুন্সি জানান, ৮ জানুয়ারি ২০১৩ সালে হাসানের পিতা আলী মিয়া এনামুল হকের কাছে ৪০ পয়েন্ট জায়গা বিক্রি করেছেন তার স্ত্রী শাহিনুরের নামে। ওই দলিলটাকে ওঠানো হয়েছে ৭ মে ২০১৩ তারিখে। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কিছু লোকের মাধ্যমে ৪০ পয়েন্টকে ৭ শতক ৪০ পয়েন্ট বানিয়েছে এনামুল হক ভূইয়া।