অবৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধে জোর অভিযান

সারাদেশ, 26 January 2022, 279 বার পড়া হয়েছে,
অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (তিতাস) জোরালো অভিযান পরিচালনা করছে। প্রতিদিন কোনো না কোনো এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছে। অবৈধ গ্যাস ব্যবহারের দায়ে মামলা এবং জরিমানা আদায় করছে।
তিতাস সূত্রে জানা যায়, গত নভেম্বর থেকে চলতি মাসের ২২ তারিখ পর্যন্ত কোম্পানির অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নকারী টিম ৫৫টি অভিযান পরিচালনা করেছে। যার মধ্যে প্রায় ২০০টি স্পট বা এলাকা রয়েছে। এসব এলাকায় অভিযান চালিয়ে উল্লেখ সংখ্যক অবৈধ লাইন বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হয়েছে।

অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ প্রসঙ্গে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বলেন, যতক্ষণ অবৈধ গ্যাস সংযোগ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে না পারব ততক্ষণ অভিযান চলবে। তিনি বলেন, জ্বালানি বিভাগের সিদ্ধান্ত এবং আমাদের অবস্থান কঠোর। অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। শুধু অবৈধ গ্যাস সংযোগ নয় বকেয়া আদায়েও কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছে। নিয়মের বাইরে বকেয়া থাকলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বলেন, অধিকাংশ এলাকায় গ্যাস দুর্ঘটনা ঘটছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ থেকে। খুবই নিম্নমানের পাইপলাইন নিয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে গ্যাস ব্যবহার করছে। ফলে কারণে-অকারণে বিভিন্ন জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটছে। যার দায়ভার এসে পড়ছে তিতাস গ্যাসের ওপর।

গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর আওতাধীন এলাকায় গত এক যুগে শত শত কিলোমিটার অবৈধ গ্যাস লাইন পড়েছে। বিভিন্ন সময় জ্বালানি বিভাগ এবং ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি এসব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অভিযান চালালেও দৃশ্যমান সফলতা অর্জন করতে পারেনি। একদিকে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে অন্যদিকে নতুন করে আবার অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়েছে পাইপলাইনের গ্যাসের সুবিধা পেতে ইচ্ছুক সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষের পাইপলাইনের গ্যাসের সুবিধা পাওয়ার আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে সারাদেশে গ্যাস বিতরণ কোম্পানি এবং স্থানীয় প্রভাবশালীরা মিলে গড়ে তুলেছে অবৈধ গ্যাস সংযোগের সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট এতটা শক্তিশালী যে গ্যাস বিতরণ কোম্পানি এবং সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়েই যাচ্ছে। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যমতে এসব অবৈধ গ্যাস সংযোগের সঙ্গে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তা কর্মচারী ছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারদলীয় নেতাকর্মী, কোনো কোনো ক্ষেত্রে লোকাল প্রশাসনের কেউ কেউ সহযোগী।

এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মন্ত্রণালয়ে গঠিত একটি কমিটি আছে। সেই কমিটিতে মন্ত্রণালয়ের তিনজন উপসচিবকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে বিভিন্ন অভিযানে পাঠানো হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করে এসে মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। সেসব রিপোর্ট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় অধিকাংশ এলাকায় প্রভাবশালী সরকারি বেসরকারি লোকজন অবৈধভাবে গ্যাসের ব্যবহার করছে। তবে আবাসিক অবৈধ গ্যাস সংযোগ যত সহজে বিচ্ছিন্ন করা যাচ্ছে তত সহজে অবৈধ শিল্প সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যায় না। শিল্প সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে নানা তদবির ও চাপ আসে অভিযান টিমের কাছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, সত্যিকার অর্থে বিচ্ছিন্ন অভিযানে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা বা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা যাবে না। সারাদেশে এক ধরনের প্রচারের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

তিতাস গ্যাস সূত্রে জানা যায়, গত নভেম্বর থেকে চলতি মাসের ২২ তারিখ পর্যন্ত ৫৫টি অভিযান চালিয়ে ২০০টি এলাকায় বা স্পটে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এসব অভিযানের মাধ্যমে প্রায় ৬৭ কিলোমিটার এলাকার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪০ হাজার ১২৯টি বার্র্নার বা চুলা রয়েছে। বিচ্ছিন্নকৃত শিল্প সংযোগ রয়েছে ৪৪টি, বাণিজ্য সংযোগ রয়েছে ৩৪টি। ২৯টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অবৈধ গ্যাস সংযোগকারীদের ২৮ লাখ ৮০ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৫টি ক্যাপটিভ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ৫টি সিএনজির গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিতাসের এক মহাব্যবস্থাপক (জিএম) বলেন, যেহেতু অধিকাংশ জায়গায় অবৈধ গ্যাস সংযোগের সঙ্গে প্রভাবশালীরা জড়িত থাকার কারণে বিচ্ছিন্নকারী টিম গেলেই বাধার সম্মুখীন হতে হয়। ফলে এসব ক্ষেত্রে লোকাল প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা দরকার। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, দু-এক দিন আগে সোনারগাঁওয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে স্থানীয়দের হামলার শিকার হয় বিচ্ছিন্নকারী টিম। এ ঘটনায় সোনারগাঁও থানায় একটি মামলাও হয়েছে।